শিশুর প্রতি সহিংসতা: ক্ষমাহীন অপরাধ

www.ajkerpatrika.com ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২০

আজকে সারা বিশ্বে শিশুরা ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার। এটা যে শুধু যুদ্ধ কিংবা সংঘাতসংকুল অঞ্চলে ঘটছে, তা-ই নয়, অন‍্যান‍্য অঞ্চলেও এ-জাতীয় সহিংসতা ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সূত্র অনুসারে, গত বছর বিশ্বব‍্যাপী ২২ হাজারের বেশি শিশুর কুশল এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে, যার মধ‍্যে প্রায় ৮ হাজারই ঘটেছে অধিকৃত ফিলিস্তিনে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বব‍্যাপী শিশু নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর মধ‍্যে শিশু ধর্ষণ এবং শিশুদের অন‍্য রকমের যৌন নির্যাতন ৩৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নয়, অন‍্যান‍্য অঞ্চলেও নিত‍্যদিন ছেলেশিশুদের তুলনায় মেয়েশিশুরাই নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার বেশি হয়।


যুক্তরাজ‍্যে প্রতি চারজন শিশুর মধ‍্যে একজন নিপীড়ন বা নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। নাইজেরিয়ায় প্রতি ১০ জন শিশুর মধ‍্যে ছয়জন কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে, ১৫-১৯ বছরের কিশোরীদের মধ‍্যে দেড় কোটি কিশোরী তাদের জীবনকালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।


বাংলাদেশেও শিশু নিপীড়ন ও নির্যাতন একটি আশঙ্কাজনক সমস‍্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দুটি সমীক্ষা এবং সেই সঙ্গে ‘বাংলাদেশের পোশাককর্মীদের শিশুসন্তান-সন্ততিদের নিরাপত্তার জন‍্য স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ‍্য কৌশলসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একটি আশঙ্কাজনক চিত্র বেরিয়ে আসে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুসারে, এ বছরের গত ৯ মাসে ৩৫৯ জন মেয়েশিশু ধর্ষিত হয়েছে, যে সংখ্যা ২০২৪ সালের সারা বছরের মোট সংখ‍্যার বেশি। এর মধ‍্যে মাত্র ৩০০ ঘটনা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে। তার মানে, ৫৯টি ঘটনার ব‍্যাপারে কোনো ব‍্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। যারা ধর্ষিত হয়েছে, তাদের বয়সের দিকে তাকালে শিউরে উঠতে হয়। নির্যাতিত মেয়েশিশুদের মধ‍্যে ৪৯ জনের বয়স ৬ বছরের কম, ৯৪ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ‍্যে এবং ১০৩ জনের বয়স ১৩-১৯ বছর। ১৩৯টি মেয়েশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। একই সময়কালে ৭ থেকে ১২ বছরের ৩০ জন ছেলে ধর্ষিত হয়েছে। যার মধ্যে ২০টি ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সমীক্ষার উপাত্তগুলো নেওয়া হয়েছে দেশের ১৪টি জাতীয় পর্যায়ের দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে। এ সমীক্ষা অনুসারে, শুধু গত সেপ্টেম্বরে সারা দেশে ৯২ জন মেয়েশিশু নানান রকমের নিপীড়ন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তার মধ‍্যে ২৮টি ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে। পোশাককর্মীদের সন্তানদের নিরাপত্তা বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বলা হয়েছে, দেশের ১০ জন মেয়েশিশুর মধ‍্যে ৯ জনই নানান রকমের শারীরিক শাস্তি বা নিপীড়নের শিকার হয়। সেই সঙ্গে এটাও উঠে এসেছে যে ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর নারী নিপীড়নের ঘটনা তিন-চতুর্থাংশ বেড়ে গেছে। সারা দেশে শিশুদের জন‍্য গঠিত আদালতগুলোতে ২৩ হাজার মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে।


যদিও উপর্যুক্ত তিনটি গবেষণায় ব‍্যবহৃত গবেষণা-প্রণালির মধ‍্যে ভিন্নতা আছে, কিন্তু এর প্রতিটিই কতগুলো আশঙ্কাজনক প্রবণতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। প্রথমত, শিশুদের নির্যাতন নানানভাবে হতে পারে—শারীরিক শাস্তি থেকে মানসিক নির্যাতন, এমনকি যৌন হয়রানি কিংবা ধর্ষণও। দ্বিতীয়ত, সব বয়সের শিশুরা নির্যাতিত হতে পারে, এমনকি একেবারে ছোট্ট শিশুও। তৃতীয়ত, নিজ গৃহ কিংবা নিজ বিদ‍্যালয় বা মাদ্রাসাও শিশুদের জন‍্য নিরাপদ স্থান নয়। কারণ, বহু ক্ষেত্রে অপরাধীরা নির্যাতিত শিশুদের নিকটাত্মীয়, স্বজন, প্রতিবেশী কিংবা শিক্ষক। চতুর্থত, নানান সময়ই ব‍্যক্তিগত কিংবা সামাজিক মানসিকতা, প্রতিবন্ধকতা, পারিবারিক চাপ কিংবা অনিরাপত্তার আশঙ্কার কারণে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপিত হয় না। পঞ্চমত, শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার সমাধান করতে দেশের বিচারব‍্যবস্থা চরমভাবে ব‍্যর্থ হয়েছে। শিশু নির্যাতন বিষয়ে আমাদের বিচারব‍্যবস্থায় রাশি রাশি জমে ওঠা অনিষ্পন্ন মামলাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।


এসব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয়—এক. শিশুদের, বিশেষত মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কেন বাড়ছে এবং দুই. এটা প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে। প্রথম প্রশ্নটির কোনো সোজা জবাব নেই। বুঝতে হবে, যেখানে অতি ছোট শিশুদেরও এ রকম হীন অপরাধ থেকে রেহাই দেওয়া হয় না, সেখানে সমাজে একটি গভীর নৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক পচন ঘটছে। কারা এসব অপরাধে অপরাধী এবং কী কারণ তাদের এমন জঘন‍্য অপরাধে উদ্বুদ্ধ করে?


মেয়েশিশুদের প্রতি সহিংসতার পেছনে থাকে চরম বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিকতা, যেটা প্রায়ই পুরুষ আরোপিত অবদমন এবং আক্রমণের মাধ‍্যমে প্রকাশ পায়। সমাজে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ‍্যে একটি স্বাভাবিক সুস্থ সম্পর্কের অনুপস্থিতির কারণে অবদমিত যৌনতার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ-জাতীয় অবদমনও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিভিন্ন তথ‍্যপ্রযুক্তি মাধ‍্যমগুলোতে পর্নোগ্রাফিসহ নানা রকমের অশ্লীল বিষয়বস্তু এখন বিস্তৃতভাবে লভ‍্য। এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ছেলেদের মনোজগতে মেয়েদের ব‍্যাপারে একটি অস্বাভাবিক, অসুস্থ বিকৃত মানসিকতার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উপাত্ত এটাও দেখাচ্ছে যে নারীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধে অপরাধীদের বয়সকাল ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ‍্যে। সেই সঙ্গে শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র এবং ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের ক্রমাগত সাফল‍্য এবং অর্জন ছেলেদের মনে একটি নিরাপত্তাহীনতা ও হীনম্মন্যতার জন্ম দিচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতার এই পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের হতাশা এবং জীবনের ব‍্যর্থতা। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মেয়েদের প্রতি ছেলেদের ঘৃণা আর সহিংসতার মাধ‍্যমে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও