জুলাই অভ্যুদয়, সমন্বয়ক এবং মানি মেকিং মেশিন

জাগো নিউজ ২৪ বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৬

চাঁদাবাজি আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। কোনো কোনো ছাত্র সংগঠনের কারো কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ কত ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কত অভিযোগই তো আমরা আগে শুনেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠনের একজন নেতা তো গৌরব করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করার কথা দেশবাসীকে জানিয়েও তেমন লজ্জা বোধ করেনি। সেসব ‘নষ্ট’ দিন অবশ্য এখন বাসি হয়েছে। দুঃশাসকের বিদায়ে খারাপ শাসনের ধারারও অবসান হওয়ারই কথা।


হিসাব মতো, একবছর ধরে আমরা এক নতুন বাংলাদেশে আছি। গত বছর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ থেকে দুঃশাসন, চাঁদাবাজি, লুটপাটের অবসান হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু গত ২৬ জুলাই রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে পাঁচ তরুণ আটক হওয়ার পর চাঁদাবাজির বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। মানুষের মনে আবার অতৃপ্তি ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ'। এ কেমন বাংলাদেশ! গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় আটক পাঁচজনের মধ্যে চারজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। এদের কারও বয়স কুড়ি পার হয়নি। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্যটি হলো— এই সংগঠনের একজন সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমার ফেসবুক পোস্ট, যেখানে তিনি জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত একজনের বিরুদ্ধে এর আগেও ভাঙচুর, হুমকি ও নারীঘটিত অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল এবং সেসব অভিযোগ অভ্যন্তরীণভাবে ‘জেনে’ ও ‘দেখেও’ সংগঠনটি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।


এই ছেলেগুলোকে মিছিলে সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে, নেতাদের প্রটোকল দিতে দেখা গেছে, এবং কনফারেন্স হল থেকে সচিবালয়ের করিডোর পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে দেখা গেছে। এমনকি উমামার ভাষ্যমতে, গুলশান-বনানীর তথাকথিত গ্যাং কালচারে এই তরুণদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের ভেতরে অভিযোগ ছিল। তারা মেয়েদের হয়রানি করেছে, সহকর্মীদের হুমকি দিয়েছে এবং প্রয়োজনে পেশিশক্তি ব্যবহার করে চাঁদা আদায়ের কাজ করেছে। এসব অভিযোগের বিপরীতে সংগঠনের আচরণ ছিল পুরোটাই রহস্যঘেরা, দেখেও না দেখার ভানে ভরা। কোনোরকম তদন্ত হয়নি, কোনো সাংগঠনিক জবাবদিহি তৈরি হয়নি। বরং এইসব তরুণ তথাকথিত ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে অব্যাহতভাবে দাপট দেখিয়ে এসেছে। এ যেন এক নির্মম বিদ্রুপ— যেখানে অপরাধীই হয়ে ওঠে নীতি নির্ধারক।


এই অবস্থান থেকে যদি আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করি— এই ছেলেগুলো কোথা থেকে এলো? কারা তাদের তৈরি করল? কীভাবে তারা সংগঠনের ভেতরে প্রবেশ করল এবং কীভাবে দিনের পর দিন এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই আমাদের চোখ খুলে যাবে। আমরা বুঝতে পারবো রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরে কীভাবে জন্ম নেয় ও বেড়ে ওঠে চাঁদাবাজির এক ভয়াবহ অপসংস্কৃতি। এটি এমন এক সংস্কৃতি, যেখানে আদর্শের চেয়ে সম্পর্ক, নীতির চেয়ে পরিচিতি এবং ন্যায়ের চেয়ে শক্তি বড় হয়ে ওঠে।


যে তরুণটি মিছিলে সামনে থাকে, নেতা তার মাথায় হাত রাখে, সে আজ নয় তো কাল পদ পায়। আর সেই পদ থেকেই তার যাত্রা শুরু হয় নানা অনৈতিকতার দিকে। প্রথমে হালকা ‘সহযোগিতা’, পরে তা হয়ে যায় নিয়মিত ‘তুলে দেওয়া’ এবং শেষে সরাসরি চাঁদাবাজি। এই চক্র ভাঙার জন্য ভেতর থেকে প্রতিরোধ কখনও তৈরি হয়নি। বরং এসব তরুণ সংগঠনের সুবিধাবাদী নেতাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এদের মাধ্যমে তারা ছড়ি ঘোরায়, অনুপস্থিত থেকেও প্রভাব রাখে এবং দিনের শেষে নিজের প্রভাব বিস্তার নিশ্চিত করে।


এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো, তারা রাজনীতিকে দেখে সুবিধা আদায়ের এক পথ হিসেবে। তারা আদর্শ নয়, বরং পরিচয়ের সন্ধানে থাকে। নিজেদের আখের গোছাতে চায়, নিজেকে নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রমাণ করতে চায় এবং প্রভাব খাটাতে চায়। এই আকাঙ্ক্ষার সুযোগ নিয়েছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তারা নিজেদের স্বার্থে এসব তরুণকে ব্যবহার করেছে, প্রশ্রয় দিয়েছে, আর যখন তারা ধরা খেয়েছে, তখন দায় ঝেড়ে ফেলেছে এক টুকরো বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তিতে। এই ‘বহিষ্কার’ কি যথেষ্ট? এটা কি শুধুই সাংগঠনিক দায়মুক্তির জন্য একটি ফর্মালিটি? নাকি এটি প্রকৃত আত্মসমালোচনার অংশ? আমরা দেখেছি, বহুবার বহিষ্কৃত কর্মী কিছুদিন পর আবার দলে ফিরে আসে— হয়তো ভিন্ন নামে, ভিন্ন পদে। কারণ শিকড় থেকে যদি সংস্কার না হয়, তাহলে ফলাফলও পাল্টায় না।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও