
চলে গেলেন ইতিহাসের সাক্ষী ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক
চলে যাচ্ছের ইতিহাসের সাক্ষীরা!
বাতিঘর আজ নিবু নিবু! কাণ্ডারি হবেন কে? ইতিহাসের ধারবাহী-ভারবাহী প্রজন্ম তৈরি হয়েছে কি? কিংবা আদৌ কেউ আছেন কি? ইতিহাস বিমুখ বাঙালির, জাতিসত্তার পরিচয় ভোলাতে দেশি বিদেশি প্রলোভন, অবাধ হস্তক্ষেপ, সুযোগ-সুবিধার ছড়াছড়িতে একটি জাতির কয়েক প্রজন্ম ব্যস্ত, যারা নিজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নের চেয়েও আত্মস্বার্থের ঘোরতর মোহে আচ্ছন্ন সেই তারা কি হতে পারেন ইতিহাসের ধারক-বাহক?
হালের বাস্তবতায় বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়ের জন্মগর্ভ ঐতিহাসিক ও মহান একাত্তরের সম্মুখ সমর আর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে যেভাবে পথভ্রষ্টতা ও বিকৃতির ছড়াছড়ি দেখেছি তাতে তো ভরসার কোন কাঁধ দেখিনি। যাদের ওপর নির্ভার থাকবে এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য?
রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্যও যেভাবে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে সেখানে শক্ত ও শক্তিশালী বোধের অসীমে প্রাণমন লয়ে লড়াকু সৈনিকের দেখাও কম মিলেছে! এদেশেন জন্মেন সূচনায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধার ইস্যুতে যেভাবে ইতিহাস বিকৃতির নয়া নগ্নতা দেখেছি তাতে ভরসা করা যায় এমন তরুণ মেধাবী মুখ দেখিনি কেন? যে দুই-একজন ফ্রন্টে এসেছেন তারাও নাকি ভাড়াটে খেলোয়াড়! বিস্মিত হই পরিস্থিতি কি বরফ খণ্ডের জলে ভাসার সেই ফর্মুলার ন্যায়-তিনভাগ অদৃশ্যমান তবে বৃহৎ শক্তি? বাকি মাত্র দৃশ্যমান এক ভাগ যারা এদেশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্য ধারণ বা লালন করেন? তবে তো পরিস্থিতি ভয়ংকর?
মনে বলে বিশ্বাসে চাই, অদৃশ্যমান সেই তিন ভাগই হোক ইতিহাস মনস্ক, ইতিহাসের ধারক-বাহক! তবে সময়ের সাহসী সন্তান না হলে লাভ কি? কেননা চোরকাটার ন্যায় লুকিয়ে থাকার কঠিন কঠোর পরিস্থিতির সুযোগে ক্রমশ শক্তিশালী বর্ণচোরা মোনাফেকের শক্তিমত্তা তলেতলে গভীর জলে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ফেলেলে তারুণ্যের মনস্ত্বাপে! এদেশের জন্ম বেদনার অতীত আর ঐতিহাসিক সব ডকুমেন্ট দখলে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট ইতিহাস পাঠের চর্চায় মেতে ও মাতিয়ে এক ইতিহাস বিমুখ তারুণ্যের বিশাল অংশকে দেশ বিরোধী শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করো তুলেছে!
হালের বাস্তবতায় কঠিন এক উপলব্ধি এদেশের জন্মের গৌরবময় মাহাত্ম্য বাঙালিত্বের নানান সৌরভ-নিদর্শনে অভিভূত হবেন কোন প্রজন্ম। সবাই তো ভিন্ন দেশী এজেন্টদের কবলে পরে শুধুই আত্মউন্নয়নের তসবি জপছে? ইউরোপ আমেরিকা পাড়ি দিতে সে সব দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি চারু-কারুর মোহে নিজ দেশের ইতিহাস ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট সবটাই তারা ত্যাগ করছে!
চেতনা বিক্রির ব্যবসায়ীরা তলে তলে নিজ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে এত রকমের সুযোগ সুবিধা আর চেতনা বিক্রি করে লাভবান হয়েছে যে আরেক অংশের মানুষেরা একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছে। আরো মজার বিষয় চেতনা বিক্রির ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই এদেশ-এদেশের স্বাধীনতা একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী হয়েও চেতনা বিক্রির মূল কারিগর ছিলেন? একারণে সাধারণ জনমানুষ আর স্বাধীনতার সত্যিকারের পক্ষশক্তির ধারক-বাহক তৃণমূলের বিপুলসংখ্যক মানুষ চেতনা বিক্রির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে খোদ একাত্তর, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনাস্থাশীল হয়েছে!
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্মরণ
- ভাষাসংগ্রামী
- আহমদ রফিক