.jpg)
ছবি সংগৃহীত
পৃথিবীর পুরাতন সাতটি আশ্চর্য!
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৩, ০৫:৩৭
২০১১ তে বেশ হইচই করে বিশ্বের নতুন সপ্তাশ্চর্যের তালিকা তৈরি করা হলো। সেইবার বাংলাদেশও আশায় বুক বেঁধেছিল কক্সবাজার আর সুন্দরবন নিয়ে। যদিও চূড়ান্ত তালিকায় এই দুইটি স্থান আর নির্বাচিত হয়নি। সে যাক গে, নতুন তালিকায় স্থান পাওয়া সপ্তাশ্চর্য নিয়ে আমরা সবাই মোটামুটি জানি। আজ আমরা গল্প করবো সপ্তাশ্চর্যের পুরনো তালিকা নিয়ে যাদের কথা যুগ যুগ ধরে মানুষ শুনে এসেছে,এমনকি সেই তালিকার কোন কোন স্থানের বাস্তব অস্তিত্ব না থাকার পর-ও। ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস এবং জ্ঞানী ক্যালিম্যাকোস আলেক্সান্দ্রিয়ার জাদুঘরে বসে এই তালিকা তৈরি করেন বলে বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়,কিন্তু তাদের তৈরি করা মূল তালিকার পান্ডুলিপির কোন নিদর্শন এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদের তৈরি করা তালিকাতে স্থান লাভ করেছিল- গিজার গ্রেট পিরামিড, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান,অলিম্পিয়ার গ্রীক দেব-রাজ জিউসের মূর্তি,এফিসিউসে আর্টেমিস-এর মন্দির,হ্যালিকার্নেসাস এর সমাধি, রোডস এর কলোসাস এবং আলেক্সান্দ্রিয়ার বাতিঘর। এই তালিকার মধ্যে গিজার পিরামিডই শুধু এখন পর্যন্ত টিকে আছে।

১) ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান
প্রাচীন সপ্তাশ্চর্য তালিকার অন্তর্গত এই পৌরাণিক উদ্যানের প্রকৃত অবস্থান আজ পর্যন্ত নির্ণয় করা যায় নি। বলা হয়ে থাকে এটি ইরাকের ব্যাবিলন শহরে(বর্তমানের হিল্লাহ শহরের নিকটে,ব্যাবিল প্রদেশের অন্তর্গত) অবস্থিত ছিল। ২৯০ খ্রিস্টপূর্বে ব্যাবিলনের একজন পুরোহিত বেরুসাসের লেখা থেকে জোসেফাস নামের এক ব্যক্তি জানান,নিও-ব্যবিলনীয় রাজা নেবুচাঁদনেজার তাঁর রাজত্বকালে (৬০৫-৫৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি করেন। দূর্ভাগ্যক্রমে, এই বক্তব্যের সপক্ষে কোন ব্যবিলনীয় প্রামাণ্য দলিল নেই এবং ব্যাবিলনের কাছে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই উদ্যানের কোন চিহ্ন বা ধ্বংসাবশেষ আজো খুঁজে পাননি। পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে ধরে নেয়া হয়,ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের ব্যপারটি আসলে নেহাতই কিংবদন্তী,আর কিছু নয়।২) আর্টেমিস এর মন্দির
এই মন্দির তৈরি হয় গ্রীক দেবতা আর্টেমিস এর উপাসনার জন্য। এর অবস্থান ছিল এফিসিউস-এ,বর্তমানে তুরস্কের সেলজুক শহরের কাছেই। ৪০১ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মন্দিরটি বিভিন্ন সময়ে পর পর তিনবার পুনঃনির্মীত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে,এই পবিত্র মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় ব্রোঞ্জ যুগে। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে এক ভয়াবহ বন্যায় এটি পুরোপুরিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্রিটান স্থপতি চেরসিফ্রন ও তাঁর ছেলে মেটাজেনেস এর তত্ত্বাবধানে এই মন্দির পুনঃনির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়,যা শেষ হতে দীর্ঘ দশ বছর কেটে যায়। মাঝে মন্দিরটি হেরোস্ট্রাটুস দ্বারা আক্রান্ত হয়,আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় পুরো মন্দিরে। পরবর্তীতে এটি আবার নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মন্দিরটির খুব বেশি কিছু পাওয়া যায় না। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে গবেষকরা খুঁজে বেড়িয়েছেন এই মন্দিরটির অবস্থান। অবশেষে ১৮৬৯ সালে জন টার্টল ঊড ও তাঁর অনুসন্ধানী দল মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। মন্দিরের ঐ এলাকা থেকে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
৩) অলিম্পিয়ার গ্রিক দেবতা জিউস এর মূর্তি
গ্রীক দেবাধিরাজ জিউসের মূর্তিটি ছিল প্রায় ৪২ ফুটের মতো লম্বা। ৪৩০-৪২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি তৈরি করেন গ্রিক স্থপতি ফিডিয়াস। এটিকে গ্রিসের অলিম্পিয়ার এক পবিত্র স্থানে স্থাপন করা হয়, পরে যাকে কেন্দ্র করে নির্মীত হয় জিউসের মন্দির। সোনা,অন্যান্য মূল্যবান পাথর এবং হাতির দাঁতে তৈরি মূর্তিটি একটি কাঠের কাঠামোর উপর ছিল বলে কথিত আছে। কিন্তু কালক্রমে পঞ্চম শতাব্দীতে এসে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। মূর্তিটির আর কোন প্রতিরূপ খুঁজে পাওয়া যায় নি এবং এর বর্ণনা শুধু প্রাচীণ গ্রিক পান্ডুলিপি এবং ধাতব মুদ্রায় পাওয়া যায়।৪) আলেক্সান্দ্রিয়ার বাতিঘর
এটিকে অনেক সময় আলেক্সান্দ্রিয়ার “আলোক গৃহ” নামেও বলা হতো,যা নির্মীত হয় টলেমাইক রাজবংশের রাজত্বকালে(খ্রিস্টপূর্ব ২৮০-২৪৭), মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে কিছু দূরে সমুদ্রোপকূলের নিকটবর্তী দ্বীপ ফ্যারোস-এ। এই বাতিঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল নাবিকদেরকে সমুদ্র বন্দরের ভেতরে দিক-নির্দেশনা দেয়া। ৩৯০ হতে ৪৫০ ফুট উচ্চতার এই বাতিঘর বহু শতাব্দী ধরে মানুষের নির্মীত সর্বোচ্চ স্থাপনা হিসেবে পৃথিবীর বুকে সগর্বে দাঁড়িয়ে ছিল। ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝে সঙ্ঘটিত তিন তিনটি ভূমিকম্প দ্বারা বাতিঘরটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৪৮০ সালে কুইটবে শহরের নগরদূর্গ বানানোর কাজে এই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষের পাথরগুলো ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৪ সালে একদল ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক আলেক্সান্দ্রিয়া পূর্বাঞ্চলীয় পোতাশ্রয়ে এই বাতিঘরের কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।৫) কলোসাস অব রোডস বা রোডস দ্বীপের বিশাল মূর্তি
এই মূর্তিটি নির্মাণ করা হয় মহান গ্রীক টাইটান যোদ্ধা হেলিওস এর সম্মানে। চ্যারেস অব লিনডন গ্রিসের রোডস শহরের উপকূলে রোডস দ্বীপে ২৯২-১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মূর্তিটি নির্মাণ করেন রোডস দ্বীপ দখলে সাইপ্রাস রাজ এন্টিগনাস-I মনোপথনাসের ছেলের পরাজিত হবার ঘটনাকে দ্বীপবাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এই যুদ্ধটি ৩০৫ খ্রিস্টপূর্বে সংঘটিত হয়। ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত ৪৩ মিটার উচ্চতার এই মূর্তিটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মূর্তিগুলোর একটি ছিল।৬)হ্যালিকার্নাসাস-এর সমাধি স্তম্ভ
এই সমাধি স্তম্ভ নির্মীত হয় ৩৫৩-৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য সাম্রাজ্যের একজন প্রাদেশিক শাসনকর্তা মৌজুলাস ও তার স্ত্রী আর্টেমিসিয়া। অব ক্যারিয়ার স্মরণে।এর নকশা করেন গ্রিক স্থপতি সাইরটস এবং পিথিয়াস অব প্রিন। সমাধিটি ছিল ৪৫ মিটার উঁচু এবং এর চার প্রান্ত যথাক্রমে চারজন গ্রিক স্থপতি নির্মাণ করেন- লিওক্যারিস, ব্রিএক্সিস ,স্কপাস অব প্যারোস এবং টিমোথিউস। এটার নান্দনিক সৌন্দর্য সবাইকে এতোটাই মুগ্ধ করে যে তা প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য তালিকায় স্থান লাভ করে। বর্তমানে এর কিছু ধ্বংসাবশেষ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
৭) গিজার গ্রেট পিরামিড
প্রাচীণ সপ্তাশ্চর্যের মাঝে সবচেয়ে প্রাচীণ এই স্থাপনাটিই এখনো অক্ষত অবস্থায় সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে মিশরের “এল গিজা” তে। মিশরের প্রাচীন ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাচীণ মিসরের চতুর্থ ফেরাউন বা ফারাও রাজবংশের রাজাধিরাজ খুফুর সমাধি এটি, যা নির্মীত হয় ২৫৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ১৪৬ দশমিক ৫ মিটারের এই সমাধি স্তম্ভ ৩৮০০ বছরেরো বেশি সময় ধরে মনুষ্য-নির্মীত সর্বোচ্চ স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। বর্তমানকালে এটি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় এক স্থান।- ট্যাগ:
- লাইফ