
ডাকসুতে ছাত্রদলের হার—বিএনপিকে যা ভাবতে হবে
ডাকসুর নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনের আগে সংবাদমাধ্যমগুলো ধারণা দিয়েছিল, ত্রিমুখী লড়াই হবে এবং নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। বড় জাতীয় দল বিএনপিও ধরে নিয়েছিল, তাদের ছাত্রদলই তুমুলভাবে বিজয় পাবে, যদিও কিছু আসন শিবির ও অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছেড়ে দিতে হবে।
এখন ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ‘জলবৎ তরলং’। এটা বিএনপি ও দেশের প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী লোকদের জন্য এক ভূমিধস ঘটনা। বিএনপির ছাত্রদল হেরেছে, এটা অবশ্যই তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত।
হ্যাঁ, নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই, প্রতিদ্বন্দ্বী দ্বিতীয় দল প্রথম দলকে হারাতে পারে, তা আমরা অনেক নির্বাচনে দেখেছি। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল যেভাবে হেরেছে, তা কোনো নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে মিলবে না। এভাবে যেকোনো নির্বাচনে যখন একটা দল হারে, তা তারা নির্বাচনের মাঝপথেই বুঝতে পারে। কিন্তু ছাত্রদল তা বুঝতে পারেনি।
ছাত্রশিবির আগে কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে জয়ের কাছে-কিনারে পৌঁছাতে পারেনি। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জিতেছিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রতাপ ঝেড়েছিল; কিন্তু কখনো ঢাকাতে নয়। এটা তাদের দুটি ছোট সুবিধা এনে দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচনে এবার অনেক রসদ জুগিয়েছে। তারা বদ্ধপরিকর ছিল ডাকসুতে এবার তাদের ছাত্রদের জেতাতে। দ্বিতীয় সুবিধাটা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা যেহেতু কখনো ক্ষমতায় ছিল না, হলগুলোতে তাদের পুরোনো ফাইল ছিল ক্লিন।
তবে সবচেয়ে বড় যে উপকরণ ছাত্রশিবিরের পক্ষে কাজে দিয়েছে সেটা হলো, জুলাই আন্দোলনে গড়ে ওঠা ‘গুপ্ত সেল’গুলো। এই বিদ্যা ছাত্রদল রপ্ত করতে পারেনি, তাই বারবার জুলাইওয়ালাদের কাছে হোঁচট খাচ্ছে।
এবার যদি ‘বিগ পিকচার’ বা বড় পরিসরে তাকাই—ডাকসুর নির্বাচনটা কী নিয়ে হয়েছে, তা ছাত্রদল বুঝতে পারেনি। বুঝলেও সম্ভবত তাদের তেমন কিছু করার ছিল না। তাদের বড় ভাইয়েরা ডাকসুর পথটা তাদের জন্য ‘পঙ্কিল’ করে রেখেছিলেন।
এত সংগ্রাম ও আন্দোলন করার পর সাধারণ ছাত্ররা চাচ্ছে একটা সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজের সংগঠন, যারা তাদের হলের সিট নিয়ে ভোগাবে না বা তাদের মুরব্বিরা ক্ষমতায় গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নিয়ে দাপট দেখাবে না ও ছাত্রনেতারা গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াবে না। দুর্ভাগ্যবশত, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, এসব দাপট ছাত্রদলেরও ছিল। সত্য কথা বলতে গেলে, বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনই এ ধরনের ‘পারসেপশন’ থেকে মুক্ত নয়। বিএনপিও যে এর থেকে বের হয়ে আসতে সত্যিকার কোনো চেষ্টা করেছে, তা জোর করে বলা যাবে না।