ছবি সংগৃহীত

গৃহিণীর বারান্দায় "রাতের রানী"

Nusrat Sharmin Liza
লেখক
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৩, ১৪:৪৬
আপডেট: ২২ আগস্ট ২০১৩, ১৪:৪৬

নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম হলো সেলেনিসোরাস গ্র্যান্ডিফ্লোরাস। এটি ক্যাকটাস পরিবারের সদস্য। মরুভূমির উদ্ভিদ হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। রাত গভীর হলে রাতের রানী নাইট কুইন ফুল আসে তার রূপ সৌন্দর্যের পসার সাজিয়ে। রাত যত গভীর হয় ফুলের সৌন্দর্য ও ঘ্রাণ ততো বাড়তে থাকে। রাত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ফুলের আয়ু ক্রমশ কমতে থাকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই চলে যায় নাইট কুইন। নাইট কুইন ফুলের বৈশিষ্ট্যঃ

  • এটি গ্রীষ্মকালীন ফুল।
  • সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিকে ফোটে।
  • ফুলটির রঙ সাদা।
  • ফুলটিতে মিষ্টি ঘ্রাণ আছে।
  • ফানেল আকৃতির ফুলটির ব্যাস প্রায় ৫-৭ ইঞ্চি হয়।
  • একটি গাছে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ টি ফুল ফুটতে পারে।
নাইট কুইন মিথঃ নাইট কুইন ফুল নিয়ে পৃথিবীজুড়ে বহু কাহিনী ছড়িয়ে আছে। সবচেয়ে প্রচলিত যে কাহিনীটি তা ঘটেছিল প্রায় দুই হাজার বছর আগে বেথেলহ্যাম নগরীতে। তখন নগরীর সব বাড়িতেই নাইট কুইন গাছ ছিল। এক রাতে ঘটল আশ্চর্যজনক ভাবে প্রতিটি বাড়ি নাইট কুইন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল। এ ঘটনায় কৌতূহলী নগরবাসী এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ছুটে দেখতে লাগল ফুল ফুটেছে কিনা। প্রকৃতির এমন আজব খেয়ালের কারণ তারা কেউই বুঝে উঠতে পারল না। পরে একসময় অবশ্য সবাই আসল ঘটনা বুঝতে পেরেছিল। সেই রাতে বেথেলহ্যামের ঘোড়ার আস্তাবলে জন্ম হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের। বেথেলহ্যামের সব নাইট কুইন সে রাতে যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসবে মেতে উঠেছিল। তাই এখনো অনেকের কাছে এ ফুলটি 'বেথেলহ্যাম ফ্লাওয়ার' নামে পরিচিত। ফুলের চাষঃ নাইট কুইনের বংশ বিস্তারের জন্য সাধারণত কাটিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ঘরের বারান্দায় বা ছাদে টবে এ ফুলটি চাষ করা যায়। প্রতি বছর মার্চের শুরুতে অর্ধেক মাটি, অর্ধেক গোবর সার, টিএসপি ও ইউরিয়া সার দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি প্রস্তুত করতে হয়। তারপর সারা বছরই গাছের পরিচর্যা করতে হয়। নাইট কুইন ফোটাবার গল্পঃ উম্মে সালমা পেশায় একজন গৃহিণী। তাঁর বাসা ঢাকার ঝিগাতলায়। আর বাকি ১০জন বাঙালি নারীর মতো তাঁকেও ঘর-সংসার, রান্না-বান্না সব সামলাতে হয়। এতো ব্যস্ততার পরেও তিনি ভীষণ সৌখিন একজন মানুষ। তার সখ হলো বাগান করা। আর তার বাগানে সবচাইতে আদরের গাছটি হলো নাইট কুইনের গাছটি।
তাঁর নাইট কুইন গাছের শুরুটা জানতে চাইলে উম্মে সাল্মা বলেন, চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়ে জা এর বাসা থেকে দুটি পাতা ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি। টবের মাটির সাথে ব্যবহৃত চা পাতা মিশিয়ে পাতা দুটি মাটিতে রোপণ করেছিলেন। সেখান থেকেই এখন তাঁর এতো বড় একটি গাছ। তাঁর গাছ থেকে অনেক মানুষকে তিনি পাতা দিয়েছেন গাছ লাগানোর জন্য। এখন এই গাছের বয়স প্রায় দশ পার হয়ে গিয়েছে। ফুল ফোটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন গাছ লাগানোর প্রায় সাত বছর পর প্রথম ফুল ফুটেছিলো। একসাথে ছয়টি ফুল ফুটেছিল সেই বার। সাধারণত বর্ষায় বেশি ফুল ফোটে। রোজার আগেও দুইদিনে চৌদ্দটা ফুল দিয়েছে তাঁর সাধের গাছটি। রাত ১২ টার দিকে ফোটা শুরু করে ৩টার পর থেকে মরে যেতে থাকে ফুল। ফুলদানির পানিতে রেখে বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাও করেছেন তিনি। কিন্তু ফুলটি তাঁর আপন নিয়মের বাইরে না যেয়ে একই সময়ে নেতিয়ে গিয়েছিলো। তিনি আরো বলেন, মাঝে মাঝে কিছু কলি ফোটার আগেই ঝরে যায়। তবে যেটা ফুটবে না সেটা আগেই লালচে হয়ে যায়। আর যেটা ফুটে সেটা সবুজ থাকে। ফুল ফোটার সময় হয়ে গেলে কলিটা সাদা রঙ ধারণ করে। গাছের যত্নের ব্যপারে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, বাইরের কোনো সার দেয়ার প্রয়োজন হয়না তাঁর গাছে। ঘরে ব্যবহার করা চা পাতা ও মাঝে মাঝে চাল ধোয়া পানি দেন গাছের গোড়ায়। চা পাতা দেয়ার আগে দুধ চিনি থাকলে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেন। মাঝে মাঝে মাটিটা একটু ওলট পালট করে দেন। তাঁর বাসা যেহেতু রাস্তার পাশেই তাই গাছের পাতায় ধুলো-বালি জমে। মাঝে মাঝে যত্ন করে ধুয়ে দেন সেগুলো। মিষ্টি হেসে উম্মে সালমা আরও জানান যে, ফুল ফুটলে ফুলগুলোকে ঘিরে এক রকমের উৎসবের আমেজ আসে তাঁর ঘরে। আসে পাশের বাসার থেকে মানুষজন বেড়াতে আসে ফুল দেখতে। ফুলের গন্ধে পুরো ঘর সুবাসিত হয়ে যায়। যতবার ফুল ফোটে প্রতিবারই ফুলের ছবি তুলে রাখা হয়। আপনি যদি সৌখিন মানুষ হন তাহলে আপনার বাড়ির আশপাশের জায়গায় অথবা টবে নাইট কুইন ফুলের গাছ লাগান। ভীষণ দুর্লভ বলেই হয়তো এই ফুলের প্রতি মানুষের এতো আকর্ষণ। একটু যত্ন করলে আর ধৈর্য্য ধারণ করলে আপনিও হতে পারবেন দূর্লভ এই নাইট কুইন ফুলের মালিক।