তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন : রাজনীতিতে বাঁক বদলের প্রত্যাশা

যুগান্তর আমিরুল ইসলাম কাগজী প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪২

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই এক গভীর সংকট ও স্থবিরতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গণতন্ত্র, নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতা-এ মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এমন এক সময়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বা সক্রিয় উপস্থিতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বাঁক সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারেক রহমান কেবল একটি দলের শীর্ষ নেতা নন; তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজনীতির প্রতীক, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার ধারক এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের সম্ভাব্য রূপকার।


তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছেন। এ সময়টুকু তিনি শারীরিকভাবে দেশের বাইরে থাকলেও রাজনৈতিকভাবে দেশের ভেতরেই সক্রিয় ছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি দলকে সংগঠিত রেখেছেন, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরেছেন। এ দীর্ঘ নির্বাসন তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে আরও পরিণত করেছে। বিদেশে অবস্থান করেও দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রাখা তার রাজনৈতিক দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণেরই প্রমাণ।


বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই একটি কার্যকর নেতৃত্বের অভাব অনুভূত হয়েছে। দলীয় কাঠামো থাকলেও মাঠপর্যায়ে দৃঢ় নির্দেশনা ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের ঘাটতি ছিল। তারেক রহমানের সক্রিয় উপস্থিতি সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি শুধু একটি বিরোধী দল হিসাবে নয়, বরং একটি বিকল্প সরকারব্যবস্থার রূপরেখা উপস্থাপনকারী শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।


তারেক রহমানের চিন্তায় ছিল তরুণ প্রজন্ম ও নতুন রাজনীতি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ। এ তরুণ সমাজ রাজনীতিতে নতুন ভাষা, নতুন কৌশল এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশা করে। তারেক রহমান নিজেও একসময় তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক ছিলেন এবং এখনো তরুণদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে আগ্রহী। ডিজিটাল যোগাযোগ, সামাজিক মাধ্যম এবং আধুনিক রাজনৈতিক ভাষা ব্যবহারে তিনি তুলনামূলকভাবে এগিয়ে। তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের বিষয়গুলো সামনে এনে তিনি রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারেন। এর মাধ্যমে রাজনীতির গতানুগতিক ধারা ভেঙে একটি ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির ভিত্তি স্থাপিত হতে পারে।


তারেক রহমানের আগমনে গণতন্ত্র ও নির্বাচনব্যবস্থায় পরিবর্তনের আলো দেখা যাচ্ছে। প্রবাসে থেকে তিনি বারবার অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তার রাজনৈতিক অবস্থানের কেন্দ্রে রয়েছে ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের প্রশ্ন। তার আগমনের মধ্য দিয়ে বিরোধী আন্দোলন আরও সংগঠিত ও ধারাবাহিক রূপ পেতে পারে, যা সরকারকে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে চাপ সৃষ্টি করবে। যদি রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য পুনঃস্থাপিত হয়, তবে নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও সংস্কারের পথ উন্মুক্ত হতে পারে।


এ কথা ভুলে গেলে চলবে না-বর্তমান বিশ্বে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর কেবল দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির সঙ্গে তা গভীরভাবে যুক্ত। তারেক রহমান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে তার অবস্থান পশ্চিমা বিশ্বে আলোচিত। তার সক্রিয় ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে আনতে পারে, যা সরকারের ওপর গণতান্ত্রিক মানদণ্ড রক্ষার চাপ বাড়াবে। ফলে দেশের রাজনীতিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও জবাবদিহিমূলক পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।


রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বড় সমস্যা হলো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতা। তারেক রহমান বারবার রাজনৈতিক সহাবস্থান, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলেছেন। যদি তার নেতৃত্বে এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাস্তব রূপ পায়, তবে তা দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক বাঁক হিসাবে বিবেচিত হবে। রাজনীতি তখন ক্ষমতার লড়াইয়ের বাইরে গিয়ে নীতি, আদর্শ ও জনকল্যাণকেন্দ্রিক ধারায় ফিরে আসতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও