ছবি সংগৃহীত

ঈদে ট্যাটুতে রাঙান আপন শরীর [পর্ব-৩]

Dipanbita
লেখক
প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৫, ১৭:১০
আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫, ১৭:১০

(প্রিয়.কম) ঈদে সাজ পোশাকের পরেও যদি থেকে যায় অপূর্ণতা- নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপনের আকাঙ্খাকে খুব সহজেই পূরণ করা যায় ট্যাটুর মাধ্যমে। না, তার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করে ট্যাটু মেশিনের নিচে বসতে হবে না, আসে পাশের ট্যাটু পার্লারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই খুঁজে পাওয়া যাবে সহজ সমাধান। ঈদের আগে চামড়া ফুটো করে স্থায়ী ট্যাটু করতে রাজি না থাকলেও ট্যাটুর সৌন্দর্য্য ও আবেদন থেকে বঞ্চিত হবেন না। একটা সময়ে খেজুর কাঁটা আর গাছের রস দিয়ে করা উল্কি করা হতো। সেই উল্কিই ট্যাটুর আদলে তরুণ-তরুণীদের কাছে ফিরে এসেছে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে। স্থায়ী ট্যাটুর সম্পুরক হিসেবেই বেছে নেয়া অস্থায়ী ট্যাটু মূলত দুই ধরনের। এক-দুই মাসের মধ্যেই মুছে যাওয়া ট্যাটুকে বলা হয় এয়ারব্রাশ ট্যাটু। আর রয়েছে স্টিকার ট্যাটু, পছন্দমত জায়গায় বসিয়ে নিলেই তাৎক্ষণিক স্টাইল স্টেটমেন্টে আসে বিপুল পরিবর্তন। অবশ্য অস্থায়ী ট্যাটুকে পাশ্চাত্য সভ্যতায় ঠিক ট্যাটু বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।

