ইতিহাসের অম্লান নাম ‘ভাষা–মতিন’

প্রথম আলো এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১০

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণার প্রথম ধাপই হচ্ছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। সেই ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে বাঙালি স্বপ্ন দেখেছে স্বাধীনতার আর পেয়েছে মুক্তিসংগ্রামের উজ্জীবনী শক্তি ও সাহস। ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ এলে অন্যতম যে নামটি সবার মনে পড়ে, সেটি হলো—ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, যিনি ‘ভাষা–মতিন’ নামেই পরিচিত আমাদের কাছে।


২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর অবসান হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের সেই অন্যতম সংগঠক আবদুল মতিনের ৮৮ বছরের বর্ণিল জীবনের। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় দেড় মাসের বেশি সময় ধরে পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান অনন্তযাত্রায়।


সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালিয়া গ্রামে ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর জন্ম নিলেও পরবর্তী সময়ে বাবার কর্মের সুবাদে এই কিংবদন্তির ছেলেবেলা কেটেছে দার্জিলিংয়ে। সেখানে স্কুলজীবন শেষ করে ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবদুল মতিন।


ভাষা আন্দোলনের পর আবদুল মতিন ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতিও হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন আবদুল মতিন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন আবদুল মতিন। ১৯৫৮ সালে মতিন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) গঠন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি পুনর্গঠিত হলে আবদুল মতিন আবারও এতে যোগ দেন।


ভাষা আন্দোলন বিষয়ে আবদুল মতিনের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ ও ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। এ ছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’। ঢাকার মোহাম্মদপুরে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন দুই মেয়ের বাবা আবদুল মতিন। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই নিজের দেহ তিনি দান করে গেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য, আর চোখ দান করে গেছেন সন্ধানীকে।


আবদুল মতিন নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সারাটা জীবন অতিক্রম করেছেন। তিনি যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাঁকে ক্ষমতা আকৃষ্ট করতে পারেনি। শুধু ক্ষমতাই রাজনীতির উদ্দেশ্য হতে পারে না—জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটারই প্রমাণ রেখেছেন তিনি। সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের মানবতাবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন তিনি।
মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের জন্মগ্রহণকারী ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন আমাদের জাতীয় রাজনীতির অহংকার আর দেশপ্রেমিক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতির আলোকবর্তিকা। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই অতিক্রম করেছেন সারাটা জীবন। তিনি যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আজও বাংলাদেশে একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মাওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ভাষা–মতিন রাজনীতি করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। ক্ষমতার মোহ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও