আর্থিক খাতে সুশাসন বেশি জরুরি

যুগান্তর আবুল কাসেম হায়দার প্রকাশিত: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে ব্যাংকের সংখ্যা রয়েছে ৬৭টি। তফসিলি ব্যাংক রয়েছে ৬১টি এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে ৬টি। বিগত স্বৈরশাসকের আমলে দেশে ব্যাংক অনুমোদনের হিড়িক চলছিল। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদন যেন শখের বিষয় ছিল। যাকে ইচ্ছা তাকে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর অনুমোদনপ্রাপ্তরা ব্যাংক করার আগেই বাণিজ্য শুরু করেন। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ব্যাংক অন্যদের দিয়ে দেন। অনেকে আবার বিনা পুঁজিতে ব্যাংকের মালিক বনে যান। আর ব্যাংক স্থাপনের পর শুরু করেন নামে-বেনামে ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাট। এতে বিগত ১৬ বছর ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে দুর্বল খাতে পরিণত হয়েছে।


এর মধ্যেই দেশে এখন সরকারি কর্মচারীদের জন্য আলাদা ব্যাংক গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ব্যাংকটির একটি নামও ঠিক করা হয়েছে। সেটি হলো, ‘সরকারি কর্মচারী ব্যাংক।’ জাতীয় বেতন কমিশন সরকারি চাকরিজীবীদের দেশের ‘বেতনভোগী একটি টেকসই শ্রেণি’ আখ্যা দিয়ে তাদের জন্য এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ও সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে গত ২৭ জুলাই জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।


যতটুকু জানা যায়, দুনিয়ার কোথাও এ রকম ব্যাংক নেই। দেশে যত ব্যাংক আছে, সেগুলোই বেশি। নতুন কোনো ব্যাংক করার চিন্তা থেকে সরে এসে সরকারের উচিত হবে বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেই উদ্যোগ নেওয়া।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় বেতন কমিশন এর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে একই ধরনের সুপারিশ করেছিল। বিষয়টি পরে অবশ্য আর এগোয়নি। সুপারিশটি ছিল, রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছাকাছি থাকা সরকারি জমি থেকে ২০-২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি ব্যাংক গঠন করা হবে। তখন ‘সমৃদ্ধির সোপান ব্যাংক’ শীর্ষক একটি নামও দেওয়া হয়েছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, প্রস্তাবিত ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০০ কোটি টাকা।


জাকির আহমেদ খানের নেতৃত্বাধীন নতুন জাতীয় বেতন কমিশনের কার্যপরিধিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনাসংবলিত সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কোনো কথা নেই কার্যপরিধিতে। তারপরও প্রতিবেদনে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।


বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের কোথাও সরকারি কর্মচারীদের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। যোগাযোগ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চান না। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে কিছু যুক্তি তৈরি করেছেন বেতন কমিশনের প্রভাবশালী সদস্যরা। তারা মনে করেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার-ভিডিপির জন্য আলাদা ব্যাংক রয়েছে। ফলে ২০ লাখ সরকারি কর্মচারীর জন্যও একটি ব্যাংক গঠন করা যেতেই পারে। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে বরাদ্দ থাকে এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।


আরও যুক্তি হচ্ছে সরকারি কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পান ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি হলে তাদের ব্যাংক হিসাব পালটাতে হয়, বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। শুধু সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংক থাকলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, মেয়ের বিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও থাকবে প্রস্তাবিত সরকারি কর্মচারী ব্যাংকে। এখন যেমন সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে হয়, আলাদা ব্যাংক হলে আর এ পেরেশান পোহাতে হবে না। এমনকি সুদের হারও কম রাখা সম্ভব হবে। বেতন কমিশনের সদস্যদের কেউ কেউ অবশ্য বিদ্যমান কোনো দুর্বল ব্যাংককে সরকারি কর্মচারী ব্যাংকে রূপান্তরের পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


এদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে। সেজন্য ইসলামি ধারার পাঁচটি ব্যাংক নিয়ে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও