ছবি সংগৃহীত

নান্দনিক সিল্ক

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৩, ০৬:১৮
আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৩, ০৬:১৮

সিল্কের পোশাকে থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া। নানান রং ও ডিজাইনের সমাহারে সিল্ক হয়ে ওঠে আরো আকর্ষণীয়। পার্টির পোশাক হিসেবে সিল্কের জুড়ি নেই, সেটা শীতে হোক বা গরমে! তাই যেকোনো উৎসবে সিল্কের পোশাক থাকে সবার প্রথম পছন্দ। এই সুন্দর সিল্ক কাপড় তৈরি হয় এক ধরনের ঘিনঘিনে পোকার লালা থেকে! রেশম মথ নামের এক ধরনের মথের শুককীট ও মূককীটের লালা থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় রেশম সুতা এবং এই সুতা থেকেই তৈরি হয় রেশমী বা সিল্ক কাপড়। রেশম পোকার ইংরেজি নাম সিল্ক ওয়ার্ম। বিভিন্ন প্রজাতির রেশম পোকা বিভিন্ন মানের রেশম সুতা উত্‍পন্ন করে। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২০০০ বছর আগে চীন দেশে সর্বপ্রথম রেশম সুতা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। এরপর প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত চীনারা একচেটিয়া ভাবে রেশমী সুতা ও কাপড় তৈরি করত। খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর পর ইউরোপে রেশম চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ উন্নতমানের রেশম সুতা ও রেশম পোকার চাষ করে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই! উন্নতমানের রেশম উত্‍পাদনের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের রাজশাহী সিল্কসিটি নামে পরিচিত। বগুড়ার ধুনটেও রয়েছে রেশমের চাষকেন্দ্র। এখানে তৈরি রেশমী কাপড় ও শাড়ি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। একটা সময় সিল্ক ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগালের বাইরে। কিন্তু বর্তমানে বেশ কিছু সিল্ক মিল ও ফ্যাশন হাউস সিল্ককে নিয়ে এসেছে সাধ্যের মধ্যে। শাড়ি ও গজ কাপড়ের পাশাপাশি সিল্কের পাঞ্জাবী, শার্ট, ফতুয়া, ওড়না, সালোয়ার-কামিজ, মেয়েদের ফতুয়ারও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। আগে শুধু একরঙা ও প্রিন্টের সিল্ক প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন সিল্কের কাপড়ে করা হয় ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্প্রে, অ্যামব্রোডারি, কারচুপি, কাটওয়ার্ক, প্যাচওয়ার্কসহ বিভিন্ন ভারী কাজ। সুতা ও রঙের পাশাপাশি পুঁতি, ধাতুর পাত, চুমকি, পাথর ও কুন্দনও ব্যবহার করা সিল্কের নান্দনিকতা বাড়াতে। কখন কেমন সিল্কের পোশাক আপনাকে যেকোনো অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। সিল্কের কাপড় পাওয়া যায় ৯০ টি আলাদা আলাদা রঙে। সেখান থেকে বেছে নিন আপনার পছন্দসই রং। রাতের অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিন গাঢ় রং ও ভারী কাজের পোশাক। যেমন - নীল, বেগুনী, ম্যাজেন্টা, কালো, সবুজ, খয়েরী, মেরুন, পীত রং ইত্যাদি। দিনের জন্য বেছে নিতে পারেন সাদা, ঘিয়াসহ যেকোনো হালকা রং। আর সাথে মানানসই গয়না ও মেকআপ তো থাকবেই! কোথায় পাবেন সিল্কের শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাবেন সপুরা সিল্ক, দোয়েল সিল্ক ও ঊষা সিল্কের শোরুমগুলোতে। আড়ং-এ রয়েছে সিল্কের শাড়ি ও পোশাকের বিশাল সমাহার। এছাড়া বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোতেও পাবেন সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, শার্ট, থ্রিপিস ইত্যাদি। গজ কাপড় কিনে নিজের মনের মতো করে বানিয়েও ফেলতে পারেন নানান পোশাক। সেক্ষেত্রে একটু লুজ ফিটিং বানাবেন। নয়তো পোশাক ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। গজ কাপড় পাবেন নিউ মার্কেট, চাঁদনীচক, গাউসিয়া, ইসলামপুর মার্কেটে। দোয়েল সিল্ক, সপুরা সিল্ক ও ঊষা সিল্কের শোরুমেও পাবেন গজ কাপড়ের বিশাল সমাহার। দামদর রাজশাহী সিল্কের শাড়ি ২০০০-৫০০০ টাকা, ধুপিয়ান সিল্কের শাড়ি ৪০০০-১৫০০০ টাকা, এন্ডি সিল্কের শাড়ি ৩০০০-১২০০০ টাকা, বলাকা সিল্কের শাড়ি ৩৫০০-৭০০০ টাকা, তসর সিল্কের শাড়ি ৩০০০-১৫০০০ টাকা, সফট সিল্কের শাড়ি ১৫০০-৫০০০ টাকা, কাতানের দাম শুরু হয় ৩৫০০ টাকা থেকে, বিভিন্ন মসলিনের শাড়ি পাবেন ২৫০০-৩০০০০ টাকার মধ্যে। রাজশাহী সিল্কের পাঞ্জাবী ১৫০০-৮০০০ টাকা, ধুপিয়ান সিল্কের পাঞ্জাবী ২০০০-৭০০০ টাকা, এন্ডি সিল্কের পাঞ্জাবী ১৫০০-১০০০০ টাকা। শার্ট পাবেন ১২০০-৫০০০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের সিল্কের সালোয়ার কামিজ পাবেন ৩০০০-২০০০০ টাকায়। সিল্কের স্কার্ফ ৩০০-৭০০ টাকা এবং ওড়না ৪৫০-২৫০০ টাকা। গজ কাপড়ের দাম টাকা। গজ কাপড়ের দাম ১৫০-৮০০ টাকা। সিল্কের যত্ন-আত্তি সিল্কের কাপড় যেমন অনন্য, তেমনি এর বিশেষ যত্নেরও প্রয়োজন হয়। যত্নে রাখলে সিল্ক টেকে বহুদিন। সিল্কের পোশাকের যত্নে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন - *ড্রাইক্লিন করুন। পানিতে ধুলে ক্লোরিনের প্রভাবে রং ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। *বাসায় ধুতে হলে সাবানের পরিবর্তে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। *কড়া রোদে শুকাবেন না। *প্লাস্টিকের ব্যাগে সিল্কের পোশাক সংরক্ষণ করবেন না। পোশাকে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। *ভারী কাজ করা সিল্কের শাড়ি হ্যাঙ্গারে না ঝুলিয়ে সোজা করে ভাঁজ করে রাখুন। *সিল্কের কাপড়ে ন্যাপথলিন বল রাখবেন না, গন্ধ বসে যেতে পারে। লবঙ্গ ও দারুচিনি ব্যবহার করুন, পোকা আসবে না এবং দুর্গন্ধও হবে না। *বছরে অন্তত দু বার সিল্কের পোশাক খোলা হাওয়ায় মেলে রাখুন।