বাংলাদেশে ছয়-সাত বছর আগে থেকেই ট্যাটুর প্রচলন শুরু হয়। তবে পেশাগতভাবে ট্যাটু আঁকা শুরু হয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। ট্যাটু শিল্পীরা ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পার্লারে এই ট্যাটু আঁকার কাজ করেন। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে রয়েছে ট্যাটু পার্লার। ট্যাটু শিল্পী ফুয়াদ, এলিন এবং রাজ কাজ করেন ব্যক্তিগতভাবেই। এছাড়া পুরুষদের পার্লারগুলোতে ট্যাটু আঁকার সুবিধা থাকে। ট্যাটু করতে হলে প্রথমেই জানতে হবে, ট্যাটু কেন করবেন? প্রশ্নের উত্তরের উপর নির্ভর করছে ট্যাটু কেমন হবে, কোথায় হবে। হঠাৎ শখ, আবেগ কিংবা খেয়ালে ট্যাটুর সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। কারণ কিছুদিন পরে ট্যাটুটি ভালো না লাগলেও কিছু করার নেই। প্রেম ভেঙে গেলেও বদলানো যাবে না প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার নামে আঁকা ট্যাটুটি, আর্জেন্টিনা শতবার হারলেও মোছা যাবে না মেসির ছবি, টেলর সুইফট কিংবা সেলেনা গোমেজের গান শুনে প্রাণ হারালেও থেকে যাবে ম্যাডোনার লাইন, ধর্ম যার যার- কিন্তু আল্লাহু কিংবা ওম ট্যাটুটি চোখে লেগে থাকে সবার। শুধুমাত্র স্থায়ী ট্যাটুর জন্যই এই বিশেষ সতর্কতা। অবশ্য স্থায়ী ট্যাটুও বিশেষ লেজারের মাধ্যমে মুছে ফেলা যায় আজকাল। তবে তার জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাই সে পথ না মাড়ানোই ভালো। কথায় বলে- প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিওর। অস্থায়ী ট্যাটুতে নেই এসব ঝামেলা। তবে যেকোন ট্যাটুই করার আগেই ভেবে নিতে হবে কি উদ্দেশ্যে ট্যাটু করবেন, কোথায় করবেন এবং ডিজাইন কেমন হবে। দ্বিধা থাকলে ট্যাটু শিল্পী, পার্লার কিংবা অভিজ্ঞ মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়। স্থায়ী ট্যাটু করার আগে অবশ্যই সুঁচ, কালির মান, মেয়াদ, শিল্পীর অভিজ্ঞতা ইত্যাদি যাচাই করে নিতে হবে। অস্থায়ী ট্যাটুর ক্ষেত্রেও কালির মান, পার্লারের সুনাম এবং শিল্পীকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। তবে স্টিকার ট্যাটুকে সেক্ষেত্রে নিরাপদ বলা চলে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন শাকিল ও রেশমা দম্পতি, পেশায় একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অন্যজন টেলিকম কোম্পানির কর্মকর্তা। শখ করে দুজনের শরীরে একই রকম ট্যাটু এঁকেছেন তারা। দুজনের ডান কাঁধে রয়েছে একই ট্যাটু- কঙ্কালের মাথার খুলির নিচে হাড় দিয়ে আঁকা বিপজ্জনক চিহ্ন। তাদের ভাষ্যমতে, 'এটা আসলে ব্যক্তিগত মতামত। তবে ট্যাটু আঁকার আগে আগপাছ ভেবে নেয়া ভালো। আমরা ট্যাটু আঁকার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছিলাম। কারণ ট্যাটুর জন্যই হতে পারে ত্বকের রোগ।' বিদেশে ঘুরতে গেলে অাবারও ট্যাটু আঁকার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। হ্যাঁ, ট্যাটু হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ট্যাটু না করানোই ভালো। আর ব্যথার কথা তো রয়েছেই। ট্যাটু শিল্পী ইসমাইল জানান- শরীরের যেখানে মাংস বেশি, সেখানে ব্যথা কম লাগে। তবে হাড় কিংবা শিরা ধমনীর উপরে ট্যাটু করতে গেলে একটু বেশি সহ্য করতে হয়। এসব দিকেও নিরাপদ অস্থায়ী ট্যাটু। তাৎক্ষণিক ফ্যাশন, নিজের আকর্ষণীয় উপস্থাপন কিংবা একান্ত আবেদনে জুড়ি নেই এই ট্যাটুর।
এই ঈদ উপলক্ষ্যে সব বন্ধুরা মিলে অস্থায়ী ট্যাটু করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফাহিম ফেরদৌস। মূলত কিছুটা ব্যতিক্রমী কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত। তবে স্থায়ী ট্যাটু করায় পারিবারিক বাঁধা এবং কিছুটা শঙ্কার কারণেই অস্থায়ী ট্যাটুর সরনাপন্ন হয়েছেন তারা। ঈদের উৎসব ও আয়োজনে সকল বন্ধুদের হাতেই থাকবে কিছুটা গানস্ অ্যান্ড রোজেস আদলের অস্থায়ী ট্যাটু। আর স্টিকার ট্যাটুর ব্যবহার তো অহরহ চােখে পড়ে। মডেল অভিনেত্রী থেকে শুরু করে ঘরোয়া নারীরাও স্টিকার ট্যাটু ব্যবহার করছেন তরুণদের পাশাপাশি। বসুন্ধরা শপিং মলের ক্রেতা সুমাইয়া তাবাসসুম সুবর্ণা বলেন, 'এই ট্যাটু যেকোন পােশাকের সঙ্গেই ব্যবহার করতে পারি। পার্টি শেষ হলে তুলে ফেলা যায়। সাইড এফেক্ট নিয়েও কোন চিন্তা নেই।' বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় ডি ব্লকের হাইলাইটস ভিআইপি সেলুন অ্যান্ড জেন্টস পার্লারের কর্ণধার মোহিদুল ইসলাম জানান, মূলত কিশোর ও তরুণরাই স্থায়ী ও অস্থায়ী ট্যাটু করতে আসেন। রংদার ট্যাটুর চেয়ে সাদাকালো ট্যাটুর চল বেশি। স্থায়ী ট্যাটু করতে খরচ হবে প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর অস্থায়ী ট্যাটু প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়। ট্যাটুর সুঁচগুলো দ্বিতীয়বার ব্যবহার হয় না বলেই এই দামের তারতম্য।
ডিজে, ফ্যাশন সচেতন তারুণ্য কিংবা সৌখিন মানুষ স্টিকার ট্যাটু কিনতে পারেন লেভেল সিক্সের স্ট্রিট সেভেন্টি সেভন থেকে। এই দোকানে রয়েছে বিভিন্ন মান, আকার, ডিজাইন এবং রঙের স্টিকার ট্যাটু। দাম শুরু হয় ১৫০-২৫০ টাকা থেকে। অনেক সময় এক পাতা স্টিকারে থাকে ছোট বড় একাধিক ট্যাটু, আবার কখনও একটা পাতা জুড়ে থাকে বড় একটি স্টিকার। আবার কাপড়ের তৈরি এক ধরনের ট্যাটু পাওয়া যায়, যা হাতে পরে থাকলে রক্ষা পাওয়া যায় রোদের তাপ থেকে। গায়ের ত্বক বাঁচাতে বাইক রাইডারদের মধ্যে এই ট্যাটুও বেশ জনপ্রিয়। ট্যাটুর রঙ হতে পারে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আর তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বিধিনিষেধ। জার্মানিতে রঙিন ট্যাটু করা প্রায় নিষিদ্ধ। অবশ্য ট্যাটু প্রেমিকদের দমিয়ে রাখ সম্ভব নয়। আর তাই দিন দিন বাড়ছে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সচেতন হলে এই ঈদে ট্যাটুর মাধ্যমেই হয়ে উঠতে পারেন অনেকের মধ্য এক, গড়ে তুলতে পারেন স্বতন্ত্র উপস্থিতি।
ছবি: রাজীন চৌধুরী। মডেল: নয়ন ও মধ্যমণি