মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম মিয়ানমার  তাদের কথা রাখবে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যে চুক্তি হয়েছে তার কোনোটাই মিয়ানমার বাস্তবায়ন করেনি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসনে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিভিন্ন অজুহাতে তারা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। রোববার এফডিসিতে ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসন’ নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্টে এর গ্র্যান্ড ফাইনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদেশ মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘খুব সুসম্পর্ক’ ছিল দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমরা বহু বছর মিয়ানমারকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছি, তারাও সেটা জানে। ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার তাদের কথা রেখেছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সে সময় প্রায় দুই লাখ ৩২ হাজার বাস্তুচ্যুত লোককে তারা ফিরিয়ে নিয়ে ছিল। এবারও আমরা এ সংকটের শান্তিপূর্ণ এবং টেকসই সমাধান চাই। সবাইকে নিয়েই আমরা এটি করতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চল বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। ভারতকে বোঝাতে হবে এই সমস্যা প্রলম্বিত হলে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে; যা কারও জন্য মঙ্গলকর হবে না। সমস্যার সমাধানে আঞ্চলিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববাসী চাপ না বাড়ালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কঠিন হবে। গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভারত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে মর্মে যে খবর বেরিয়েছে তা চটকদার মিডিয়ার কাজ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার সঙ্গে আলোচনায় এটি নাকচ করে দিয়েছেন। ভারত বলেছে, ফেরত পাঠালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারেই পাঠাবে ভারত। তবে মন্ত্রী বলেন, কিছু ফকরবাজ আছে যারা ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দিচ্ছে, নানানভাবে উস্কানিও দিচ্ছে বাংলাদেশে আনার জন্য। সরকার বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। এ সময় সৌদি সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে মর্মে প্রকাশিত খবর নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তার ভাষ্যটি ছিল এমন, ‘খবর শুনে বোঝা যায়, সব রোহিঙ্গার আস্তানা মনে হয় বাংলাদেশ। ওখানে একটি প্রশ্নবোধক আছে। আমাদের কিছুসংখ্যক লোক নিজেদের স্বার্থে কিছু রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিয়ে দিয়েছে। এই সূত্রে কিছু সৌদি আরবে আছে। ফলে তাদের বাংলাদেশেই পাঠানো হচ্ছে। আমরা এমন শাকের করাতে আছি, বড় কঠিন অবস্থায় আছি। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ফাইনালে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। ত্রিশটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে ওই দুটি দল ফাইনালে আসে। বির্তক শেষে বিজয়ী দল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি এবং রানার্সআপ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিযোগিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় বিজয়ীদের হাতে দুই লাখ টাকার চেক এবং রার্নাসআপদের হাতে এক লাখ টাকা ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীর হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, ট্রফি এবং সনদপত্র তুলে দেন তিনি। প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তার  পুরস্কার পান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী তানজিলা আহাম্মেদ পিংকি।রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে: এদিকে পৃথক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বনাঞ্চল ধ্বংস, প্রকৃতি ও পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। রোববার রাজধানীতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং প্ল্যাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্টের (পিডিডি) সহায়তায় ‘অ্যানুয়াল থিমেটিক মিটিং অফ দ্য প্লাটফর্ম অন ডিজাস্টার ডিসপ্লেসমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে দেয়া বক্তৃতায় মন্ত্রী এ মন্তব্য বলেন। রোহিঙ্গা সংকটের মতো শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি এক মিটার বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ জমি তলিয়ে যাবে। এ ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থেকেও আমরা সেভাবে বৈদেশিক অর্থ সহায়তা পাচ্ছি না। দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক সেমিনারে বাংলাদেশসহ জার্মানি, ফিজি, কোস্টারিকা, ফ্রান্স, মেক্সিকো এবং সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৩০ জন  প্রতিনিধি এ সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের সময়সূচি এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান জানান, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। ভাসানাচরে নতুন কিছু অবকাঠামো তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের আলোচনা হয়েছে। মুখ্য সচিব বলেন, কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া জরুরি কারণ, বর্ষা মৌসুমে অনেকেই ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ও ভাইস সরমাদ, আইওএম’র পরিচালক (গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন) মাইকেল ক্লেইন সলোমন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি ইনিক বোরদিন, বাংলাদেশ জার্মানির ডেপুটি হেড অব মিশন মাইকেল স্কালথেসিস এবং বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও