 
                    
                    শালীনতা-অশালীনতা যখন বোঝার বিষয়
‘শালীনতা’ একটি বিশেষ্য পদ। যার অর্থ মার্জিত, ভদ্র, সভ্য আচরণ বা অবস্থা। আর ‘শালীন’ হলো বিশেষণ পদ। যার অর্থ মার্জিত, ভদ্র এবং নম্র। ‘শালীন’ নিয়ে কথা বলা একপ্রকার ‘শালীনতা’ হলেও ইদানীং চারপাশে ‘অশালীন’ ভাবে তা প্রকাশ করা হচ্ছে। অধিকাংশ যার শিকার বা ভিকটিম হয়ে থাকে নারী।
একজন নারী যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন তার সন্তান নিন্মাঙ্গ পথ দিয়েই এই পৃথিবীতে আসে। সে সন্তান হোক পুরুষ বা নারী। পুরুষ হলে বয়সকালে সে হয় বিবাহিত এবং একদিন তার স্ত্রী মায়ের ন্যায় একইভাবে প্রসব করে তারই ঔরসজাত সন্তান। তাহলে ঘুরেফিরে তো জীবনের সেই একই চক্র। চক্রব্যূহ থেকে কেউ কী অস্বীকার করতে পারে? নাকি অস্বীকার করা সম্ভব?
অথচ ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তা-ঘাটে, বাসে-লঞ্চে সর্বত্র সর্বাধিসংখ্যক নারীকে হতে হয় পুরুষ দ্বারা অশালীনভাবে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। ঘরে স্বামীসহ অনেক সময় আত্মীয়স্বজন বলে, বউ কেন মোটা! বিয়ের বছর তিন বছর যেতে না যেতেই কর্মক্ষেত্রের কলিগরা ঠাট্টা করে বলে, বাচ্চা নিচ্ছো না কেন? বাসের অপরিচিত প্যাসেঞ্জার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে, পোশাক এমন কেন?
রাস্তায় অকস্মাৎ এক বয়স্ক মহিলা হেঁচকা টানে দাঁড় করিয়ে, নিজ দায়িত্বে শরীরের ওড়না মাথার ওপর তুলে দিতে দিতে বলে, মাথায় কাপড় নেই কেন?
ট্র্যাফিক সিগন্যালে বাইকে বসে থাকা অপরিচিত যুবক ছেলেটা পাশের বাইকের স্বামীর পেছনে বসে থাকা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে, হাতকাটা পোশাক পরে বাজারের মেয়ে সাজছে!
সদ্য দাড়িগোঁফ ওঠা কিশোর প্রায় নানী/দাদীর বয়সী নারীর প্রোফাইলে কমেন্ট করে, ওয়াও সেক্সি...
এমন অসংখ্য কথা শুনতে শুনতে নারীরা তাৎক্ষণিকভাবে মর্মবেদনায় আহত হয়। ট্রমায় কাটে কয়েকটা দিন। মুখ বুজে হজম করে ‘কয়েকটা দিন’। তার এই ‘চুপ’ থাকাকে ধরে নেয় ‘দুর্বলতা’।
উৎসাহ আরও বেড়ে যায়, আরও বলতে থাকে, দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অশালীনতার মাত্রা অতিক্রম করে আরও নারীদের নোংরা, অশ্লীল বাক্য ছুড়ে দিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত করে তোলে।
কেন? শালীন বিষয়ক শিক্ষা দিতে গিয়ে তুই/তোরা/আপনারা যে অশালীন কুৎসিত চেহারা দেখিয়ে ফেলেন তাতে পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ জাগে। মনে হয় জানোয়ারগুলো নারীদের কেবল মাংসপিণ্ড দেখে। অনেক বীরপুরুষ তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে ফেলে, ছবি পাঠালাম এইভাবে তোমাকে চাই।
এই যে ইনিয়ে বিনিয়ে বা কখনো নির্লজ্জের মতো অন্য নারীদের ‘ইনডিসেন্ট’ বা ‘অশালীন’ কথা ও প্রস্তাব যে মানুষগুলো দিয়ে থাকে, মূলত সেই মানুষগুলোও ‘শালীনতা’ নিয়ে কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। সম্ভবত ভয়ে, নিজে যা করে তা যেন তার বউ/বোন/কন্যাকে কেউ বলার সুযোগ না পায়। নেকড়ে মাংসখেকোর মানুষ বনের রাজা ‘সিংহ’ সাজার অপচেষ্টা।
একজন কিশোরী যখন ঘর থেকে বের হয়, তার অভিভাবক দেখে কন্যা কী পরেছে। স্বামীর সাথে ঘুরতে বের হওয়া স্ত্রী, স্বামীর পছন্দের রঙের পোশাকটা পরেই সেজেগুজে বের হয়। প্রেমিক মুগ্ধ করতে প্রেমিকা পরিপাটি হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তাদের অপদস্থ করার রাইট বা অধিকার এই বাংলাদেশের আর কোনো নাগরিকের নেই।
কারও খেয়ালখুশি মতো নারী পোশাক পরবে না, জীবনযাপন করবে না বা চলাফেরা করবে না। আপনার পছন্দ না হতেই পারে। আপনার সবকিছুই যে বাকিদের পছন্দ হচ্ছে সেটাইবা কে বলল।
নিয়ম হলো, নিজের এবং সন্তানের মন ও চোখ শালীন করা। আপনার বোঝার বয়সে শিশুকে আকাশ থেকে টপ করে পড়ার গল্প না শুনিয়ে, গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার জার্নির কথা শোনান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বায়োলজিটা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে পড়ান। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত জ্ঞান অনেক ভ্রান্তি দূর করতে পারে। সন্তানকে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যুক্ত করুন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শালীনতা
- নারীদের পোশাক
- অশালীন আচরণ
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg)