
ছবি সংগৃহীত
অপুষ্টি জনিত রোগগুলি
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৩, ১৭:০৬
আমাদের দেশে সাধারণত সুশম খাবার সম্পর্কে ধারনা খুব কম। অনেকেই ভাবেন শুধু দুধ, ডিম বা মাছ মাংশ খেলেই প্রয়োজনীয় পুস্তি পাওয়া যায়। এই ধারনা ঠিক না। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাবার প্রয়োজন যাতে থাকবে আমিষ, শর্করা, স্নেহজাতীয় উপাদান, ভিটামিনের সমানভাবে বণ্টন। সুষম খাদ্য না খাওয়ার কারনে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়৷ আমাদের অজ্ঞতার কারণেই আমরা পুষ্টির অভাবে ভুগি এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। যেমন-এনিমিয়া,বেরিবেরি,স্কার্ভি,রাতকানা,গলগণ্ড ইত্যাদি। পাঠকের সুবিধার্থে দেয়া হলো বিস্তারিত বিবরণ। এনিমিয়া- রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে এনিমিয়া হয়৷ বিভিন্ন কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে৷ যেমন কোনো কারণে বেশি রক্তপাত হলেও হিমোগ্লোবিন কমে যায়৷ সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্রুত ঐ হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষিত হয় এবং রক্তপাতের কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে৷ কিন্তু খাদ্যে কিছু কিছু পুষ্টি উপাদানের যেমন আয়রন, প্রতিন, ফলিক এসিডের অভাব ঘটলে হিমোগ্লোবিন ও রক্তের লোহিত কণিকার সংশ্লেষণে সমস্যা হয় এবং এনিমিয়া দেখা দেয় যা আপনাআপনি সারে না৷। এনিমিয়াকে প্রতিরোধ করতে হলে লোহা, প্রোটিন, ফলিক এসিড ও ভিটামিন সি ও বি-১২ আছে এমন খাবার খেতে হবে৷ ডিম, কলিজা, ডাল, বাদাম, ছোলা, কচুশাক, আমলকি, পেয়ারা, টমেটো, কমলা ইত্যাদি খাওা যেতে পারে এনিমিয়া প্রতিরধ করতে। রাতকানা- রাতকানা রোগ আক্রান্ত রোগীরা রাতের সল্প আলতে দেখতে পায়না। এই রোগ ভিটামিন এ এর অভাবে হয়। রাতকানা ছাড়াও ভিটামিন এর অভাবে চোখের মনিতে ঘা, চোখে পুঁজ ইত্যাদি রোগ হয়৷ আমাদের আনাচে-কানাচে যেসব সবুজ শাক রয়েছে তাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে৷ তাই কচুশাক, পুঁইশাক, লাল শাক, লাউ শাক, কুমড়া শাক ইত্যাদি নিযমিত খাওয়ার অভ্যাস করলে এসকল রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়৷ এ ছাড়া হলুদ ও সবুজ শাক সবজি ও ফল যেমন গাজর, মিষ্টি কুমড়া, কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, আম, পাকা কলা ইত্যাদিতে ভিটামিন এ পাওয়া যায়৷ বেরিবেরি- পা অবশ হয়ে চলাচলের ক্ষমতা নষ্ট হয় বেরিবেরি হলে। পা এত ফুলে যায় যে আঙুল দিযে টিপলে সে জায়গা দেবে যায়৷ খাদ্যে থায়ামিনের (এক জাতীয় ভিটামিন) অভাব হলে এ রোগ হয়৷ আছাটা চাল, গমে থায়ামিন বেশি থাকে। তাই এ রোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রতিদিন গমের আটার রুটি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে৷ এ ছাড়া ছোলা, মটর, শিমের বীচি, দুধ, কলিজা ইত্যাদিতে যথেষ্ট থায়মিন রয়েছে৷ স্কার্ভি- ভিটামিন সির অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়৷ এই রোগ হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত পড়ে ও দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়৷ ভিটামিন সির অভাবে হাত-পায়ের গিঁটে ব্যথা হয এবং শরীরে কোন ক্ষত হলে সহজে সারতে চায় না৷ শিশুদের মধ্যে ভিটামিন সির অভাব প্রায়ই দেখা দেয়৷ ভিটামিন সির প্রধান উৎস হলো শাকসবজি ও টক জাতীয় ফলমূল৷ যেমন পাতাবহুল শাকসবজি, কাচাঁমরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়৷ সাধারণত রান্নার তাপে অধিকাংশ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় তাই কাঁচাফল ও সালাদ খাওয়া ভালো৷ গলগণ্ড- বাংলাদেশের অনেক নারী পুরুষের এই রোগ দেখা যায়৷ এদেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশি দেখা গেছে৷ গলগণ্ড রোগকে স্থানীয় ভাষায় ঘ্যাগ রোগ বলা হয়৷ শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে এ রোগ হয়ে থাকে৷ আমাদের দেহে যে পরিমাণ আয়োডিনের প্রয়োজন তা খুবই সামান্য কিন্তু তাও উপযুক্ত খাবার না খাওয়ার কারনে পুরন হয়না অনেক সময়, ফলে এই রোগ হয়। আয়োডিনের প্রধান উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ৷ সামুদ্রিক মাছ না পেলে আয়োডিনযুক্ত লবন খাওা যেতে পারে। তথ্যসূত্র: সৈয়দা হালিমা রহমান (১৯৯০): খাদ্য ও পথ্য সিদ্দিকা কবীর (১৯৯৬) : পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থা