
ছবি সংগৃহীত
কী ছিলো নবি মুসার [আ.] সেই রহস্যময় অলৌকিক সিন্দুকে?
আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৫, ০২:৩০
রহস্যময় একটি সিন্দুকের ব্যাপারে মুসলিম, ইহুদি, খৃস্টান- তিনটি ধর্মের অনুসারীরাই একমত যে, এ সিন্দুকটির অস্তিত্ব আছে এবং এটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। রহস্যময় এ সিন্দুকটি বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে প্রদান করেছিলেন তাদের নবি হজরত মুসা [আ.]। বলা হয়ে থাকে, সরাসরি বেহেশত থেকে পাঠানো হয়েছিলো এ সিন্দুকটি। কিন্তু ইতিহাসে এ প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে- কেমন দেখতে সেই সিন্দুক আর কী-ই বা আছে সেই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন সিন্দুকটিতে? এ বিষয়টি নিয়ে মতভেদ রয়েছে যে, সিন্দুকটি ঠিক কবে নির্মাণ করা হয়েছিলো। কেউ বলেছেন, সিন্দুকটি হজরত আদম আ. নির্মাণ করেছিলেন। কেউ বলেছেন, এটা হলো সেই সিন্দুক যাতে হজরত মুসা [আ.]-র মা নবজাতক মুসাকে রেখেছিলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তা নীল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই বর্ণনার সত্যতা অতি নগন্য। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো, মুসা আ.-কে আল্লাহ কর্তৃক তুর পর্বতে ওহির মাধ্যমে ১০টি প্রতিজ্ঞা দেয়ার পর আল্লাহ এ সিন্দুকটি মুসাকে প্রেরণ করেন অথবা মুসা আ. নিজেই সিন্দুকটি তৈরি করান। ইঞ্জিল ও বেশ কিছু ধর্মীয় ও ইতিহাসগ্রন্থে এর সত্যতা প্রমাণিত। যেখানে মুসা [আ.] দক্ষ একজন কাঠমিস্ত্রিকে সিন্দুক বানানোর ব্যাপারে আদেশ দিচ্ছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। আল কুরআনে সিন্দুকটির কথা এবং অলৌকিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آَيَةَ مُلْكِهِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِمَّا تَرَكَ آَلُ مُوسَى وَآَلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘বনি-ইসরাইলদেরকে তাদের নবি আরো বললেন,তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে যাতে থাকবে তোমাদের পালকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মনের প্রশান্তি, আর তাতে থাকবে মুসা, হারুন এবং তাঁদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৪৮) মতভেদ রয়েছে সিন্দুকটির ভেতরে কী কী জিনিস রয়েছে সে ব্যাপারেও। একদল বলছেন, এর মধ্যে হজরত আদম আ. থেকে শুরু করে শেষনবি হজরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত সমস্ত নবির প্রতিকৃতি রাখা আছে। এমন আরেকটি মত হলো, এর মধ্যে হজরত আদম আ. থেকে শুরু করে শেষনবি হজরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত সমস্ত নবির নামতালিকা ও তাদের একটি করে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু এর ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। সবচে নির্ভরযোগ্য মত হলো, এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তুর পর্বতে হজরত মুসা [আ]-কে তার উম্মতের জন্য যে দশটি প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছিলো, সেগুলো খোদাই করা দুটো প্রস্তরখণ্ড। মুসা [আ.] তুর পর্বত থেকে সেই প্রত্যাদেশগুলো দুটি প্রস্তরখণ্ডে খোদাই করে আনেন। ইতিহাসে এটি ‘টেন কমান্ডমেন্টস’ বা ‘দশ প্রতিজ্ঞা’ বলে বিখ্যাত। অনেক ইতিহাসবিদ সিন্দুকটিতে কেবল সেই আদিষ্ট প্রতিজ্ঞাপত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেননি, তারা মত দিয়েছেন, সিন্দুকটিতে বনি ইসরাইলিদের জন্য আল্লাহপ্রেরিত খাবার মান্না এবং সালওয়ার কিছু অংশ রক্ষিত আছে। রয়েছে হজরত মুসা [আ.]-এর ব্যবহৃত অলৌকিক লাঠিটি। সঙ্গে হজরত হারুন আ. ব্যবহৃত কিছু সামগ্রীর কথাও বলা হয়েছে। অধিকাংশ তাফসিরকারগণ শেষের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা কুরআনে এ বিষয়টিই বিবৃত করেছে। সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর [হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর অনুসন্ধানী তরুণ লেখক। ধর্মদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মিথ, ইতিহাসের আড়ালের ইতিহাস নিয়ে কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যেই ইতিহাসভিত্তিক তার লেখা বেশকিছু বই প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে আরও কিছু গ্রন্থ। ইতিহাসের জানালা তার রচিত একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ। সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর ২০০৮ সালে জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সম্পন্ন করেছেন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে সহযোগী সম্পাদক ছিলেন সাপ্তাহিক লিখনীতে। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্সিং লেখালেখিতেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।]