
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, নাকি অনন্ত নাকবার পথ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নির্দেশনা ধরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। নানা অস্পষ্টতা থাকার পরও চুক্তি এখনো টিকে আছে। কিন্তু গত মঙ্গলবার হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফিরিয়ে দিতে দেরি করছে, এই অজুহাতে তেল আবিব গাজায় ত্রাণ প্রবেশের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। আর এখানেই মূলত পরীক্ষার মুখে পড়ে গেছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ।
পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবস্থান এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের বসতি উচ্ছেদ ও ভাঙচুরের গতি আরও বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ট্রাম্প-সমর্থিত এই চুক্তি শান্তি ফেরাতে পারবে, নাকি আবারও ফিলিস্তিনিরা এক অন্তত নাকবা তথা মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে? কারণ, ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের চালানো গণ-উচ্ছেদ ও জাতিগত নিধনের করুণ ইতিহাসকে বলা হয় নাকবা তথা মহাবিপর্যয়। একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে যে ট্রাম্প-সমর্থিত এই চুক্তি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আসলে কতটুকু সহায়ক হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত চুক্তিতে অনেকগুলো অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের মূল চাওয়া অনুসারে—হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্রীকৃত করা হবে? আদৌ হামাস এই অবস্থান মানবে কি না? যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁরা ‘আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী অস্ত্র’ পরিত্যাগে প্রস্তুত এবং কেবল নিজেদের ‘আত্মরক্ষা’র জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র রেখে দেবেন। তবে এটি ইসরায়েল মানবে কি না, তা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। দেশটি বলেছে, গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাওয়া ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা দিনে ৬০০ থেকে কমিয়ে ৩০০ করা হবে। পাশাপাশি মিসর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ গুরুতর ঝুঁকির মুখে।
মূলত চুক্তিতে অনেক কিছু অস্পষ্ট থাকার কারণেই এমনটা ঘটার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার শক্তিটাই আবার তার দুর্বলতা। এই চুক্তির মূল দলিলটিতে অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষই বিস্তারিত শর্তে একমত হয়নি। এই অস্পষ্টতাই হয়তো দুই পক্ষকে সই করাতে সাহায্য করেছে, কিন্তু এর অর্থ হলো—সবচেয়ে কঠিন কূটনৈতিক কাজ এখনো বাকি।
এই সাফল্য টেকসই শান্তির পথে কত দূর এগোবে, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা চাপ বজায় রাখতে পারবেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর।
ইসরায়েল ও হামাস এখনো ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অনেক বিষয়ে একমত হতে পারেনি। আগামী বছর ইসরায়েলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই নেতানিয়াহু তাঁর ডানপন্থী জোট টিকিয়ে রাখতে গেলে নীতি বদলাতেও পারেন। নেতানিয়াহুর জোটের প্রভাবশালী দুই সহযোগী—ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মতরিচ—হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমালোচনা করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির তো সরকার ছাড়ার হুমকিও দিয়েছেন।