আন্দোলন-সংগ্রামে মুখর ২০২৫-এর বিদায়

যুগান্তর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৩

আজ ৩০ ডিসেম্বর। আর মাত্র একদিন পরই আমরা খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাপী নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশের মানুষও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৬-কে বরণ করে নেবে। একই সঙ্গে ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে আগামী বছর কীভাবে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো যায়, তার পরিকল্পনা করব।


বাংলাদেশের জনগণের জীবনে বিদায়ি বছর অর্থাৎ ২০২৫ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আন্দোলন-সংগ্রাম, বিদ্রোহ-বিপ্লবে মন্দ্রিত ২০২৫ সাল বাংলাদেশিদের জন্য অন্যান্য বছরের মতো সাধারণ কোনো বছর ছিল না। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী এটাই ছিল পূর্ণাঙ্গ বছর। জনরোষে পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর এবং সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর, অর্থাৎ মোট ১৮ বছর বাংলাদেশ কার্যত স্বৈরশাসনের অন্ধকার যুগে বন্দি ছিল। মানুষের সংবিধান স্বীকৃত অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ‘অতি উন্নয়নের নামে অতি দুর্নীতি’ই ছিল বিগত সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন। একসময় বিদেশি প্রভুশক্তি আমাদের দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের দেশে নিয়ে যেত। আর বিগত সরকার আমলে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, কীভাবে একশ্রেণির বাংলাদেশি নিজ দেশের সম্পদ বিদেশে নিয়ে ভিনদেশিদের হাতে তুলে দেয়।


সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা প্রায় এক ডজন বৃহৎ উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নানাভাবে সম্পদ লুণ্ঠন কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এ মহলটিই আবার ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের নামে অর্থ বের করে নিয়ে তা উদ্দিষ্ট কাজে ব্যবহার না করে ভিন্নখাতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এমনকি এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং সেক্টরের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ নয়, দৃশ্যমান খেলাপি ঋণ মাত্র। আইনি কাঠামোর মারপ্যাঁচে যে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ খেলাপি ঋণ হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে, তা যুক্ত করলে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যাবে। বিগত সরকার আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে; কিন্তু পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।


আমরা যদি বিদায়ি ২০২৫ সালের মূল্যায়ন করি, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন আসবে, সার্বিক বিবেচনায় বছরটি কেমন ছিল? রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, বিদায়ি বছর আমাদের দেশের প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলো জনপ্রত্যাশা খুব একটা পূরণ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার একটি আপৎকালীন সরকার। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ফলে এ সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাও তুলনামূলকভাবে কম। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা থাকে, নিশ্চিতভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তা থাকে না। এ সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কারকার্য সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। বিগত সরকার আমলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সামাজিক অবস্থার কী ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণপূর্বক সংস্কারকার্য সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে; কিন্তু সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা জনগণ জানতে পারছে না।


মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি মামলায় বিতাড়িত সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কীভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।


চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। অর্থাৎ সমাজের সব স্তর থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এটি করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার এবং পরিশুদ্ধ করা দরকার। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চা, পরমতসহিষ্ণুতা না থাকলে সেই দলের পক্ষে কীভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। নির্বাচনে যদি টাকার খেলা চলে, তাহলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে খুবই কম।


অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি করতে পারেনি। বিগত সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে দেশের মধ্যে যে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি ছিল জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, দেশের মানুষ এখনো পরিপূর্ণ শান্তি ফিরে পায়নি। ফিরে আসেনি স্বস্তিদায়ক অবস্থা। গণ-অভ্যুত্থান এবং বিপ্লবের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে এর আগেও বেশ কয়েকবার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটেছে। বিপ্লব-উত্তর নতুন সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ এখনো ফিরে আসেনি। অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারছেন না। এর মধ্যে বেশকিছু টার্গেট কিলিং হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকটি নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও