সৌদি আরবের সঙ্গে মিসর কেন গোপন সংঘাতে
গত মে মাসে রিয়াদে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-উপসাগরীয় সম্মেলনে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে আমন্ত্রণ না জানানোয় মনে হয়েছিল, সৌদি আরব ও মিসরের সম্পর্কের কোথাও সমস্যা তৈরি হয়েছে।
গত মাসে শারম আল-শেখ শান্তি সম্মেলনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অনুপস্থিত থাকায় সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে রিয়াদ ও কায়রোর মধ্যকার উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি অবশ্য দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মিসর ও সৌদি আরবই আরব ও ইসলামি দেশগুলোর দুই ডানা। দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়, আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এবং ঐতিহাসিক ও স্থায়ী।’ তবে কয়েক দিন আগে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছেন যে কিছু তৃতীয় পক্ষ (যাদের নাম তিনি উল্লেখ করেননি) ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
বিরোধপূর্ণ বিষয়
দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করতে পারে বা উত্তেজনায় রসদ জোগাতে পারে—এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে। মিসরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমর মুসা গত মে মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছিলেন, ‘সৌদি আরব ও মিসরের শক্তিশালী সম্পর্কই আরব বিশ্বের প্রধান স্তম্ভ, আর এখন এমন লোকও আছে যারা এই বন্ধন ভাঙতে চায়।’ এটি স্পষ্টভাবে দুই দেশের মধ্যে উদ্বেগের পরিবেশের দিকেই ইঙ্গিত করে।
দুই দেশের মধ্যে কী কী বিষয়ে বিরোধ আছে—তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য, স্বার্থের দ্বন্দ্ব অথবা তৃতীয় পক্ষ কারা, যারা এই বিরোধের আগুনে ঘি ঢালতে চায়।
মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই দেশের অ্যাকটিভিস্ট ও গণমাধ্যমকর্মীদের নেতৃত্বে (যাদের কেউ কেউ নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত) বাগ্যুদ্ধ ও অপমানজনক প্রচারণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে পরিষ্কার যে পর্দার অন্তরালে বাস্তবে একটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অবস্থান ও স্বার্থের জায়গায় কৌশলগত পার্থক্য ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে লড়াই এখন আর গোপন বিষয় নয়।
সিরিয়া এখন দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধের সবচেয়ে স্পষ্ট ইস্যুগুলোর একটি। বিশেষ করে রিয়াদ সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার প্রতি সমর্থন বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছে। শারা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং কয়েক মাস আগে রিয়াদ সফরের সময় তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের ব্যবস্থা করা, তা এই বিভাজনকে আরও প্রকট করেছে। সেই সফরের ফলেই দামেস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। আল-শারা ও অন্যদের নাম ‘সন্ত্রাসবাদ’ তালিকা থেকেও বাদ দেওয়া হয়। চলতি মাসে তাঁকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়।
সৌদির এই কৌশল কায়রোর হতাশা আরও বাড়িয়েছে। আল-শারার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিসর খুব সতর্কতা বজায় রেখে চলছে। আল-শারার নেতৃত্বে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। বাশার আল-আসাদ ছিলেন আল-সিসির ঘনিষ্ঠ। আল-সিসির আশঙ্কা হলো, আরব বসন্ত আবার পুনরুত্পাদিত হতে পারে এবং সিরিয়ার মডেল তাঁর নিজের শাসনের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে। এ ছাড়া আসাদবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোয় থাকা মিসরীয় নাগরিকদের কায়রোর কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আল-শারা সরকার। এটাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন আল–সিসি।