ছবি সংগৃহীত

চোখের আড়ালেই হচ্ছে ভয়ানক এসিড বৃষ্টি

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১১:৩৭
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১১:৩৭

বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া রাজধানীতে মানুষের মনে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিদ্যালয়ে অথবা কার্যালয়ে যাবার পথে দুর্ভোগ পোহানো মানুষ শাপশাপান্ত করছেন বৃষ্টিকে। আবার যারা একটু আবেগপ্রবণ তাদেরই আবার বৃষ্টিতে মনটা ভালো হয়ে গেছে। এই ঝামেলার বা পক্ষান্তরে ভালো লাগার বৃষ্টির কিন্তু রয়েছে আরেকটি দিক। আর তা হলো এসিড বৃষ্টি। সবপ্রথম ১৮৫৩ সালে এসিড বৃষ্টির ব্যাপারে জানা গেলেও মানুষ সচেতন হওয়া শুরু করে আরও পরে। পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি কড়া এই এসিড বৃষ্টি এখনও অব্যাহত আছে কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সাম্প্রতিক বিশ্বে দুশ্চিন্তা অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এসিড বৃষ্টির ওপর থেকে সরে গেছে আমাদের মনোযোগ।

এসিড বৃষ্টির সাথে সাধারণ বৃষ্টির দৃশ্যত কোনও পার্থক্য নেই। আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সাথে সাথেই আগুন ধরে না বা চামড়া ফুটো হয়ে যায় না। পার্থক্যটা হলো এর উপাদানে। সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড এবং কার্বনিক এসিড উপস্থিত থাকতে পারে এসিড বৃষ্টিতে। পানি এবং অন্যান্য পদার্থের নিরপেক্ষতার পরিমাণ মাপা হয় pH স্কেলে। বিশুদ্ধ পানির pH হল ৭ অর্থাৎ এতে নেই অম্ল অথবা ক্ষারের কোনটিই। pH ৭ এর থেকে বেশি হলে সেই পানি হয়ে যায় ক্ষারীয় এবং কম হলে তা হয় অম্লীয়। সাধারণ বৃষ্টিতেও এর মাত্রা ৭ এর কমই থাকে কারণ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন ধূলিকণা, গ্যাস ইত্যাদি এতে মিশে যায়। কিন্তু এসিড বৃষ্টির pH হল ৩ থেকে ৪ এর মধ্যে যেটা বেশ অম্লীয়। এর চাইতে বেশি অম্লীয় হলে অর্থাৎ pH যদি ১-২ এ নেমে যায় তবে তা হবে গাড়ির ব্যাটারিতে থাকা ভয়ংকর শক্তিশালী ও ক্ষতিকারক এসিডের সমতুল্য! এসিড বৃষ্টির রয়েছে মূলত দুটি কারণ। একটি হল প্রাকৃতিক এবং আরেকটি হল মানবসৃষ্ট দূষণ। মূলত সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের জন্য এসিড বৃষ্টি হয়। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ালে এবং বিভিন্ন কারখানার ধোঁয়া থেকে আসতে পারে সালফার ডাই অক্সাইড। আবার দাবানল এবং অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও বাতাসে এর পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে ইদানিং বিভিন্ন কারখানা এবং যানবাহন থেকে সালফার গ্যাস নিঃসরণের মাত্রার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণে এর পরিমাণ কমে আসছে এবং এর স্থান দখল করে নিচ্ছে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে তৈরি করে নাইট্রিক অক্সাইড। বজ্রপাতের ফলেও এর উৎপত্তি হতে পারে। বৃষ্টির পানিতে সবসময়েই কিছু পরিমাণ নাইট্রিক এসিড থেকে থাকে। উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে এই নাইট্রিক এসিড এর প্রক্রিয়াজাত রূপ কাজে লাগে। আদিম যুগের হিমবাহেও খুঁজে পাওয়া গেছে নাইট্রিক এসিডের চিহ্ন। কিন্তু যখন কলকারখানা এবং যানবাহনের মাধ্যমে বায়ুদূষণের ফলে এর পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখনই সৃষ্টি হয় এসিড বৃষ্টি।
এসিড বৃষ্টি পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতি করার পাশাপাশি তৈরি করে মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এর ক্ষয়কারী বৈশিষ্ট্যের জন্য ক্ষতি করে বিভিন্ন স্থাপনার। এসিড বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জলাশয়ে বেড়ে যায় এসিডের পরিমাণ। এতে হুমকির মুখে পড়ে মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবন। পানিতে অম্লতা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্য কমে যেতে শুরু করে। সমুদ্রে অম্লতা বৃদ্ধি হলে ক্ষারীয় পদার্থে তৈরি প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসিড বৃষ্টির ফলে মাটির অম্লতা বেড়ে গিয়ে মাটির কাঠামো এবং গঠন হতে পারে ক্ষতিগ্রস্ত। মাটিতে অবস্থিত প্রাণীরাও এতে প্রভাবিত হয়। মাটি থেকে প্রয়োজনীয় অনেক খনিজ হারিয়ে যায় এবং তৈরি হয় বিষাক্ত যৌগ, ফলে গাছেরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। অনেক সময় গাছেরা সরাসরি প্রভাবিত হয় এবং এসিডের প্রভাবে পুড়ে যেতে পারে। এসিড বৃষ্টির ফলে মানুষের স্বাস্থ্য সরাসরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে চর্মরোগ এবং শ্বাসনালীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এই এসিডগুলো। জীবজগতের ক্ষতি করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি করতে পারে এসিড বৃষ্টি। বিশেষত চুনাপাথর এবং মার্বেলে তৈরি ভবন এবং ভাস্কর্য এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লোহা, স্টিল, তামা এবং ব্রোঞ্জের তৈরি স্থাপনাও মরচে পড়ে ক্ষয় হতে পারে এসব এসিডের প্রভাবে।