
অসংক্রামক ব্যাধি: ৭০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ
বর্তমানে বিশ্বের মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংমের জন্য দায়ী অসংক্রামক ব্যাধি, ৮০ শতাংশ মৃত্যু হয় তৃতীয় বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশে। আগে ধারণা করা হতো যে, অসংক্রামক ব্যাধি শুধু ধনী দেশে বসবাসকারীদের এবং বয়স্ক লোকের হয়। প্রকৃতপক্ষে এ রোগে আক্রান্তদের অর্ধেক কম বয়সী এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
মানুষের দুই রকমের ব্যাধি হয়, সংক্রামক এবং অসংক্রামক। সংক্রামক ব্যাধি সাধারণত রোগ জীবাণুর মাধ্যমে হয়, যেমন- কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত, যক্ষ্মা, হাম, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড, পোলিও, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ইত্যাদি। বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় উন্নতির ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে।
বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি সহজেই চিকিৎসায় নিরাময় এবং প্রতিরোধযোগ্য। এমনকি অধিকাংশ সংক্রামক রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে এবং অনেকগুলো সংক্রামক ব্যাধি দ্রুত নিরাময় করা সম্ভব আধুনিক চিকিৎসার কল্যাণে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে নিরাপদ পানি, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা পদ্ধতি, কার্যকরী টিকা কর্মসূচি, সর্বোপরি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সংক্রামক ব্যাধি কমে যাচ্ছে, কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধি নীরব ঘাতকের মতো ধেঁয়ে আসছে এবং এসব ব্যাধি আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
অসংক্রামক রোগ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যেগুলো কখনো নির্মূল করা যাবে না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সফলতা আছে, সীমাবদ্ধতাও আছে। অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ এসব ব্যাধি আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্যের সমস্যা, তাই রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশি যত্নবান হতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এসব রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো করা প্রয়োজন। যেহেতু একবার আক্রান্ত হলে এ ধরনের ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না, তাই সচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
অসংক্রামক ব্যাধি কোনো জীবাণুর মাধ্যমে হয় না এবং একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না, অর্থাৎ ছোঁয়াচে না এবং প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়ায় না। অসংক্রামক ব্যাধি বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন- হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, অস্টিওপরোসিস, অস্টিওআর্থাইসিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের প্রদাহ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ এবং মানসিক রোগ ইত্যাদি। মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে এবং বয়সজনিত কারণে বার্ধক্যজনিত রোগও বাড়ছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংক্রামক রোগ