ছবি সংগৃহীত

আপন আলোয় আনোয়ারা

mithu haldar
লেখক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬, ০৭:৫৬
আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৬, ০৭:৫৬

ছবি: মুজাহিদ সামিউল্লাহ ও সংগৃহীত

(প্রিয়.কম) বাংলা ছবির রুপালি পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা আনোয়ারা। যিনি এ সময়ের বেশিরভাগ ছবিতেই মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। আনোয়ারা এখনও এদেশের মানুষের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করেন। যদি মা হিসেবেও স্বার্থক এক অভিনেত্রীর কথা বলা হয়, তা তিনি। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন। সেসময় মঞ্চেও নিয়মিত অভিনয় করতেন আনোয়ারা। এরপর ১৯৬১ সালে অভিনেতা আজিমের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি।

এরপর কাজল, শাদী, বন্ধন, শীত বসন্ত, মিলন, একালের রূপকথা, সাতরং, জানাজানি, ১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন, কাগজের নৌকা, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, বেগানাসহ অনেক ছবিতে সহশিল্পী চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে নায়িকা হিসেবে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ১৯৬৭ সালে উর্দু ছবি ‘বালা’তে। তবে অভিনেত্রী হিসেবে আনোয়ারার টার্নিং পয়েন্ট একই বছর মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। শুভদা, রাধা কৃষ্ণ ও গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিতে মায়ের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন সর্বোচ্চ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

এ পর্যন্ত তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অভিনয় করেছেন প্রায় সাড়ে ছয় শ চলচ্চিত্রে। বর্তমানে একরকম অবসরেই সময় কাটে আনোয়ারার। দীর্ঘ দিন পর নতুন একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ে মধ্য দিয়ে নতুন করে অভিনয়ে ফিরেছেন তিনি। ছবির নাম মা। পরিচালনা করছেন কালাম কায়সার। এছাড়া পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের ‘সোনাবন্ধু’ ছবিতে অভিনয় করার কথা রয়েছে।

‘দীর্ঘ কয়েক বছর পর এফডিসিতে আসা হলো। তবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। কাজ না থাকলে এফডিসিতে আসতেও ইচ্ছে করে না। তবে আগে একটা সময় ছিল এফডিসিতেই রাত-দিন কাটত। মাঝে নানা কারণে চলচ্চিত্রে কাজ করা তেমন হয়ে ওঠেনি। তারপরও কাজ ছাড়া বসে থাকলে একদমই ভালো লাগে না। অবশ্য খুব বেশি ব্যস্ত থাকি না। এছাড়া কাজ করতে গেলে ভালো চরিত্র বা ভালো গল্প পাওয়া যায় না। এছাড়া আমি হজ্ব করে আসার পর কাজ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছি। আরেকটি বিষয় অভিনয়টাকে তো ভালবাসি। যার কারণে দূরে থাকলে মন ভাল থাকে না। এখন কাজ শুরুর করার পর থেকে নিজের মধ্যেই এক ধরনের ভাল লাগা কাজ করছে’- দীর্ঘদিন পরে অভিনয়ে ফিরে এ কথাগুলো বলছিলেন অভিনেত্রী আনোয়ারা।

অনেকদিন পর অভিনয়ে ফিরছেন। অভিনয় চর্চার জায়গা। যত শান দিবে তত ধার হবে। দীর্ঘদিনের অভিনয় বিরতি। নিজের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় ছিল। পরিচালক তাকে সাহস যোগালেন। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করছি, আমি পরিচালককে বললাম, আমি কি পারব এ চরিত্রটিতে অভিনয় করতে? তিনি আমাকে পূর্ণ আশ্বাস দিলেন। এরপর আমি আরও সাহস পেলাম যখন শুনলাম এ ছবিতে শাকিব-অপু আছেন’।

‘চলচ্চিত্রে অভিনয় করব। এ ধরনের ভাবনা কখনও ছিল না। আমি অভিনয় থেকে নাচকে বেশি ভালবাসতাম। ছোটবেলায় আমাকে যখন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তখন স্কুল ফাঁকি দিতে লাগলাম। কারণ তিনি দেখলেন নাচের প্রতি আমার অন্যরকম ভালবাসা আছে। তখন বাবা আমাকে হারমনিয়াম, তবলা কিনে দিলেন। একজন শিল্পীর কিন্তু অভিনয়ের তৃষ্ণা কখনও মিটে না। সেটা জাত শিল্পী হলে থেকেই যায়’। এভাবেই তার অভিনয়ের শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করে বলছিলেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি আনোয়ারার মা পরলোক গমন করেছেন। এ নিয়ে তার মধ্যে বিষাদের বাতাস বইছে। নিজেকে খুব একাকী মনে হচ্ছে। শূণ্য হৃদয় নিয়ে তাকে বাকিটা পথ হেঁটে যতে হবে। ‘আমার মা মারা গেছে ৪০ দিন হল। আমারও বয়স হয়েছে। আমারও সন্তান আছে। তবে মা হারানোর যে কি বেদনা, যে হারিয়েছে সেই বুঝবে। তখন মান্নার একটি চ্যারিটি শো ছিল। আমি যেতে পারি নি। তবে আমার মনে হয়, মান্না বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন’।

আনোয়ারা যে সময়ের বাংলা ছবির নায়িকা ছিলেন, সেসময় বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী দিন ছিল। এখন পাল্টে গেছে সময়। আর এর আবগাহনে এর চিত্রপট দ্রুত পাল্টে গেছে, যা অনেকের কাছে ধাঁধার মত।

‘চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন বাংলা চলচ্চিত্রে ভাল ছবি হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এখন অনেকে আসলে ছবি না দেখেই মন্তব্য করেন। সবার আগে বাংলা চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে’। এও জানালেন, ‘যেকোন কাজই হোক তাকে সময়ের মূল্যায়নটা অবশ্যই করতে হবে। অভিনয়টা নিজে নিজেও কিছু চর্চা করা যায়। অল্প কিছু কাজ করেই যদি ভাবি আমি অনেক কিছু হয়ে গেছি, তাহলে নিজের সমাপ্তি তিনি দেখে ফেলবেন। আমি আনোয়ারা এখনও শেখার চেষ্টা করি। আমি এখনও কোন চরিত্রে অভিনয় করার আগে রাত পর্যন্ত ভাবি কিভাবে নিজেকে পর্দায় তুলে ধরব’।