ছবি সংগৃহীত

জেনে নিন ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার ৭টি ইতিবাচক দিক

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৪, ০৩:৫৬
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪, ০৩:৫৬

(প্রিয়.কম) আজকালকার যুগে হাতে ডায়েরি লেখাকে অনেকেই সময় নষ্ট বলে বিবেচনা করেন। যেখানে ফেসবুকে নোটস রয়েছে, মোবাইলে রিমাইন্ডার আছে, সেখানে আলাদা একটা কাগুজে ডায়েরি রাখাকে অর্থহীন বলে মনে হতেই পারে। ডায়েরি ডিজিটালও হতে পারে! অনলাইনে লিখতে পারেন আপনার ব্যক্তিগত ডায়েরি। অথবা আপনার কম্পিউটারের কোনো এক ফোল্ডারে লুকিয়ে রাখতে পারেন আপনার ব্যক্তিগত দিনলিপি। প্রযুক্তি যখন এত সুবিধাই দিচ্ছে তাহলে আর হাতে কেন ডায়েরি লেখা! আপনার যেটাই মনে হোক না কেন জেনে রাখুন, কাগজে-কলমে টুকটুক করে লেখা ডায়েরি কিন্তু আপনার জন্য আশির্বাদ হিসেবেই প্রমাণিত হবে! কারণ যখন আপনি গোপন ডায়েরিটাতে চুপি চুপি আপনার কথা লিখবেন, আলমারিতে কাপড়ের নিচে অথবা ড্রয়ারের কোণে ডায়েরিটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু হবে আপনার নিজেই নিজেকে খানিকটা সময় দেওয়া! যা সময়ের অভাবে আমরা নিজেদের দিতে পারি না। আর কিছু না হোক, নিজের সাথে সময় কাটানোর জন্যই নাহয় ডায়েরি লিখুন! আর তাছাড়া ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার কিন্তু আরো অনেক ভালো দিক রয়েছে!

১)মানসিক চাপ কমে

সব কথা সবাইকে বলা যায় না। আবার কিছু কিছু কথা কাউকে না বলেও থাকা যায় না। কিন্তু সবাইকে কি আর ভরসা করা যায়? আপনার সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ব্যক্তি আপনি নিজেই! ডায়েরি লেখা মানে নিজের কাছে নিজের স্বীকারোক্তি, নিজের সাথে নিজে কথা বলা। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে মানসিক চাপ তাই অনেকাংশেই কমে যায়। মনের চাপা উদ্বেগ নিজের জন্য লিখে ফেলা কথাগুলোতেই বন্দি হয়ে থাকে।

২)স্মরণশক্তি বাড়ে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে, আমরা তত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছি। আগে যখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না তখন কিন্তু খুব সহজেই আমরা অনেকগুলো ফোন নম্বর মনে রাখতে পারতাম। কিন্তু মোবাইল ফোন সহজলভ্য হবার পর এবং তাতে ফোন নম্বর সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ থাকায় আমাদের ফোন নম্বর মনের রাখার অভ্যাসটি চলে গেছে। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে জরুরি বিষয়গুলো ভুলে যাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। ছোটবেলায় পড়ার পর লিখলে তা সহজেই মনে থাকত। একই ব্যাপার ঘটে ডায়েরি লিখলেও। এতে সারাদিনের বিশেষ ঘটনাবলি মস্তিষ্ক মনে রাখে এবং ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি বাড়তে থাকে।

৩)হাতের লেখা ভালো হয়

অনেকেরই হাতের লেখা ভীষণ সুন্দর থাকে। কিন্তু ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেলে হাতে লেখার অভ্যাস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন লেখালেখি সীমাবদ্ধ থাকে কম্পিউটার আর মোবাইলের এসএমএস-এর মধ্যেই। হাতে বলতে লিখতেই হয় না। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে কাগজে-কলমে লেখার অভ্যাস বজায় থাকে এবং হাতের লেখা ভালো হয়।

৪)মন হালকা হয়

প্রত্যেকেরই মনের মাঝে কিছু গোপন যন্ত্রণা থাকে যা মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। এই যন্ত্রণার কথাগুলো কাউকে বলাও যায় না। ডায়েরি হতে পারে আপনার সেই বন্ধু যাকে আপনি আপনার মনের কথা খুলতে বলতে পারবেন। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে মনের কথাগুলো বেরিয়েও আসে আবার তা অন্য কেউ জানতেও পারে না। ফলে মন হালকা হয়।

৫)ভুল শোধরানো যায়

কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেকটা মানুষই জীবনে কোনো না কোনো ভুল করে থাকে। নিজের কর্মকান্ড নিয়মিত ডায়েরিতে লিখে রাখলে নিজের ভুলগুলোতে আলোকপাত করা যায়। সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা যায়। যে ভুলগুলো শোধরানো সম্ভব সেগুলো শুধরে নেওয়া যায়। ভবিষ্যতে যেন একই ভুল আর না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকা যায়।

৬)আত্মশুদ্ধির সুযোগ থাকে

নিয়মিত ডায়েরি লেখা মানে নিজেকে আত্মশুদ্ধির সুযোগ দেওয়া। নিজের ইতিবাচক, নেতিবাচক দিকগুলো, নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ডায়েরিতে লিখে রাখা অতীত কর্মকান্ড থেকে নিখুঁতভাবে বোঝা যায়। নিজেকে জানা, নিজেকে বোঝা, নিজের আত্মশুদ্ধিতে আপনার লেখা পুরনো ডায়েরিগুলো অনেক সহায়তা করবে।

৭)জীবন সুসংগঠিত হয়

ডায়েরিতে যদি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম নিয়মিত লিপিবদ্ধ করেন অর্থাত্‍ কী করেছেন, কী করতে চান - এসব লিখলে জীবন অনেকখানিই গুছিয়ে আসে। নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ এবং তার ফলাফল যদি ডায়েরিতে লেখা থাকে, তাহলে পরবর্তী কাজগুলোতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। জীবন হয়ে ওঠে সুসংগঠিত।