গুজবের সেকাল ও একাল

www.ajkerpatrika.com ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৯

গুজব হলো কোনো ঘটনাপ্রবাহের সংযোগ, যা জনমুখে রটিত হয়। কিন্তু যথার্থতা যাচাই-বাচাইবিহীন ঘটনা নানা দিকে ডাল-পালা ছড়ানো হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই এর যথার্থতা মেলে না। তাই এটি প্রায় ক্ষেত্রে অপতথ্যের বিস্তার ঘটায়। সামাজিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে গুজব এমন একটি বিবরণ, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কল্পনারও মাত্রা ছাড়িয়ে দেয়।


গুজব বিভিন্ন রূপে আসতে পারে, যেমন: কতিপয় ঘটনাপ্রবাহ শোনা গেছে বা প্রত্যক্ষ করেছে, কিন্তু তার আসল রূপ অস্পষ্ট, ওইরকম একটি আখ্যান। ঘটনাচক্রের কিয়ৎ বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে, কিন্তু তার সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত অপতথ্য যুক্ত করে প্রচার করা হয়। গুজব সচরাচর জনমনে ভয়, সন্দেহ তৈরি করে। ফলে এটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে থাকে। গুজব হরেক রকম হতে পারে।


ধর্ম নিয়ে একটি গুজবের ঘটনা মধ্যযুগের সময়ের ছিল। তখন গুজব ছড়িয়েছিল রোগমুক্তির আশায় ইহুদিরা খ্রিষ্টান শিশুদের রক্তে গোসল করে, যার ফলে বহু দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। ১৩২১ সালে ফ্রান্সে গুজব রটে যে, শরীরের মাংস পচে যাওয়া বা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ইহুদি রোগীরা ইচ্ছাকৃতভাবে কুয়ার পানিতে এই রোগের জীবাণু মিশিয়ে দিয়েছে। আরও বলা হয়, মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইহুদিদের অর্থায়নে কুষ্ঠরোগীরা পানিতে এই রোগের জীবাণুর বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। এ কাজে স্বয়ং শয়তান জড়িত বলেও অপপ্রচার চালানো হয়। এই গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা শুরু হয়। জনতার রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে বহিরাগত, বিদেশি, ভিক্ষুক ও তীর্থযাত্রীদের ওপরও।


ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে আড়াই থেকে ৫ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। সে সময়ও গুজব রটেছিল, এ জীবাণু জার্মানির সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য আবিষ্কার করেছিল এবং অনেকেই বিশ্বাস করতেন এই তত্ত্ব। সে সময় বিশ্বজুড়েই নেমেছিল অন্ধকার। এখনকার মতো যোগাযোগব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না সে সময়। তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হয় অধিক।


মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে ইহুদিরা খ্রিষ্টান শিশুদের বলি দেয়। কালো প্লেগের যুগে এই ধরনের গুজব বিশাল ক্ষতি ডেকে এনেছিল। জিপসি, কুষ্ঠ ও সোরিয়াসিসের রোগীদের মেরে ফেলা হয়েছিল অকাতরে। সে সময় অসংখ্য মানুষকে নানা কায়দায়, বিশেষ করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।



এখন কথা বলব সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি গুজব নিয়ে, যা স্মৃতিতে এখনো জাগরিত আছে। ২০১৫ সালে ভ্যাঙ্কুবারে ট্রেড কনফারেন্সে বিল গেটস বলেছিলেন, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে যদি কোনো কারণে ১ কোটি মানুষ মারা যায়, সেটি কোনো সংক্রামক ভাইরাসের কারণেই হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যেহেতু পাঁচ বছরের মাথায়ই সেটা ঘটেছে, তাই একদল দাবি করছে যে, বিল গেটসই করোনাভাইরাস তৈরি করেছেন, পরবর্তী সময় এর ভ্যাকসিন বিক্রি করে টাকা কামানোর জন্য। যদিও বিল গেটস তাঁর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব অর্থ দান করে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণে।


কয়েক বছর পূর্বে বাড্ডা থানায় করা এক মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রেনু নামের এক ভদ্রমহিলা তাঁর মেয়েকে ভর্তি করার জন্য স্কুলে যান। কিন্তু মানসিক অসুস্থতার কারণে তাঁর আচরণ অস্বাভাবিক ছিল। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ করছিল। মামলায় বলা হয়েছে, অতর্কিতভাবে ওই নারীকে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক, উৎসুক জনতাসহ অনেকে পিটুনি দেয়। এতে সেই নারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।


পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ও একধরনের গুজব মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য শিশুদের মাথা লাগবে। এমন একটি গুজব একটি মহল ছড়িয়েছিল। এই গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন।


বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান, যা এ বছরের ২১ জুলাই ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হলে দেশব্যাপী গভীর শোক বিরাজ করছিল। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিষ্পাপ অনেক শিক্ষার্থীর জীবনাবসান ঘটে এবং অনেকে আহত হয়। কয়েকজন শিক্ষকও মৃত্যুবরণ করেন। এমন একটি বিপর্যয়কে কেন্দ্র করেও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সমাজের কিছু মানুষ গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে।


২০২০ সালে করোনাভাইরাস আক্রমণের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, চীন থেকে এর ভাইরাস ছড়ানো হয়েছে। তাঁর দাবি ছিল, করোনাভাইরাস সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ব্যাপার না। চীন তার অস্ত্র গবেষণাগারে এই ভাইরাসটি উদ্ভাবন করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই গুজব প্রচলিত ছিল। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন বলেছিল, এটা চীন থেকে বিস্তার ঘটেনি। তারপরও এর রেশ ছিল অনেক দিন।


গুজবের সঙ্গে ধর্মীয় সম্পৃক্ততা থাকলে তা অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যুগে যুগে এ ধরনের গুজব দেখা যায়। এমনকি এসব গুজবের ওপর ভিত্তি করে অনেক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও