যে সহে সে রহে

www.ajkerpatrika.com মাসুদ উর রহমান প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৬

১. ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ভোগ নিরসনে এসে নিজেই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও আছেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনব্যবস্থা এবং সড়ক পরিবহন খাতের সমস্যা দূরীকরণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাজ করা।


ছয়-সাত বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের অতি ধীরগতিতে অবর্ণনীয় কষ্ট করে আসছে। গরমে ঘেমে, রোদ-বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে অনেক প্রবাসী যেমন তাঁদের বিদেশগামী ফ্লাইট মিস করেছেন, তেমনি অনেক অসুস্থ মানুষও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বেহাল সড়কে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে এবং এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এবং অফিসগামী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একটি উন্নয়ন প্রকল্প এত দীর্ঘদিন ধরে চলার নজিরও সম্ভবত এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম।

গত বছর থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্প। দুই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধাক্কাধাক্কিতেই যৌথ অধিকারে থাকা আশুগঞ্জ-বিশ্বরোডের অবস্থা হয়েছিল সবচেয়ে বেশি নাজুক। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সড়কে যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হয়, সেটি সম্ভবত প্রকল্প পরিচালকেরা জানেনই না। ফলে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার এই অংশে, সেই অংশে অর্থাৎ অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নকাজ শুরু করে। এই অপরিকল্পিত সড়ক প্রশস্তকরণের কারণে সাত বছর ধরে আশুগঞ্জ থেকে কসবার তিনলাখপীর পর্যন্ত দীর্ঘ পথে মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি এ বছরের শুরু থেকে আশুগঞ্জ-মাধবপুর অংশে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার সড়কপথ অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায়, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের অবহেলায় রাস্তায় চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছিল। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হতো জনসাধারণকে। অবস্থা এতই বেগতিক হচ্ছিল যে এক মাস ধরে ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগ একেবারে ভেঙে পড়েছিল। সড়কপথের এই বাড়তি চাপ এসে পড়ল রেলপথের ওপর। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে, দরজার হ্যান্ডেলে ঝুলে যাতায়াত করা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্যে হয়তো টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারই জেরে কিনা সড়ক ও সেতু উপদেষ্টার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের দিন-তারিখ ঠিক হলে দ্রুত রাস্তার সংস্কারে যেন হুলুস্থুল পড়ে যায়। উপদেষ্টাকে খুশি করতে ত্বরিত রাস্তা সংস্কারে নেমে আসে সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু তাদের শেষরক্ষা হয়নি। তারা যানজটমুক্ত সড়ক উপহার দিতে পারেনি উপদেষ্টাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা উপদেষ্টা যানজটে পড়ে শুধু যে শারীরিক কষ্ট করেছেন, তা-ই শুধু নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ট্রলের শিকার হয়েছেন।


এত দিন দুর্ভোগে কষ্ট করা মানুষগুলো উপদেষ্টার এই কষ্ট দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে হয় মনের ঝাল মিটিয়েছেন অথবা সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেছেন।


অবশ্য রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীদের এমন অবস্থা কখনোই হতো না, যেমন অতীতে হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের আগেই স্থানীয় নেতা-কর্মীরা রাস্তা পরিষ্কার করে একেবারে নির্বিঘ্নে মন্ত্রীকে যথাযথ গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন। অতীতে ভালো রাস্তায়ও মন্ত্রী-এমপিদের অনেককে সহজ যাতায়াতের জন্য উল্টো পথে চলে কিংবা রাস্তা আটকে যানজট তৈরি করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে ধুলা উড়িয়ে বুক ফুলিয়ে চলে যেতে দেখেছি। তখন কি মানুষের এ রকম কষ্ট হতো না? বড় নেতাদের দুঃশাসন আর পাতিনেতাদের অতি বাড়াবাড়ির কারণে সাধারণে জন্ম নেওয়া ক্ষোভের প্রকাশই কিন্তু গত আগস্টে সরকার পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। আজ যাঁরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বা যাঁরা অচিরেই সরকারে আসবেন মনে করে গোঁফে তা দিচ্ছেন, তাঁরা কি জনগণের সেই বিষাক্ত নিশ্বাসের আঁচ অনুভব করতে পারছেন?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও