‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’ ও ‘নারী কেন বাইরে যাবে’?

জাগো নিউজ ২৪ মাহফুজা অনন্যা প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা সম্প্রতি সংঘটিত হলো, তা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটি আমাদের সমাজের গভীর অসুখের নগ্ন প্রকাশ। এই দেশে নারী মানেই যেন প্রথমে সন্দেহ, তারপর গালাগাল, তারপর চরিত্রহনন। ঘটনাস্থলে যা ঘটেছে, তা তো ঘটেছেই; কিন্তু তার চেয়েও বড় ক্ষত সৃষ্টি করেছে আমাদের সামাজিক মানসিকতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা।


প্রথমেই আসা যাক নারী শিক্ষার্থীটির প্রসঙ্গে। জানা গেছে, স্থানীয় এক দারোয়ান তার প্রতি শারীরিক আঘাত করেছেন এবং বাসায় প্রবেশে বাধা দিয়েছেন। অথচ প্রথম থেকেই সমাজের একাংশ তাকে নিয়ে শুরু করেছে নোংরা কুৎসা, অশ্লীল ভাষা ও অবমাননাকর মন্তব্য। তাকে নানারকম কুরুচিপূর্ণ শব্দে আঘাত করা হয়েছে। এ যেন নারীর প্রতি চিরাচরিত বিদ্বেষ ও যৌন হতাশা থেকে উদ্ভূত অন্ধ মানসিকতার আরেকটি দৃষ্টান্ত। এ সমাজ যেন ভুলে যায়—নারী কেবল কোনো চরিত্র নয়, তিনি মানুষ, তিনি সমাজের অর্ধেক অংশ।


এই ঘটনার পাশাপাশি আমরা দেখেছি আরেকটি শোকাবহ দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া স্থানীয় জোবরা গ্রামবাসীর হামলার শিকার হয়ে আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। চিকিৎসকের ভাষায়–‘ হাড় নেই, চাপ দেবেন না’- এ শুধু একটি সতর্কবার্তা নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের একটি নির্মম রূপক। একজন শিক্ষার্থীর মাথার হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল, কিন্তু প্রশাসন ও কিছু গণমাধ্যমের চোখে সবচেয়ে বড় খবর হয়ে উঠলো—কয়েকটি ভাঙা টিন ও জানালা। এখানে প্রশ্ন ওঠে—কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? কয়েকটি টিনের ক্ষতি, নাকি একজন তরুণ মস্তিষ্কের ধ্বংস? টিনের ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ করা যায়, কিন্তু ভাঙা করোটি ও ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর কখনও আগের মতো হয় না। অথচ প্রশাসন ব্যস্ত হলো শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করতে, আহতদের পাশে দাঁড়াতে নয়।


হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের গ্রেফতার কিংবা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে তারা শিক্ষার্থীদের বলির পাঁঠা বানিয়ে প্রোপাগান্ডার ঢোল পিটিয়েছে। কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল আরও হতাশাজনক। তারা আহত শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত শরীরের ছবি, হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা দৃশ্য বা মাথার ভাঙা করোটির করুণ বাস্তবতা প্রকাশ না করে বরং প্রচার করেছে ভাঙা টিনের ছবি। যেন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই টিন, শিক্ষার্থীদের রক্ত নয়। এই মনোভাব শুধু সাংবাদিকতার নৈতিকতা নয়, মানবিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।


বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষার্থীরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণতান্ত্রিক আন্দোলন—প্রতিটি সংগ্রামে শিক্ষার্থীরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। অথচ আজ সেই শিক্ষার্থীরাই অপবাদ ও দমননীতির শিকার। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে তাদেরকেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মামুনের মাথায় আঘাত কোনো দুর্ঘটনা নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা—রাষ্ট্র তার তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ব্যর্থ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়; এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নৈতিক আশ্রয়স্থল। সেই আশ্রয় যদি ভেঙে পড়ে, তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায় থাকবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও