পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একসময়কার পুরান জমিদারবাড়িটি সবাই এক নামে চেনে, তা হল বিউটি বোর্ডিং। এটি পুরান ঢাকার শ্রীস দাস লেনে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেল। আরও একটু সহজভাবে চেনানোর জন্য বলা যায়, নবাবপুর পার হয়ে, বাহাদুর শাহ পার্ক পার হয়েই বাংলাবাজার। সেখান থেকে একটু এগিয়ে বাঁয়ে মোড় নিলেই পরবে প্যারিদাস রোড। এই প্যারিদাস রোডের পাশেই শ্রীস দাস লেন, এই লেনের ১ নম্বর বাড়িটি হল বিউটি বর্ডিং।
বিউটি বোর্ডিং হওয়ার ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার পরিবারটি চলে যায় ভারত। তখন এই জায়গায় একটি ছাপাখানা গড়ে ওঠে। এই ছাপাখানা থেকেই বের হতো সোনার বাংলা নামের একটি পত্রিকা। দেশ বিভাগের পর এই বাংলাবাজার এলাকাটি মুদ্রণ ও প্রকাশনশিল্পের জন্য বেশ নাম করে। তখন থেকেই এই বিউটি বোর্ডিংটি কবি, শিল্প-সাহিত্যিকদের প্রাণকেন্দ্র বা আড্ডার স্থল হয়ে দাঁড়ায়। শুরুর দিকে দুই থেকে তিন টাকায় এখানে থাকা যেত, আর এক টাকায় ঘরোয়া পরিবেশে চলত খাওয়াদাওয়া। সোনার বাংলা পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় চলে গেলে পত্রিকার মালিক সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে তখন জায়গাটি কিনে নেন দুই ভাই প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী কান্ত সাহা। তারপর এই পত্রিকা অফিসের জায়গায় শুরু করেন আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরার ব্যবসা।

এখনকার বিউটি বোর্ডিং
বিউটি বোর্ডিং এর প্রতিষ্ঠাতা প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। এখন এর দায়িত্বে আছেন তারই দুই ছেলে। বিউটি বোর্ডিং এর বাইরে বেশ বড় একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো আর ভিতরে ঢুকলেই চোখে পরবে মনোমুগ্ধকর বাগান। বেশ খোলামেলা জায়গায় চমৎকার ফুলবাগান। এর ডানদিকে অফিসঘর আর বাঁদিকে বিউটি বোর্ডিং এর খাবারঘর। একটু ভিতরে বিশাল রুসুইঘরটি দেখার মতো। আর এর ভিতরেই বাম দিক দিয়ে যেয়ে নিচে-উপরে থাকার জায়গা। ছোট একটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলে একসারিতে ছোট ছোট ঘরেই থাকার ঘর। একটু বামদিকেই আছে এক চিলতে ছাঁদের মতো জায়গা। ছোট একটা কবুতরের খুপরিও আছে সেখানে।
হোটেল ভাড়া ও খাবার ব্যবস্থা
প্রায় নয় কাঠা জায়গার উপর বিউটি বোর্ডিংটি। এখানে ভাড়া সিঙ্গেল রুমের জন্য ২০০ টাকা আর ডাবল হলে ৩০০ টাকা। কর্মক্লান্ত লোকেরা বা দূর থেকে আসা পথিক বিশ্রাম নেয় এখানে।
দুপুর হলেই ভোজনরসিকদের আনাগনা শুরু হতে থাকে। এখানে খাবার উপায়টিও চমৎকার ও ভিন্ন। গোল স্টিলের থালা ও স্টিলের গ্লাস দেয়া হবে আপনাকে। স্টিলের প্লেটে প্রথমেই দিবে সাদা ভাত, একটু লবণ আর লেবু-কাচামরিচ। তারপর আপনার পছন্দমত খাবার বেছে নিবেন। এখানে পাবেন দেশি রুই মাছের বড় পেটি, সর্ষে ইলিশ, পুঁটি, পাবদা, বোয়াল মাছ, চাপিলা মাছ, বাটা মাছ, খল্লা মাছসহ আরও নানা জাতের মাছ। এছাড়া লালশাক খুব ভালো রান্না করে এখানে, আর ডাল না খেলে মিস করবেন। চাইলে মুরগীর কারিও খেতে পারেন। তবে দেশি স্বাদের মাছই এখানে প্রথম পছন্দ।
বন্ধু বান্ধবের সাথে লেকে, পার্কে, মিউজিয়ামে, থিয়েটারে তো কমবেশি সবসময়ই ঘোরা হয়। এরকম ভিন্নধর্মী একটি পরিবেশে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরেই আসুন না। দুপুরে জম্পেশ খাওয়া আর বিকেলের আড্ডাটা যখন জমে উঠবে তখন মনে মনে সবাই একটা কথাই বলবেন, আবার আসতে হবে এখানে!
ছবি সৌজন্যতা- Our dhaka city