রহস্যময় বিরতি: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভূরাজনৈতিক মাত্রা
১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তারিখটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক সুস্পষ্ট সামরিক মোড় এনে দিয়েছিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
এই দিনটি ছিল মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণের সূচনা, যা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় সৈন্যদের প্রথম প্রকাশ্য সামরিক হস্তক্ষেপকে চিহ্নিত করে। সেই দিন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ অভিযানের ফলে গরিবপুর-বয়রা এলাকায় যে সামরিক বিজয় অর্জিত হয়, সেটি শুধু সীমান্তে সামান্য অগ্রগতি ছিল না, বরং যুদ্ধের পরিণতির গতিপথ পাল্টে দেওয়ার মতো ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল।
তবু ভারত জয়ধারা বজায় না রেখে বিরতি নিল, প্রায় ১২ দিন। ইতিহাসে এই বিরতি ‘স্ট্র্যাটেজিক পজ’ নামে পরিচিত। সামরিক সাফল্যের পরও ভারত কেন ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ‘অদ্ভুত’ বা ‘কৌশলগত বিরতি’ নিয়েছিল, সেই প্রশ্নটি কেবল ঐতিহাসিক কৌতূহল নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের ভূরাজনৈতিক কৌশল ও আন্তর্জাতিক বৈধতা অর্জনের জটিল প্রক্রিয়াকে উন্মোচন করে।
ঐতিহাসিকভাবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩ ডিসেম্বর তারিখটিকে বৃহত্তর ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখা হলেও, কিছু ঐতিহাসিক ২১ নভেম্বরকেই ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ‘ডি-ডে’ হিসেবে মনে করেন। বিভিন্ন বৈশ্বিক যুদ্ধ ডেটাসেটগুলোর কোডিংয়ের ভিন্নতাও এই তারিখের গুরুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেমন হার্ভার্ড ডাটাভার্স ভারতকে ‘যুদ্ধ সূচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে, যেখানে কোরিলেটস অব ওয়ার পাকিস্তানকে সূচনাকারী’ হিসেবে দেখায় এবং যুদ্ধের শুরু ও শেষ তারিখ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে। এই ভিন্নতা প্রমাণ করে যে ২১ নভেম্বরের প্রশ্নটি ঐতিহাসিকদের মধ্যে এখনো ‘অমীমাংসিত’।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- সশস্ত্র বাহিনী দিবস
- ভূরাজনীতি