
ছবি সংগৃহীত
এক নজরে: নোকিয়ার ইতিহাস
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৪, ০৩:৫৩
(প্রিয় টেক) দীর্ঘ ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘নোকিয়া’ নামটি মোবাইল ফোনের জগতে রেখে আসছে প্রযুক্তি এবং বিশ্বাসের এক ছায়া। এই দেড়শ' বছরের মাঝে ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমে নদীর পাশে অবস্থিত একটি কাগজের মিল থেকে নোকিয়া পরিবর্তিত হয় গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশনের এক আদর্শ দিক হিসেবে। সক্ষম হয় ১.৩ বিলিয়নেরও বেশি লোককে 'কানেক্ট' করতে। প্রথম দিকে নোকিয়া রাবারের জুতা, গাড়ির টায়ার, ইলেক্ট্রেসিটির উৎপাদন, টিভি এবং অনান্য ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশও তৈরি করত। ‘নোকিয়া’ তার স্থায়িত্ব দিয়ে দখল করে নিয়েছিল বেশিরভাগ মোবাইল ব্যবহারকারীদের আস্থা। নানা রকম নিত্য-নতুন মডেল এবং সুবিধা দিয়ে কিছুদিন আগেও প্রায় ৭০ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছিল জায়ান্ট বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি নানা রকম জল্পনা-কল্পনা এবং গুজব শেষ করে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫৪৪ কোটি ইউরোয় বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির স্মার্টফোন বিভাগ কিনে নিল সফটওয়্যার জায়ান্ট কোম্পানি মাইক্রোসফট। চলুন, সেই নোকিয়ার ইতিহাস জানতে চেষ্টা করা যাক আজ।
১৮৬৫ সালে ফ্রেডরিখ আইডস্ট্যাম নামক একজন মাইন ইঞ্জিনিয়ার ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত ট্যাম্মারকস্ককিতে একটি কাগজের মিল প্রতিষ্ঠা করে। কয়েক বছর পর নকিয়ানভির্তা নদীর পাশে ফ্রেডরিখ আইডস্ট্যাম আরও একটি মিল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখান থেকেই ১৮৭১ তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নোকিয়া এবি’ রেখেছিলেন।
এডওয়ার্ড পলোন ১৮৯৮ সালে ‘রাবারের’ ব্যবসা শুরু করেন যা পরবর্তীতে নোকিয়ার রাবারের ব্যাবসায় পরিণত হয়। সেই সময় নোকিয়া রাবারের নির্মিত গ্যালোসেস (এক প্রকারের বুট জুতা) থেকে টায়ার পর্যন্ত নির্মাণ করত। নোকিয়ার রাবারের জুতা তখন খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এবং কিছু কিছু স্থানে এখনো বিক্রি হয়ে থাকে যদিও নোকিয়া এখন আর রাবারের জুতা নির্মাণ করে না।
১৯১২ সালে অরভিড উইকস্ট্রম ‘ক্যাবলের’ ব্যবসা শুরু করেন যা পরবর্তীতে নোকিয়ার ক্যাবল এবং ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসায় যুক্ত হয়।
১৯৬০ সালের দিকে অরভিড উইক্সট্রমের ক্যাবল বিজনেস, ফ্রেডরিখ আইডস্ট্যামের নোকিয়া এবি এবং এডওয়ার্ড পলোনের ফরাবারের বিসনেস একত্রে ইলেকট্রনিক্স পণ্যাদি তৈরি করতে শুরু করে। ফলাফল হিসেবে এটি প্রথম একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস তৈরি করে যা “নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টসের” জন্য একটি পালস এনালাইজার ছিল।
১৯৬৩ সালে নোকিয়া সামরিক বাহিনীর জন্য বেতার যন্ত্র এবং জরুরি অবস্থায় সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রথমবারের মত টেলিকমিউনিকেশন খাতে প্রবেশ করে। একই সময়ে কোম্পানির ‘মাইক্রোমিক্কো’ ফিনল্যান্ডের সবচাইতে পরিচিত কম্পিউটারের ব্র্যান্ড হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮৭ সালের দিকে নোকিয়া ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়।
১৯২২ সাল থেকে একত্রে কাজ করতে থাকা নোকিয়া এবি, ফিনিশ ক্যাবল এবং ফিনিশ রাবার এই তিনটি প্রতিষ্ঠান অফিসিয়াল ভাবে একত্রিত হয় ১৯৬৭ সালে এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় ‘নোকিয়া’। সে সময় নোকিয়ার রাবার, ক্যাবল, ফরেস্ট্রি, ইলেক্ট্রনিক্স এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন – এই চারটি ব্যবসা ছিল।
১৯৭০ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৮০ সালের প্রথম দিকেই মূলত নোকিয়া টেলিকমিউনিকেশন খাতে প্রসার ঘটাতে শুরু করে। ১৯৭৯ সালে নোকিয়া ফিনল্যান্ডের টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্যালোরার সাথে ‘Mobira Oy” নামের একটি বেতার টেলিফোন প্রতিষ্ঠান খোলে। এর পরপরই ১৯৮১ সালের দিকে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক সেলুলার নেটওয়ার্ক “দি নরডিক মোবাইল টেলিফোন (NMT)” প্রতিষ্ঠিত হয় যা সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা দিয়েছিল।
১৯৮২ সালে নোকিয়া সর্বপ্রথম গাড়িতে মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু করে, নাম ছিল ‘মোবিরা সিনেটর’। সেই একই বছরে নোকিয়ার DX200 কার্যকর করা হয়েছিল হয়েছিল যা ছিল নোকিয়ার প্রথম ডিজিটাল টেলিফোন সুইচ।
১৯৮৪ সালের দিকে নোকিয়া গাড়িতে ব্যবহার করার জন্য পোর্টেবল মোবাইল নির্মাণ করে যার নাম ছিল মোবিরা টকম্যান। এরপর ১৯৮৭ সালের দিকে নোকিয়া পরিচয় করিয়ে দেয় ‘মোবিরা সিটিম্যান’ এর সাথে যা ছিল নোকিয়ার প্রথম সেলফোন যা শুধু নরডিক মোবাইল টেলিফোনের নেটওয়ার্কের আওতায় কাজ করত। ৮০০ গ্রাম ওজনের এই ‘মোবিরা সিটিম্যান’ এর দাম ছিল তখনকার সময়ে ফিনল্যান্ডের কারেন্সিতে ২৪,০০০ মার্কস যা মোটামুটি ৪,৫৬০ ইউরো ছিল। এই মোবাইলটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে সোভিয়েতের একজন নেতা যার নাম ছিল ‘মিখাইল গোরবাচেভ’, এই সেলফোনটি ব্যবহার করতেন বলে এর নাম হয়েছিল ‘গোরবা’!
১৯৮৭ সালে উচ্চমানের ভয়েস কল, আন্তর্জাতিক রোমিং, টেক্সট-মেসেজ সাপোর্ট এর জন্য ইউরোপে ‘গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন (GSM)’ সুবিধা চালু করা হয়। এ সময়ে নোকিয়া প্রতিষ্ঠানটি মোবাইলের নতুন নতুন অবকাঠামো গড়ার উপর বেশি মনোযোগী হয়।
১৯৯১ সালের পহেলা জুলাই ফিনল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টার হ্যারী হলক্যারী নোকিয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে বিশ্বের সর্বপ্রথম GSM কলটি করেছিলেন এবং ১৯৯২ সালে নোকিয়া সর্বপ্রথম ডিজিটাল জিএসএম সেলফোনটি নির্মান করেছিল যার মডেল ছিল ‘নোকিয়া ১০১১’। একই বছরে নোকিয়ার নতুন CEO জর্মা ওলিল্লা শুধু নোকিয়ার মোবাইলের ব্যবসা এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং ফলশ্রুতিতে নোকিয়ার রাবার, ক্যাবল, অনান্য ইলেকট্রনিক্স এর ব্যবসা বিক্রি করে দেয়া হয়।
১৯৯৪ সালে নোকিয়া ২১০০ সিরিজের মোবাইল বের করে যার মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম ‘নোকিয়া টিউন’ প্রকাশ পায়। টিউনটি নেয়া হয়েছিল ১৯দশকে ফ্র্যান্সিস্কো টারেগ্যার করা গিটারের ‘গ্রান ভালস’ নামের একটি কম্পোজিশন থেকে। এই রিংটোনটি সম্ভবত বিশ্বে সবচাইতে বেশিবার ব্যবহার করা হয়েছে। নোকিয়া ২১০০ সিরিজের ফোন সমগ্র বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন সেট বিক্রি হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নোকিয়ার ২১০০ সিরিজ নিয়ে টার্গেট ছিল মাত্র ৪ লক্ষ্যের মত।
আপনি চাইলে এখান থেকে গ্রান ভালস শুনে নিতে পারেন।
১৯৯৪ সালেই বিশ্বের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট কল করা হয়েছিল নোকিয়ার জিএসএম হ্যান্ডসেট থেকে।
১৯৯৭ সালে নোকিয়ার ৬১১০ মডেলের মোবাইলে সর্বপ্রথম ‘স্নেক’ গেমটি দেয়া হয়েছিল এবং ২০১০ সাল নাগাদ গেমটি প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত হয়েছিল।
জর্মা ওলিল্লার শুধুমাত্র সেলফোন ব্যবসার দিকে মনযোগী হবার সিদ্ধান্ত এবং প্রথমে থেকেই জিএসএম নেটওয়ার্কের পেছনে বিনিয়োগের ফলশ্রুতিতে ১৯৯৮ সালে বিশ্বের সেরা সেলফোন নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয় নোকিয়া। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের মাঝে নোকিয়ার প্রফিট স্কেল ৬.৫ বিলিয়ন ইউরো থেকে ৩১ বিলিয়ন ইউরোতে উপনীত হয়েছিল। সে সময়েই মোবাইলের ফিচার যোগ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যেমন সে সময়েই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়। তদুপরি, তখন থেকেই ‘মোবাইলে’ কেবল কথা বলার বাইরেও যেন অন্যান্য কিছু কাজ করা যায় সেই চেষ্টা শুরু করা হয়।
১৯৯৯ সালে নোকিয়া তৈরি করে নোকিয়া ৭১১০ মডেলের সেলফোনটি যাতে ইমেইল আদান-প্রদানের সুবিধা ছিল।
