ডলারের রেট কত হবে
পত্রিকার লেখা পড়ে জানতে পারলাম, টাকার বিপরীতে ডলারের দরপতন রোধ এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতকে চাঙা করতে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে এক মাসের কম সময়ে চার দফায় নিলামের মাধ্যমে ৫৩৯ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর মহোদয়কে বলতে শুনলাম, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের কোষাগার থেকে গত এক বছরে কোনো ডলার বেচেনি, সুযোগ বুঝে শুধু কিনেছে। এখন তো বরং রপ্তানিকারক আর প্রবাসী রেমিট্যান্স বিবেচনায় ডলারকে নাকি সমর্থন দিতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৮ আগস্ট ডলার কেনার জন্য নিলাম আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিলামে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১২১.৩৫ থেকে ১২১.৫০ টাকা দরে ৪৫ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। এর আগে ২৩ জুলাই ১২১.৯৫ টাকা কাট-অফ রেটে ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই হিসাবে কাট-অফ রেট আগের চেয়ে অন্তত ৪৫ বেসিস পয়েন্ট কমেছে।
এ ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ শুরু হয় ১৩ জুলাই। সেদিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ১২১.৫০ টাকা রেটে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ১৫ জুলাই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামে একই দামে আরও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনে। কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডলারের দ্রুত দরপতন ঠেকাতে বাজারের সিগন্যাল রেট নির্ধারণে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিলাম কমিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ৮ আগস্ট বলেছিলেন, ব্যাংকগুলো প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার কিনেছে।
অনেক ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ব্যাংক খাতে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলারের প্রবাহ রয়েছে। বর্তমানে তাঁরা প্রতি মাসে গড়ে ২.৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এবং ৪ বিলিয়ন রপ্তানি করছেন। অর্থাৎ মাসিক প্রবাহ প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বর্তমানে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আমদানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের মাসিক আমদানি বিল ৪ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। অনেকেরই মন্তব্য—সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রবাহ হওয়ায় ডলারের রেট কমছে; বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনায় রেটের পতন থামিয়ে রাখা যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাম্প্রতিক উদ্যোগকে তাদের এই জোরালো সমর্থন। নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহকে উৎসাহিত করছে; একই সঙ্গে রপ্তানির প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাও ধরে রাখছে। বিশ্বজুড়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিয়মিত মুদ্রাবাজারে একক বা যৌথভাবে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করে। অতীতেও প্রায়ই বৃহত্তর অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এ কৌশল কাজে লাগানো হয়।
এমনকি জাপানি, জার্মান বা ফরাসি মুদ্রার সমর্থনে জি-৭ গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অতীতে প্রায়ই বাজারে হস্তক্ষেপ করেছে।
আমরা জানি, বিনিময় হার হঠাৎ কমে গেলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়তে পারে। আমরা দেখেছি, জুলাইয়ে যখন ডলারের দর অনেকটা পড়ে গিয়েছিল, তখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়, যা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে রপ্তানিকারকেরা প্রায়ই ফরওয়ার্ড-লুকিং এক্সচেঞ্জ রেটের ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেন। প্রকৃত দর যখন অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যায়, তখন তাঁরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি উভয় খাতের জন্যই বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
- ট্যাগ:
- মতামত