ছবি সংগৃহীত

গমের মারাত্মক রোগ “স্টেম রাস্ট” এর প্রতিরোধী ভ্যারাইটি আবিষ্কার!

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৩:১৯
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৩:১৯

বাংলাদেশে ধানের পাশাপাশি রয়েছে গমের চাষ। আর এই গমের সবচাইতে মারাত্মক রোগ হলো “স্টেম রাস্ট”। Puccinia graminis tritici নামের একটি ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগটি হয়। সারা বিশ্বের গম চাষীদের মাথাব্যাথা এই রোগটিকে নিয়ে। এর আক্রমণে গমের কাণ্ডে দেখা যায় লম্বাটে লালচে মরিচা পড়ার মতো ফোস্কা, এ থেকেই এর নাম হয়েছে “রাস্ট”। এর সবচাইতে ক্ষতিকর প্রকার, Ug99 ১৯৯৯ সালের আগে আবিষ্কৃত না হলেও এটি ফসলে আক্রমণ করে আসছে সেই অ্যারিস্টটল এর সময় (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) থেকেই। এর প্রতিকারের জন্য রোমানরা লাল রঙের শেয়াল, কুকুর এবং গরু বলি দিত রোবিগো অথবা রোবিগাস নামের “রাস্ট” এর দেবতার কাছে। বসন্তকালে তারা বলি দিয়ে রোবিগাস নামের অনুষ্ঠান পালন করত এই আশায় যে তাদের ফসল রাস্টের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকবে। এখন আর সে ধরণের কোনও অর্থহীন অনুষ্ঠানের প্রচলন নেই বটে কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত ছত্রাকনাশক দিয়ে এটা দমন করা সম্ভব হচ্ছিলনা এবং এতে খরচও পড়ছিল অনেক বেশি । এমন সময়ে কেনিয়ার এক গবেষক আবিষ্কার করলেন এমন একটি গমের জাত যা কিনা রাস্ট প্রতিরোধী অর্থাৎ এর ওপরে রাস্টের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না।

১৯৭০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত নরম্যান বোরলগ এমনই একটি ধানের জাত আবিষ্কার করেছিলেন যা রাস্ট থেকে বেঁচে থাকবে। কিন্তু ১৯৯৯ সালের মাঝে এসে দেখা যায়, রাস্টের এই জীবাণুগুলো নিজেদের প্রয়োজনেই নিজেদেরকে বিবর্তিত করে নিয়েছে এবং রাস্ট প্রতিরোধী এই গমগুলোকেও আক্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। রাস্টের এই প্রকারটির নামই হল Ug99। কিন্তু সম্প্রতি কেনিয়ার এলডোরেট ইউনিভার্সিটির গবেষক মিরিয়াম কিনুইয়া আবিষ্কার করতে সক্ষম হন রাস্ট প্রতিরোধী আরেকটি গম। এই গবেষণায় জাতিসংঘের FAO এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA) সহায়তা করেন তাকে। এই যৌথ কর্মসূচীর পরিচালক লিয়াং কিউ বলেন, “গমের স্টেম রাস্ট প্রায় পেকে ওঠা গমগুলোকেও আক্রান্ত করে কালো খড়ে রূপান্তরিত করতে পারে”। রাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত তৈরি করার জন্য কিনুইয়া কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় কিছু গমের বীজ পাঠান FAO/IAEA এর যৌথ ল্যাবরেটরিতে। এরপর কিছু পরিমাণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি দিয়ে আঘাত করা হয় এই বীজগুলোকে যার ফলে এদের DNA তে পরিবর্তন ঘটে। এভাবে মিউটেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় বিভিন্ন রকম অনুপম বৈশিষ্ট্যযুক্ত গমের বীজ। এরপর কিনুইয়া বীজগুলোকে নিয়ে বপন করেন এবং এগুলো থেকে জন্মানো গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করেন। এ থেকে তিনি দুইটি গমের জাত বের করেন যেগুলো রাস্ট প্রতিরোধী। মাত্র চার বছরে সম্পন্ন হয় এই পুরো প্রক্রিয়াটি।
কেনিয়ার কৃষকদের মাঝে বর্তমানে এই গমের ৬ মেট্রিক টন বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। এর পূর্বে একই ক্ষেতে পাশাপাশি রাস্ট প্রতিরোধী এবং সাধারণ গমের বীজ বপন করা হয় যাতে কৃষকরা নিজের চোখেই দেখে বুঝতে পারে এই প্রতিরোধী জাতের গম কতটা কার্যকর। গম ক্ষেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার চাইতে এই প্রতিরোধী জাত বপন অনেক বেশি লাভজনক। এই বীজগুলো হাইব্রিড নয় বরং সাধারণ বীজের মতই এটি কাজ করে। সুতরাং মাত্র একবারই এই প্রতিরোধী বীজ ক্রয় করতে হবে তাদেরকে। এরপর ফসল হলে তা থেকে তারা কিছু বীজ রেখে দিয়ে আবার পরের বছর বপন করতে পারবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এই জাত দুইটি রাস্টের থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ থাকবে।