সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যুত্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের অন্যতম ভিত
১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে অবস্থানরত দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাদের কৌশলে নিরস্ত্র করার উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ঢাকা ব্রিগেড সদর দপ্তর থেকে তাদের কাছে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালি সেনারা এ নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। পাকিস্তানি কমান্ড অমান্য করে অস্ত্র জমা না দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে অভ্যুত্থানের প্রথম প্রকাশ্য ইঙ্গিত। ১৯ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আবরার বাঙালি সেনাদের অস্ত্র জমা নেয়ার উদ্দেশ্যে জয়দেবপুর রওনা হন। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছার আগেই বাঙালি সৈন্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। তাদের পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় জনতা। এ সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে জাহানজেব অস্ত্র জমা না নিয়েই ঢাকায় ফিরে যান।
জয়দেবপুরের এ ঘটনা ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালি সৈন্যদের বিদ্রোহের স্পষ্ট সংকেত। ২৫ মার্চের গণহত্যার আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ড বুঝতে পারে বাঙালি সদস্যদের আনুগত্য আর অটুট নেই। সে রাতে ঢাকায় গণহত্যা শুরু হলে সেই সুপ্ত বিদ্রোহ সশস্ত্র অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ঢাকার বাইরে অবস্থানরত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিভিন্ন ইউনিট বিদ্রোহ করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর ক্যান্টনমেন্টে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নেতৃত্ব দেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ। কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় মোতায়েন থাকা চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বিদ্রোহ সংগঠিত করেন মেজর খালেদ মোশাররফ। সিলেট অঞ্চলে প্রতিরোধে নেতৃত্ব দেন মেজর সি আর দত্ত। এসব বিদ্রোহ সরাসরি পারস্পরিক যোগাযোগহীন হলেও লক্ষ্য ছিল অভিন্ন—পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ। এ বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহগুলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আহ্বানে যুক্ত করেন মেজর জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞের পর চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।