ছবি সংগৃহীত

ইউএসবি টাইপ - সি: কী এবং কেন?

আবীর হাসান
লেখক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৫, ২০:৪৬
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫, ২০:৪৬

প্রযুক্তি দুনিয়ায় ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে সব কিছু। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে প্রযুক্তির প্রতিটি পণ্যে লাগছে নতুন সব সুবিধার ছোঁয়া, বাদ যায়নি ইউএসবি প্রযুক্তিও। আর তাইতো, বর্তমানের নতুন ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে ইউএসবি টাইপ-সি স্ট্যান্ডার্ড। ইন্টারনেট ঘাটলেই আপনি অ্যাপলের নতুন ম্যাকবুকে দেখতে পাবেন একটি সিঙ্গেল ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট যা ম্যাকবুকে নতুন সংযোজন করা হয়েছে। তবে, এই ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট কিন্তু ‘অ্যাপল-অনলি-স্ট্যান্ডার্ড’ নয়, বরং এটি সকল ডিভাইসের জন্য একটি নতুন ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ট, এবং এটি সেই সকল প্রকারের ডিভাইসেই আগামীতে দেখা যাবে যা এখন প্রযুক্তি বাজারে আছে; যা এখন আমরা ব্যবহার করছি। নিশ্চয়ই ইউএসবি টাইপ-সি স্ট্যান্ডার্ডেরও অন্যসকল স্ট্যান্ডার্ডের মত বাড়তি শুবিধা রয়েছে, এবং এজন্যেই মূলত আজ লিখতে বসা। চলুন, জেনে নেয়া যাক এই নতুন ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ডটি সম্পর্কে। এটি মূলত কি, কি কি কাজে আসবে, কেনই বা আপনি ব্যবহার করবেন - এই উত্তর গুলো আশা করি এই পোষ্টের মাধ্যমেই আপনি বুজে নিতে পারবেন। আর পুরোটা বুঝতে না পারলেও বিশাল তথ্যভান্ডার গুগল মামাতো রয়েছেই, রয়েছে ইন্টারনেটের হাজারো সাইট। যাই হোক, চলুন শুরু করা যাক।

