জামায়াত–এনসিপির সমঝোতার হিসাব-নিকাশ আসলেই মিলবে তো?

প্রথম আলো হেলাল মহিউদ্দীন প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৫

রাজনীতির মাঠে একটি সন্দেহ আগাগোড়াই ছিল। এনসিপি দলটি স্বতন্ত্র দলের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারবে তো! প্রশ্নটির উত্তর দিতেই যেন এনসিপি একটি কৌতূহলোদ্দীপক রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞের অংশীজন হয়ে গেল। দলটির মুখপাত্ররা জানাচ্ছেন—শহীদ ওসমান হাদির প্রয়াণে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তাঁরা বুঝেছেন—সমমনারা একত্র ও একজোট না থাকলে আধিপত্যবাদ ঠেকানো যাবে না। আবার একই সঙ্গে এটিও জানাচ্ছেন—এটি শুধুই নির্বাচনী জোট।


এনসিপিরও এক বড় অংশ হয়তো অপেক্ষাই করছিল বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়ার। চলতি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দলের ভেতরের প্রগতিশীল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় অংশ পদত্যাগ করছে, অথবা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার ঘোষণা দিচ্ছে। তারাও শিখছে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্র আর কখনোই সাদা-কালো হয়ে ওঠার নয়।


রাজনীতিতে জোট মানেই টানাপোড়েন। কিন্তু বর্তমান জোটটি নিয়ে বিতর্ক আলাদা। যদিও জোটবদ্ধরা বলছেন এটি নিতান্তই আসন সমঝোতার হিসাব-নিকাশের সম্পর্ক, বাস্তবতা ভিন্ন। এটি ভবিষ্যৎ রাজনীতির চরিত্র নির্ধারণের একটি বড় বাঁকই বটে।


এনসিপির জোটপন্থী অংশের কয়েকটি শক্ত যুক্তি রয়েছে। যেমন এক, পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকাতে এর চেয়ে বড় বিকল্প নেই। এককভাবে লড়াই ঝুঁকিপূর্ণ। আওয়ামী লীগ বা লীগপন্থী শক্তির ছায়া কাঠামোর পুনরুত্থান হলে ‘জুলাই বিপ্লব’ অর্থহীন হয়ে যাবে। ভয়টি খানিকটা বাস্তবই শোনায়।


দুই, পরিবর্তন ও সংস্কার ক্ষমতার অংশীদার না হলে সম্ভব নয়। বাইরে দাঁড়িয়ে নৈতিক উচ্চতা ধরে রাখা সহজ। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রকে আঁকড়ে না ধরলে কাঠামোগত সংস্কার হয় না।


তিন, জুলাই সনদের গণভোটে বিএনপির সম্ভাব্য ‘না’ ভোট ঠেকাতে হলেও এই জোট দরকার—এই যুক্তিও তারা দিচ্ছে। এই যুক্তি অবশ্য অস্পষ্ট। সনদের গণভোটের ভোট স্বতন্ত্র থাকা বা জোটে থাকা না–থাকায় ইতরবিশেষ হবে কেন?


চার, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির তুলনায় বেশি সুশৃঙ্খল। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে কর্মী-সমর্থকেরা বিনা বাক্য ব্যয়ে, বিনা দ্বিধায় সমর্থন দেবে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় এটি বড় সুবিধা দেবে। বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বেলায় এ রকম সুবিধা মেলা অনিশ্চিত।


পাঁচ, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির প্রতি ভারতের দুর্বলতা এবং পর্দার আড়ালের সমঝোতা ঠেকাতেও জোট প্রয়োজন।


ছয়, জোটের মাধ্যমেই ‘জুলাই শক্তির’ সংহতি আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত থাকবে।


আরও যুক্তি—ক. অন্যদের (জামায়াতের) প্রতিষ্ঠিত ‘পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল’ বা রাজনৈতিক সম্বল ব্যবহার করা গেলে সময়, শ্রম, অর্থ জোগাড়ের ঝক্কি কমে। নতুন দল বা নতুন শক্তির জন্য এটি বড় অনায়াস পাওনা।


খ. নির্বাচনী নিরাপত্তা ও মাঠ ব্যবস্থাপনা নতুন দলের জন্য বিপজ্জনক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার প্রার্থীদের জন্য জোট অসামান্য নিরাপত্তাকবচ।


গ. জোটের ভোট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। একই ভাবধারার বিরোধী শিবিরের একাধিক প্রার্থী থাকলে সুবিধা পায় প্রতিপক্ষ।


ঘ. জোট মানেই রাষ্ট্রক্ষমতার দরজায় কড়া নাড়া। সেটি ভবিষ্যৎ দরকষাকষিতে কাজে লাগে।


তাই এনসিপি খুব ভুল কিছু করেছে বলা যায় না। রাজনীতি শুধুই আদর্শের চর্চা নয়, পাশাপাশি বাস্তবতারও খেলা। ভালো উদ্দেশ্যের জোট সব সময় অশুভ না-ও হতে পারে। নির্বাচনী জোট গড়া দোষের কিছুও নয়। হয়তো এই জোটটি অতীতের স্বৈরাচারী জোটগুলোর মতো হালুয়া-রুটির ভাগ–বাটোয়ারার মেলা হয়েও বসবে না। হয়তো শেখ হাসিনা বা এরশাদের সময়কার জোটগুলোর তুলনায় ভিন্ন ধরনেরই হবে। তবে বাংলাদেশিরা ঘরপোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘকে অনায়াসে মেঘ বিবেচনা করাও আমজনতার স্বভাব।


জোটবদ্ধ হলেই শক্তিশালী হবে, এমনটি না-ও ঘটতে পারে। উল্টো শক্তিহীনতার কারণও হয়ে যেতে পারে। পাকিস্তানে ইমরান খান জোটবদ্ধ সরকারই গড়েছিলেন। জোটভুক্তরা একান্তই চাওয়া-পাওয়ার গরমিলের ছুতায় তাঁকে পরিত্যাগ করেছে। তাঁর স্থান এখন কারগারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও