
ছবি সংগৃহীত
আমানতদারিতা মুসলমানের পরিচয়
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫, ০৩:২৩
আমানত শব্দের অর্থ কোনো জিনিস গচ্ছিত বা জমা রাখা। সাধারণ পারিভাষিক অর্থে কারো কাছে কোনো জিনিস বা বস্তু গচ্ছিত রাখাকেই আমানত বলা হয়। যে গুণাবলির কারণে মানুষ সমাজে গ্রহযোগ্যতা বা বিশ্বস্ততা অর্জন করতে সক্ষম হয় আমানতদারিতা তার মাঝে অন্যতম। আমানতদার মানুষ বলতে বিশ্বস্ত এবং নির্ভেজাল একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে আমানতদারিতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আর যারা আমানত ও প্রতিশ্র“তি রক্ষা করে, যারা সাক্ষ্যদানে অটল এবং নিজেদের নামাজের ব্যাপারে যত্নবান, তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতে। আমানতদারিতা সম্পর্কে পবিত্র হাদিসে বেশ উদ্ধৃতি রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসুল [সা.] বলেছেন, যদি তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকে, তবে পার্থিব কোনো কোনো জিনিস হাত ছাড়া হয়ে গেলেও তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর সেই চারটি জিনিস হলো- এক. আমানতের হেফাজত করা বা আমানতদারিতা। দুই. সত্য ভাষণ বা সত্য কথা বলা। তিন. উত্তম চরিত্র। চার. পবিত্র রিজিক। অন্য এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে, তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না। রাসুলুল্লাহ [সা.] তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে আল-আমিন উপাধি লাভ করেছিলেন, তারা তাঁর কাছে তাদের সম্পদ আমানত রাখত। ধর্মের বিষয়ে বিমুখ থাকার পরও নবিজির [সা.] আমানতদারিতা ব্যাপকভাবে আলোড়িত করত তৎকালীন কাফির-মুশরিকদের। তারা জানত ধর্মে বিবেচনায় মুহাম্মদ [সা.] আমাদের বিপরীত মেরুর মানুষ হলেও, আমাদের আমানতের কোনো ক্ষতি তিনি করবেন না। মুশরিকরা রাসুল [সা.] এবং তাঁর অনুসারীদের কঠোরভাবে নির্যাতন শুরু করার পর আল্লাহ যখন তাঁকে মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করার অনুমতি দিলেন, তিনি আমানতের মালসমূহ তার অধিকারী বা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করে হিজরত করেননি। মোনাফিকের আলামত সম্পর্কে নবিজি [সা.] বলেছেন, তিনটি লক্ষণ যার মাঝে থাকবে সে মোনাফিক। এক. কথা বললে মিথ্যা বলবে। দুই. ওয়াদা বা প্রতিশ্র“তি দিলে তা আদায় করবে না। তিন. আমানত দিলে বা রাখলে খেয়ানত করবে। আমানতদারিতার সুফল আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে সামজিক জীবন, এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনেও ব্যাপ্ত। আমানতদারিতা থাকলে প্রতিটি রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে এবং সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে রাষ্ট্রের জনগণ। একজন মুসলমান হিসেবে, শেষ নবির উম্মত হিসেবে আমাদের সবার ওপর একান্ত নৈতিক দায়িত্ব হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমানতদারিতার চর্চা করা। মাওলানা মিরাজ রহমান