টাইপ-সি নিয়ে আসছে নতুন শেপের কানেক্টর

নতুন প্রযুক্তির এই ইউএসবি টাইপ-সি হবে একটি ছোট আকারের ফিজিক্যাল কানেক্টর। এবং এই কানেকটরটিও বর্তমানে থাকা অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ড গুলোর কাজ করতে সক্ষম হবে, যেমন বর্তমানে রয়েছে ইউএসবি ৩.১, ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি (ইউএসবি পিডি) এবং ইত্যাদি। আমরা প্রায় সবাই যে ইউএসবি কানেক্টর ব্যবহার করে থাকি বা যে কানেক্টরের সাথে পরিচিত তা হচ্ছে টাইপ-এ কানেক্টর। যদিও প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা ইউএসবি ১, ইউএসবি ২ এবং এমনকি ইউএসবি ৩ ছাড়িয়ে এখন ইউএসবি ৩.১-এ এসে পৌছেছি, তবুও একটা ব্যাপার যা কমন থেকেই গেছে তা হচ্ছে এর আকার। ইউএসবি ১ থেকে এখনকার ৩.১ পর্যন্ত সবগুলো স্ট্যান্ডার্ডের শেপ হুবহু একই রকম, কাজ শুধু কিছুটা ভিন্ন। এবং এই শেপের কানেক্টরগুলো মোটামুটি বড়ই বলা চলে এবং যেহেতু এটা শুধুমাত্র ওয়ান-ওয়ে তে ডিভাইসের সাথে কানেক্টেড হয় তাই প্লাগ-ইন করার সময় আমাদের কিন্তু পোর্ট দেখেই কানেক্ট করতে হয়। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে অন্য সকল ডিভাইসও কিন্তু ইউএসবি ব্যবহার করতে চায় যেখানে একটি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এই শেপের কানেক্টর যুক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। শুধু স্মার্টফোনই নয়, ডিজিটাল ক্যামেরা, গেম কনট্রোলার ইত্যাদিতেও একই সমস্যা! এবং এই সমস্যার সমাধান হিসাবেই নানা রকম আকারের কানেক্টরের উৎপত্তি হয়েছে, যেমন - মাইক্রো এবং মিনি কানেক্টর। 1 কিন্তু আপনিই চিন্তা করে দেখুন, বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য বিভিন্ন আকারের কানেক্টর ব্যবহার করাটা আসলেই সুখকর কোন বিষয় কি না। আর এজন্যেই প্রযুক্তিবিদরা কাজ করছেন ইউএসবির এই টাইপ-সি কানেক্টরটি নিয়ে। এই কানেক্টরটি এতটাই ছোট যা মোটামুটি বর্তমানের ইউএসবি ৩.১ স্ট্যান্ডার্ডের ৩ ভাগের এক ভাগ মাত্র। প্রতিটি ডিভাইস যেন একই কানেক্টর ব্যবহার করতে পারে - এই লক্ষ্য রেখেই প্রযুক্তিবিদরা এই টাইপ-সি কানেক্টর নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, চাচ্ছেন একে সব ডিভাইসের জন্যেই ইউএসবি স্ট্যাডার্ড করতে। এটি হবে মূলত একটি সিঙ্গেল ক্যাবল যার দুই প্রান্তেই টাইপ-সি কানেক্টর থাকবে যেন আপনি খুব সহজেই যে কোন ডিভাইসের সাথে শুধু মাত্র একটি সিঙ্গেল ক্যাবল ব্যবহার করেই বিভিন্ন রকম কাজ সম্পাদন করতে পারেন, তা সেটা মোবাইল ইউএসবির মাধ্যমে চার্জ দেয়া হোক বা ডাটা ট্র্যান্সফার করা হোক। একটু ভেবে দেখুন, টাইপ-সি আপনাকে কত শুবিধা দিতে যাচ্ছে। আপনাকে আর বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য কেনা বিভিন্ন ক্যাবলের মধ্যে থাকতে হবেনা, আর ক্যাবলে ক্যাবলে প্যাচও লাগবেনা। যে কোন সময় আপনি শুধু মাত্র একটি ক্যাবল ব্যবহার করেই যদি সব কাজ করতে পারেন তবে এটি নিশ্চয়ই আপনার জীবনকে আরও সহজ করে দিতে সক্ষম হবে। ইউএসবি টাইপ-সি ‘অলটারনেট মোড’ এর মাধ্যমে বিভিন্ন রকম প্রোটোকল ব্যবহার করে এইচডিএমআই, ভিজিএ, ডিসপ্লে পোর্টের সাথেও ব্যবহার করা যাবে, হয়তোবা কিছু ক্ষেত্রে অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করতে হতে পারে। 2

ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি

অন্য একটি ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ড ইউএসবি পিডিও অনেকটা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী টাইপ-সি এর কাছাকাছি পরে। অনেকেই কিন্তু স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কে ইউসবি ক্যাবলের মাধ্যমে চার্জ করে থাকেন। একটি ইউএসবি ২.০ কানেক্টর ২.৫ ওয়াটের মত পাওয়ার সর্বারহ করে থাকে যা আপনার ট্যাব বা মোবাইল চার্জ তো করে ঠিকই তবে খেয়াল করে দেখবেন যে এই প্রক্রিয়ার স্মার্টফোন চার্জ হয়ে লেগে যায় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময়। তাই নতুন ইউএসবি পিডি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা যা মোটামুটি ১০০ ওয়াটের মত পাওয়ার সরবারহ করতে সক্ষম হবে। এবং এটি বাই-ডিরেকশনাল হবার কারণে আপনি ডিভাইস থেকে যেমন চার্জ দিতে পারবেন তেমনি অন্য ডিভাইস থেকে চার্জ সংগ্রহও করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, বাই-ডিরেকশনাল এই ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ডে আপনি একই সময়ে চার্জ দেয়ার পাশাপাশি ডাটাও ট্র্যান্সফার করতে পারবেন কোন প্রকার সমস্যা ছাড়াই। আর তাই অ্যাপলের নতুন ম্যাকবুক এবং গুগলের নতুন ক্রোমবুক পিক্সেল ডিভাইস দুটিতে চার্জিং পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে টাইপ-সি পোর্ট। 3

ইউএসবি টাইপ-সি এবং ইউএসবি ৩.১

ইউএসবি ৩.১ - ও কিন্তু একটি নতুন ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ড। এর সাথে ইউএসবি ৩.০ এর পার্থক্য খুবই সীমিত। ইউএসবি ৩ তে থিওরিটিকাল ব্যান্ডউইথ ছিলো 5 Gbps এবং ইউএসবি ৩.১ এর থিওরিটিকাল ব্যান্ডউইথ হচ্ছে 10 Gbps যা মোটামুটি প্রথম জেনারেশনের থান্ডারবোল্ট কানেক্টরের মতই ফাস্ট কাজ করতে সক্ষম। 4 তবে, ইউএসবি টাইপ-সি কিন্তু ইউএসবি ৩.১ এর মত নয়। এটি শুধুমাত্রই একটি কানেক্টর শেপ! এর ভিতরকার টেকনোলোজি হতে পারে ইউএসবি ২ অথবা ইউএসবি ৩ এর। যেমন ধরুন, নকিয়ার এন১ অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটে একটি ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর ব্যবহার করা হলেও এর ভিতরে কাজ করে ইউএসবি ২.০, এমনকি এতে ইউএসবি ৩.০-ও ব্যবহার করা হয়নি। যাই হোক!!

ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবিলিটি

এই প্রযুক্তির ফিজিক্যাল ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টরটি ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবল না হলেও এর আন্ডারলাইং প্রযুক্তিটি কিন্তু কম্প্যাটিবল। আপনি একটি মর্ডান,ছোট টাইপ সি কানেক্টরে এখনকার ইউএসবি স্ট্যান্ডার্ড কানেক্টর ব্যবহার করতে পারবেন না, না পারবেন ঠিক উল্টোটাও, কিন্তু এর মানে এই না যে আপনার পুরাতন সব পেরিফেরাল গুলোকে আপনি ফেলে দিবেন। কেননা, ইউএসবি ৩.১ এখনও কিন্তু পুরাতন স্ট্যান্ডার্ডের সাথে ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবল। তাই আপনি ইচ্ছে করলেই ব্যবহার করতে পারবেন পুরাতন কানেক্টর গুলোও শুধু মাত্র একটি অ্যাডাপ্টারের মাধ্যমে। এছাড়াও, বেশির ভাগ কম্পিউটার বা ল্যাপটপে টাইপ-সি কানেক্টরের পাশাপাশি পুরাতন বড় ইউএসবি-টাইপ এ পোর্টও থাকবে, যেমনটি আছে ম্যাকবুক এয়ার এবং ক্রোমবুক পিক্সলে।

শেষ কথা:

ইউএসবি টাইপ-সি একটি চমৎকার আপগ্রেড। সব ডিভাইসে যদি একটি ক্যাবলের মাধ্যমেই একই প্রকারের কাজ করা সম্ভব হয়ে থাকে তবে সেটি সত্যিই হবে চমৎকার একটি বিষয়। এখন হয়তোবা অনেকেরই ভালো লাগবে না বা এই বিষয়টিই ঝামেলার মনে হবে তবে যখন টাইপ-সি প্রায় সকল ডিভাইসে দেখা যাবে তখন আমরা মূলত এর পুরো অ্যাডভানটেজ বুঝতে পারবো তথা ব্যবহার করেও মজা পাবো। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক; দেখা যাক কি হয় আর না হয়! যাই হোক, আজ আর নয়। আগামীতে নতুন কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো, ততদিন ভালো থাকুন। প্রিয় টেকের সাথে থাকুন।