এরপর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে নোকিয়া এর প্রথম বিল্ট-ইন-ক্যামেরা সম্বলিত মোবাইল ফোন নির্মাণ করে যার মডেল নাম্বার ছিল ৭৬৫০। ভিডিও ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল ফোন নোকিয়া ৩৬৫০ নির্মাণ করা হয় ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে।
২০০২ সালেই নোকিয়া তৃতীয় প্রজন্মের সুবিধা সম্পন্ন 3G মোবাইলফোন নির্মাণ করে যার মডেল ছিল নোকিয়া ৬৬৫০। 3G সুবিধার ফলে তখন দ্রুত ওয়েব ব্রাউজ, মিউজিক ডাউনলোড এবং টিভি দেখার সুবিধা পাওয়া গিয়েছিল।
২০০৫ সালের দিকে নোকিয়া সর্বপ্রথম এর সবচাইতে বিক্রি হওয়া মডেল নোকিয়া ১১০০ নাইজেরিয়াতে প্রথম বিক্রি শুরু করে এবং সে সময়েই বিশ্বব্যাপী মোবাইলের সাবস্ক্রাইবারদের সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। দু'বছর পর, নোকিয়া পাঁচ নম্বর হিসেবে সবচাইতে দামি ব্র্যান্ডগুলোর তালিকায় নিজের জায়গা করে নেয়। ২০০৭ সালে নোকিয়া সিমেন্সের সাথে নোকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
২০০৮ সালটি ছিল নোকিয়ার জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ একটি সময়। কেননা, এ সময় নোকিয়া ডিজিটাল ম্যাপিং এবং নেভিগেশনাল সফটওয়্যারের উপর কাজ শুরু করে। বর্তমানে নোকিয়া ‘HERE’ এর মাধ্যমে এই সুবিধা দিয়ে থাকে।
২০০৯ সালের দিকে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কিছুটা হলেও লোকসানের মুখ দেখতে হয় নোকিয়াকে। এর কিছু দিন আগে গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড-চালিত প্রথম স্মার্টফোন এইচটিসির ড্রিম বাজারে আসে যা সেসময়ে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড-চালিত ডিভাইসের বাজার দখল প্রায় ৬০ শতাংশ। অ্যাপলের আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের কাছে বাজার হারাতে থাকে। সিইও হিসেবে যোগ দেন মাইক্রোসফটের নির্বাহী স্টিফেন ইলোপ। স্মার্টফোন উৎপাদন কার্যক্রম আরো সুগঠিত করতে তিনি এক হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করেন।
২০১১ সালে নোকিয়া মাইক্রোসফটের সাথে কাজ করার কথা ঘোষণা করে। এর পরেই নোকিয়া নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম ‘সিম্বিয়ান’ বাদ দিয়ে প্রথমবারের মত মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম ‘উইন্ডোজ’ এর উপর ভিত্তি করে বাজারে প্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত দুটি ফোন নিয়ে আসে যার মডেল ছিল নোকিয়া লুমিয়া ৮০০ এবং লুমিয়া ৭১০। এপর্যন্ত নোকিয়া বেশ কিছু উইন্ডোজ ফোন বাজারে এনেছে।
২০১২ সালে নোকিয়া সেরা নির্মাতার মুকুটটি হারায় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের কাছে। আরো ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করে নোকিয়া কোম্পানি। এ সময়েই নোকিয়া লুমিয়া ৯২০ বাজারে আনে যা ছিল নোকিয়ার উইন্ডোজ সিরিজের সেরা ও পুরস্কার প্রাপ্ত একটি স্মার্টফোন। ফিনল্যান্ডের এস্পোয় সদর দফতরটি বিক্রি নোকিয়া করে দেয়। এর আগে টানা ১৬ বছর ধরে এস্পোতেই ছিল নোকিয়ার সদর দফতর।
২০১৩ সালে নোকিয়া তাদের সেলফোন বিভাগটি জায়ান্ট সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি করে দেয়ার ঘোষণা দেয়। কোম্পানিটি ফিনল্যান্ড থেকেই ৩০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়।
বর্তমানে নোকিয়ার অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাণের গুজব শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ব্লগগুলোতে নোকিয়ার নির্মিত প্রথম অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনের ছবিও প্রদর্শিত হচ্ছে। সত্যিই যদি নোকিয়া উইন্ডোজের পাশাপাশি সময়ের চাহিদায় অ্যান্ড্রয়েদ অপারেটিং সিস্টেম সম্বলিত স্মার্টফোন বের করার উদ্যোগ নিয়ে থাকে তবে সবাই আশা করছে নোকিয়া তার হারানো বাজার ফিরে পাবে খুব সহজেই। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা, দেখা যাক ‘আস্থার’ নোকিয়া ভবিষ্যতে আমাদের কি উপহার দেয়।