
যাঁদের টানে দেশে ফিরলেন, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার
ওমানপ্রবাসী আবদুল বাহার স্বজনদের সঙ্গে ফিরছিলেন বাড়িতে। মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানি, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের মেয়ে সবাই ছিলেন সঙ্গে। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে অনেক হাসিঠাট্টা, খুনসুটি চলছিল। কিন্তু কে জানত মুহূর্তেই এই আনন্দের পরিবেশ পরিণত হবে বিষাদে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে এসে পৌঁছায় বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমি আক্তার (১০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০) এবং লাবনীর মেয়ে লামিয়া আক্তারের (৯) মরদেহ।
ওমান থেকে দেশে ফেরা আবদুল বাহারকে আনতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেশে ফেরা আনন্দে শেষতক নেমে এল মৃত্যুর ছায়া। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর এলাকায় বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি একটি খালে পড়ে। বাহার ছাড়া পরিবারের কেউই ফিরে আসেননি।
পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে দুটো কবর, সামান্য দূরেই চারটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানেই একে একে মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীমসহ নিহত স্বজনদের শুয়ে দেন বাহার।
উঠানে দাঁড়িয়ে এক স্বজনকে বলছিলেন বাহার, ‘আমি ফিরছিলাম সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। অথচ ফিরে পেয়েছি সাতটা লাশ। আমি কারে নিয়ে বাঁচব এখন?’
একটু চুপ থেকে আবার বলা শুরু করেন বাহার, ‘গাড়িতে বসে আমরা কত হাসিঠাট্টা করতেছিলাম। আম্মা বলতেছিল, তোর জন্য কত অপেক্ষা করছি, বাপ। কথাটা শেষ হইতে পারে নাই। বিকট শব্দে ধাক্কা লাগে একটা। তারপর আর কিছু মনে নাই। খালের পানিতে ভাসতেছিল গাড়ি।’
দুর্ঘটনার জন্য চালকের ঘুমকেই দায়ী করছেন বাহার। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায়ও একবার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিল। বলেছিলাম, দরকার হলে ঘুমিয়ে নিন। কিন্তু তিনি ঘুম নিয়েই গাড়ি চালাতে গিয়েছেন। খালে পড়ে গেলে আমরা দরজা খুলতে বলি। কিন্তু তিনি নিজে জানালা দিয়ে বেরিয়ে যান, আমাদের আটকে রেখে।’
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- দাফন
- দেশে ফেরা
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত