ভুল স্বীকার করলেই কি রাজনীতি শেষ হয়ে যায়

প্রথম আলো মহিউদ্দিন আহমদ প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৪৩

রাজনীতি একটি শাস্ত্র বটে। কিন্তু শাস্ত্র মেনে রাজনীতি হয় না। এর নিজস্ব একটি ভাষা আছে। যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ, অনুরাগ-বিরাগ ইত্যাদি অনেকটাই নির্ধারণ করে দেয় রাজনীতি কোন পথে, কোন ছন্দে, কোন গতিতে চলবে।


রাজনীতি করতে তাই পলিটিক্যাল সায়েন্স বা রাজনীতিবিজ্ঞানের ডিগ্রি না হলেও চলে। এমনকি বকলম হলেও অসুবিধা নেই। আমাদের নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের জন্য আবেদনপত্রে কয়েকটি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। তার মধ্যে একটি হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা। এই যোগ্যতার অর্থ হলো, প্রার্থীর পড়াশোনা কোন স্তরের, তিনি কী ডিগ্রি পেয়েছেন। কেউ কেউ তথ্য পূরণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, তিনি ‘স্বশিক্ষিত’। কথাটা জুতসই। ডিগ্রির একটা বাজারমূল্য আছে। কোনো ডিগ্রি নেই—এ কথা জানাজানি হয়ে গেলে ভাবমূর্তির সংকট হতে পারে। তাই স্বশিক্ষিত বলা। কেউ কেউ অবশ্য ফান করেও এটা লিখতেন।


রাজনীতির লাইসেন্স নেয় যারা, আমরা তাদের বলি রাজনৈতিক দল। দলের এক বা একাধিক শাস্ত্র আছে। দল কীভাবে চলবে, সে জন্য আছে গঠনতন্ত্র বা দলীয় সংবিধান। দল কী চায়, কোথায় যেতে চায়, সে জন্য আছে ঘোষণাপত্র। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও পবিত্র শব্দমালায় সাজানো হয় এই ঘোষণাপত্র। এখানেই শেষ নয়। নির্বাচন এলে নতুন করে অনেক কিছু বলতে হয়। এর নাম ইশতেহার বা ইস্তাহার, যে বানানেই লেখা হোক না কেন। সেখানে থাকে একটি প্রলম্বিত মুখবন্ধ বা ভূমিকা। সেখানে বলা হয়, এই একটিমাত্র দল, যারা
ধরায় এসেছে ত্রাতার ভূমিকায়। তারাই মানুষের সত্যিকারের বন্ধু। বাকি সবাই শত্রু। এরপর থাকে প্রতিশ্রুতির এক দীর্ঘ তালিকা।


দলগুলোকে মোটাদাগে দুভাগ করা যায়—পুরোনো ও নতুন। পুরোনো দলগুলো তুলে ধরে তাদের অতীতের কাজকারবারের ফিরিস্তি। কখনো ক্ষমতায় গিয়ে থাকলে তার অর্জন আর সফলতার বয়ান। সেখানে সবকিছু ভালো। তারা কখনো কোনো খারাপ কাজ করেনি। কাউকে কষ্ট দেয়নি। কোনো কটুকথা বলেনি। সরকারি দপ্তরে কোনো ফাইল আটকে থাকেনি। চারদিকে শুধু সুখ আর সুখ। তাদের বিরুদ্ধে কোনো খারাপ কাজের অভিযোগ থাকলে সেটি হচ্ছে দুষ্ট লোকের অপপ্রচার।


দল পুরোনো, কিন্তু ক্ষমতার উঠানে কিংবা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করলেও খাসকামরায় কখনো ঢুকতে পারেনি, তাদের ওয়াজ এ রকম: নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ায় আমরা হেরেছি বা আমাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি একবার ক্ষমতায় যেতে পারি, তাহলে দেশটা সোনায় মুড়ে দেব। দেশে কোনো সমস্যা থাকবে না। চারদিকে শুধু শান্তি আর শান্তি।


কেউ কেউ এ কথাও বলেন, এই ঘুণে ধরা বুর্জোয়া সমাজে গরিবের সরকার হবে না। তাই বিপ্লব করতে হবে। এ দেশে বিপ্লবীর সংখ্যা মশা-মাছির চেয়েও বেশি। এমন কোনো বছর নেই, যে বছর বিপ্লবীদের দল ভাঙেনি। তারা অনবরত ভাঙে। তারপর ভাঙা টুকরাগুলো মিলে ঐক্য গড়ে, জোট বানায়। সেই জোট আবার ভাঙে। একেকটা টুকরা নানান ‘বুর্জোয়া’ দলের সঙ্গে জোটে। কারণ হিসেবে বলে, এটা হচ্ছে কৌশলগত ঐক্য। ওই যে মাও সে–তুং একদা চিয়াং কাইশেকের সঙ্গে ঐক্য করেছিলেন!


একেবারে আনকোরা দল আছে কিছু। তাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নেই। এরা আগে কোনো দলের সঙ্গেও ছিল না। তারা রাজনীতির জলে সাঁতার কাটছে। হাবুডুবু খাচ্ছে। অতল জলে পায়ের নিচে মাটি পাচ্ছে না। তাদের কারও কারও অতীতে কালো দাগ নেই। রাজনীতির কূটচালে অভিজ্ঞতা নেই। কখন কী বলতে হয়, জানে না। একদিন মুখ ফসকে একটা কথা বলে ফেলে। পরদিন বুঝতে পেরে বলে উল্টো কথা।


আমাদের দেশে একটা গোষ্ঠী আছে। আমরা তাদের বলি ফেসবুকার বা টিকটকার। তারা বেশ সেয়ানা। এই একটা প্রযুক্তি, যেখানে আমাদের কিশোর-তরুণদের পারঙ্গমতা সিলিকন ভ্যালি কিংবা নাসার বিজ্ঞানীদেরও হার মানায়! কে, কবে, কোথায় কী বলেছে, তার রেকর্ড রেখে দেয়। সুযোগমতো সেটা ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
 আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার কথা কী আর বলব! এখানে যত ‘অসামাজিক’ কাজ হয়, তাতে অ্যান্টিসোশ্যাল মিডিয়া নাম দিলেও ভুল হবে না। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কে কাকে ওঠাবে, নামাবে, বাঁচাবে, ঠেঙাবে, মারবে বলা মুশকিল।


একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আমি একটা লেখা লিখেছিলাম ১২ বছর আগে। এখন লিখছি অন্য রকম। তো এক ফেসবুকার আমার টুঁটি চেপে ধরল—তুমি তখন ওই কথা বলেছ, এখন কেন এ কথা বলো? এই ১২ বছরে যে কত বই, কত তথ্য-উপাত্ত হাতের নাগালে এসেছে এবং সেসব জেনে-বুঝে আমি যে আগের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছি, এটা তাকে বোঝাই কী করে? কারণ, সে তো বদ্ধ জলাশয়ের জীব। সেখানে স্রোত নেই। তাই সে মননে-মগজে বাড়ে না। স্কুলে ক্লাস সেভেনে উঠে আমি অ্যালজেব্রা শিখতে শুরু করি। আমাকে কেউ যদি বলে, তুমি ক্লাস ফোরে কেন এটা শিখলে না!


এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রসঙ্গ এসে যায়। একটা দল একসময় ক্ষমতায় ছিল। ওই সময় দলটি অনেক ভুল করেছে, খারাপ কাজ করেছে। দলটি এখনো রাজনীতি করে। আবারও ক্ষমতায় যেতে যায়। ক্ষমতায় গিয়ে আবারও সে খারাপ কাজগুলো করবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? এখানে দলকে আত্মবিশ্লেষণ করতে হয়। কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। যে কাজ করে না, তার ভুল হয় না। তো ভুল হয়ে থাকলে সেটি স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও