দক্ষিণ সীমান্তে বাড়তি অনিশ্চয়তা

ডেইলি স্টার আলতাফ পারভেজ প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:২৬

আরাকান থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আট বছর পূর্তি হয়ে গেল গত মাসে। এর মাঝে দেশে একটা সরকার গেল, নতুন সরকার এলো। এই সমস্যা নিয়ে বহু সম্মেলনও হলো ঘরে-বাইরে। কিন্তু আরাকানি মুসলমানদের ফেরত পাঠানো যায়নি, বরং তাদের আগমন অব্যাহত আছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশ তার রোহিঙ্গা নীতি-কৌশল নিয়ে পুনর্ভাবনা করবে কি না?


অসত্য আশাবাদের পরম্পরা


বিগত সরকারের মতো বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে অনেক অসত্য আশাবাদ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়। অনেকের মনে থাকার কথা, ২০২৩ সালের এপ্রিলে কুনমিংয়ে বাংলাদেশ-চীন-মিয়ানমারের মাঝে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক হয় এ বিষয়ে। তখন শেখ হাসিনা সরকার জানিয়েছিল বছর শেষ হওয়ার আগেই পরীক্ষামূলকভাবে সাত হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে ফেরত নিবে নেপিডো সরকার। কার্যত তা হয়নি।


তারও আগে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার একই বিষয়ে একটা চুক্তি করার পর সীমান্ত ফেরিয়ে ঢুকে পড়া আট লাখ মানুষের তালিকা হস্তান্তর করা হয়। তার মধ্য থেকে মিয়ানমার মাত্র ৭ শতাংশ সম্পর্কে 'ক্লিয়ারেন্স' দেয় জানা গেলেও বাস্তবে একজনকেও নেওয়া হয়নি।


এবছর এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতিনির্ধারক জানিয়েছিলেন, এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হবে। তারা মিয়ানমার কর্তৃক 'ভেরিফায়েড'। 'এমনকি সংখ্যাটা আরও বাড়তেও পারে' বলেও উল্লেখ করা হয়। এই আশাবাদকে ভিত্তি করে সরকার সমর্থক নবীন একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ফেসবুকে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। বাস্তবে কী হলো সেটা সবার জানা।


গত মার্চেও বলা হয়েছে রোহিঙ্গারা আগামী রমজানে আরাকানে থাকবে। এখন আবার এ বছরের রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনগুলোকে ঘিরে আরেক দফা আশাবাদ ছড়ানো হচ্ছে।


আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ ইতিবাচক


ইতোমধ্যে আগস্টে কক্সবাজারে একটা সম্মেলন হলো। সেপ্টেম্বরে হবে নিউইয়র্কে এবং তারপর হবে কাতারের দোহায়। এই সম্মেলনগুলোর অন্তত দুটো ইতিবাচক ফল আছে। প্রথমত, রোহিঙ্গা সমস্যা কিছুটা হলেও আবার আন্তর্জাতিক মনোযোগে ফিরছে বা ফিরবে। দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা শিবির চালানোর খরচপাতিও কিছু পাওয়া যাবে।


ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের মাঝে আরাকানিজ এই মুসলমানদের দুঃখ, কষ্ট ও মাতৃভূমি থেকে উৎখাতের বিষয়ে মনোযোগ বেশ কমে গিয়েছে। নিশ্চয়ই সেটা ফিরিয়ে আনবে এসব সম্মেলন। আবার রোহিঙ্গা শিবির পরিচালনায় তহবিল যেভাবে কমছে সেটা বাংলাদেশের জন্য বড় এক উদ্বেগের বিষয়। পরপর তিনটা সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আর্থিক এই সংকট সম্পর্কেও আন্তর্জাতিক সমাজকে অবহিত করতে পারবে। এগুলোও জরুরি কাজ। কিন্তু এসব সম্মেলন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার রাস্তা তৈরি করবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। কারণ রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শর্তের উপর। সেই বিবেচনায় বলতে হয়, আরাকানে বরং এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের ফেরত যেয়ে শান্তিপূর্ণ বসবাসের পক্ষে ধারণা দেয় না।


যেমন, এ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে আরাকান আর্মির গেরিলাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর আগে কিছু রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হয়ে আরাকান আর্মির বিপক্ষে লড়তে। এই দুই ধারার ঘটনাবলী নিশ্চিতভাবে রাখাইনদের সঙ্গে আরাকানিজ মুসলিমদের সম্পর্কে বৈরিতা বাড়াবে।


অনেকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হলে তাদের সেখানে জাতিগত স্বীকৃতি ও নাগরিক অধিকার দিতে হবে। মিয়ানমারে জাতিসত্তাগুলোর তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেই কারণে তারা দেশটির নাগরিক আইনেও বঞ্চনার শিকার। আবার, এই দুই বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ইতিবাচক সংস্কার উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গাদের আরাকানে পৌঁছা সহজ হবে না—যতক্ষণ না আরাকান আর্মি এবং স্থানীয় রাখাইনরা তাদের ব্যাপারে সদয় হয়।


যেহেতু ২০১৭ ও ২০২৫ সালের মাঝে আরাকানের পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে, সে কারণে এখন আর মিয়ানমার সরকার চাইলেই রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া সম্ভব নয়। বরং ফেরত যাওয়ার জন্য আরাকানের স্থানীয় পরিস্থিতি ও পরিবেশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি বাংলাদেশ থেকে বস্তুগত কিছু লাভের বিনিময়ে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের নিতে রাজি হলেও স্থানীয় রাখাইন সমাজের সঙ্গে মিলে-মিশে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে থাকার অবস্থা না থাকলে আবারও রোহিঙ্গাদের ফেরতই আসতে হবে। ১৯৭৮-৭৯ থেকে বারবার সেটাই ঘটছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও