ছবি সংগৃহীত

কেমন ছিল অনন্ত জলিলের ২০১৩

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০১৪, ০৬:৫১
আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৪, ০৬:৫১

গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির আয়রন ম্যান থেকে উঠে আসা একজন সফল মানুষের নাম অনন্ত জলিল। পরবর্তীতে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত করতে সক্ষম হন হালের এই নায়ক। নিজের প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে গার্মেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি চলচ্চিত্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন অনন্ত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দেওয়ার নীরব মিশনে অনেকটাই সফলতার দেখা পেয়েছেন জলিল। বছর জুড়েই আলোচিত ছিলেন এম এ জলিল অনন্ত। এ বছরের মার্চের শুরুতেই স্ত্রী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী বর্ষাকে ডিভোর্স দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। বর্ষার আচরণে অসন্তুষ্ট হয়েই তাকে ডিভোর্স দেন। কারণ হিসেবে বর্ষার সাথে মতবিরোধের কথা শোনা যায়। সবকিছুকে ছাপিয়ে আবার বর্ষাকেই ঘরে তুলে নেন এই নায়ক। সেই সময়টাতে নিন্দুকরা বর্ষার সাথে অনন্তের দূরত্বের পেছনে কারণ খোঁজেন প্রয়াত অভিনেত্রী রাহার সাথে প্রেমের। এমনকি অনন্তের সাথে পরকীয়ার কারণেই রাহা আত্মহত্যা করেছেন বলে ধোঁয়া তোলেন। সেই সুর ধোপে টেকেনি। আবার অনন্ত-বর্ষা জুটি এক হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রথম চলচ্চিত্র 'খোঁজ দ্য সার্চ' মুক্তি দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত 'মোস্ট ওয়েলকাম' ও 'হৃদয় ভাঙা ঢেউ' দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। ২০১৩ সালের শেষ দিকে 'নিঃস্বার্থ ভালোবাসা' অনন্তকে সমালোচনা থেকে বের করে নিয়ে আসে। কিছু সমালোচনার কথা বাদ দিলে বলা যায় একটি সফল চলচ্চিত্র উপহার দেন ঢালিউডি দর্শকদের। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত স্বপরিবারে প্রেক্ষাগৃহে বসে চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেছেন। ৬৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় নিস্বার্থ ভালোবাসা। এরই সুবাদে কান এর গালিচায় হেঁটে আসেন অনন্ত-বর্ষা জুটি। বছর শেষে গ্রামীণফোনের 'অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ' শিরোনামের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে মাত করে দেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে নিজের নাম পৌঁছে দেন এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে চায়ের আড্ডা সবখানেই অসম্ভবকে সম্ভবের আলোচনা। নিস্বার্থ ভালোবাসার পর অনন্ত-বর্ষা জুটি আবার শুরু করেন 'মোস্ট ওয়েলকাম টু' চলচ্চিত্রের কাজ। আর এই চলচ্চিত্রে বলিউডের বিপাশা বসু'র আইটেম গানে অভিনয়ের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা আসে। অনন্ত তার চলচ্চিত্রে সব সময়ই ভিন্ন কিছু নিয়ে আসেন। আনেন চমক। তেমনি মোস্ট ওয়েলকাম টু তে কি চমক থাকছে এখন দর্শকদের নজর সেদিকেই। অস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূদ নাফিস বলেন, অনন্ত জলিল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে বাংলা ছবিতে স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহারে তিনি ভালোই মুন্‌শিয়ানা দেখিয়েছেন। দেশের অন্যদের চেয়ে অনন্ত অনেক এগিয়ে রয়েছেন। নির্মাতাদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ এবং নতুন কিছু করে দেখানোর সৃজনশীল মানসিকতাও থাকতে হবে। ১০ বছর পর সবাই অনন্তর মতো কাজ করতে বাধ্য হবেন বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার বা এফডিসির পক্ষ থেকে সিনেমার মান উন্নয়নে এখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানান নাফিস। অক্টোবরের শুরুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ ও সৈনিকদের অনুরোধক্রমে ফিজিক্যাল ফিটনেসের প্রতি সেনা সদস্যদের উৎসাহিত করতে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় অনন্ত জলিলকে। সেখানে সেনা সদস্যরা তাঁকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মাননাও প্রদান করা হয়। অনন্ত জলিল শুধু একজন নায়ক কিংবা একজন ব্যবসায়ীর নাম নয়। একজন মানব দরদী মানুষেরও নাম এম এ জলিল অনন্ত। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় যখন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পোশাক কারখানা ভাঙচুর করে তখন তার গার্মেন্ট শ্রমিকরা কারখানার সামনে বর্ম তৈরি করে। অনন্ত জলিল তার শ্রমিকদের ব্যথা বোঝেন। কেউ কখনো অনন্তের কাছে হাত পেতে ফিরে যায় না এমনও কথা শোনা যায়। প্রতিটি উৎসবে অনন্ত তাঁর শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান। অনন্ত জলিল সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ৩টি এতিমখানা করেছেন। মিরপুর ১০ নম্বর, বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে আছে এতিমখানাগুলো। এ ছাড়াও সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার ওপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন এই নায়ক। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্টার সিনেপ্লেক্সে শুরু হচ্ছে অনন্ত জলিল চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ জে মুভি উইক’। সাত দিনব্যাপী এই চলচ্চিত্র উৎসবে অনন্ত জলিল প্রযোজিত ও অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে। অনন্ত জলিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব সময়ই আলোচিত ও সমালোচিত নাম। কিন্তু ২০১৩ সালে অনন্ত তাঁর নামের প্রতি যথেষ্ট সুবিচার করতে পেরেছেন বলে সমালোচক মহল মনে করে।