আছে তো হাতখানি...

প্রথম আলো ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:২২

বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস আমাদের সবাইকে বন্ধুত্বের শক্তিকে মনে করিয়ে দেয়, সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেয় যে মানবতা আমাদের সবার এবং বন্ধুত্বের মাধ্যমেই একটি শান্তিপূর্ণ ও সংযুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব। আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০১১ সালে জাতিসংঘ প্রথম ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে প্রতিবছরই পৃথিবীর বহু দেশে এ দিনটি নিয়মিতভাবে উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসাবে পালিত হয়।


কাকে বলব বন্ধুত্ব—ব্যক্তিগত জীবনে, সমাজে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে? বেশ কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের আড্ডায় বন্ধুত্বের কথা উঠেছিল—উঠেছিল সেই সনাতন প্রশ্নও, কাকে বলব বন্ধুত্ব। একজন বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে, যাকে সব কিছু বলা যায়। যেখানে কোনো রাখঢাক থাকে না। আরেক জন বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে একদিন সারা দিন দেখা ও কথা বলার পরেও মনে হয়, দেখা বা কথা ফুরায়নি। কাল আবার দেখা আর কথা শুরু করতে হবে। তৃতীয় বন্ধুটি বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে একটি নির্ভরতার কাঁধ আর হাত, যে কাঁধে মাথা রাখা যায়, যে হাতে হাত রাখা যায়।


আমাদের এক তার্কিক বন্ধু বলেন, ও সবই কৈশোরের বা যৌবনের কথা। আজ পড়ন্ত বেলায় এসে আছে কি আমাদের সেই উদ্দাম বন্ধুত্ব? ওর কথা শুনতে শুনতে আনমনা হয়ে পড়লাম। মনে পড়ল দীর্ঘদিনের সেই বন্ধুটির কথা—৫০ বছরের সখ্য, সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই। সে সময়ে আমাদের কথার কোনো চিহ্নিত পরিধি ছিল না—না বিষয়বস্তু সম্পর্কে, না সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে। আলোচনা চলত অনর্গল নানান বিষয়ে, তুঙ্গ বিতর্কে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তারুণ্যের ঝাপটায় আমরা তখন উদ্দীপ্ত।


তারপর আমাদের দুজনেই ব্যস্ত হয়ে গেলাম পেশাগত বলয়ে, পারিবারিক জীবন নিয়ে। যৌবনের সে বন্ধুর সঙ্গে নিত্য দেখা হয় না, সাক্ষাৎ পাই মাঝেমধ্যে। মুখোমুখি দেখায় কিংবা দূরালাপনীতে খোঁজখবর নিই। আলোচনা আর যৌবনের বিষয়ে ফিরে যায় না, তারা এখন মোড় নেয় পেশাগত আশা-হতাশার বিষয়ে, ছেলে-মেয়েদের পড়া-শোনা সম্পর্কে। টের পাই পরিবর্তনটি।


দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কথাবার্তার ছায়াও অন্যদিকে সরে গেল। আমাদের কথোপকথনের আলো স্থির হয়ে থাকে ছেলে-মেয়েদের সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনিতে, নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য বিষয়ে। তারপর কেমন করে যেন কোন এক অমোঘ দিবসে আমরা আলোচনা শুরু করি কার কার শরীর ঠিক নেই, কে কে অসুস্থ, কে কে চলে গেল। ভাবলাম, জীবনের বদলের সঙ্গে সঙ্গে অর্ধশতাব্দীর বন্ধুত্বের মানুষটির সঙ্গে আমার কথোপকথন কেমন করে বদলে গেল। যেন একটি পূর্ণ বৃত্ত ঘুরে সেখানেই কথা বলা ফিরে এল, যেখানে চলে যাওয়াটাই মুখ্য আলোচনার বিষয়। বেশ কিছুদিন আগে সব কথা শেষ করে দিয়ে সে–ও চলে গেল।


সম্বিত ফিরে পেলাম আমাদের দার্শনিক বন্ধুটির উচ্চারণে, চাণক্যের সেই চিরায়ত কথায়, ‘উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।’ হয়তো–বা; কিন্তু আমার সব সময়েই মনে হয়েছে, বন্ধুতে বন্ধুতে সময় কাটানো হচ্ছে সাহচর্যের, আনন্দের ও সান্নিধ্যের। চূড়ান্ত বিচারে আমরা সে সাহচর্যের, আনন্দের আর সান্নিধ্যের হিরণ্ময় স্মৃতিটুকুই হৃদয়ে ধারণ করি, আর সব তুচ্ছ হয়ে যায়। ভালোবাসার সময়, মমতার সময়, গল্পের সময়, কাছে বসে থাকার সময়, নির্ভরতার সময়, আড্ডার সময়—এটাই বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি।


একজন বন্ধু আরেকজনের কাছে সময়টাই শুধু চায় নিজের কথা বলতে, বন্ধুর গল্প শুনতে, দুঃখ আর আনন্দ ভাগ করে নিতে; কিন্তু প্রায়ই এটা আমরা বিস্মৃত হই। আজকের যুগে বন্ধুকে আমরা ‘মুখোমুখি বসিবার’ সময়টুকুই দিতে পারি না। আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতা, আমাদের স্বার্থচিন্তা নিয়ে ‘আমি আমাকেই’ নিয়ে মত্ত—বন্ধুকে সময় দেব কখন। তাই বন্ধুত্বের বন্ধন ঢিলা হয়ে যায়, বন্ধুত্বের রং ফিকে হয়ে পড়ে, বাড়ে দূরত্বের মাইলফলক। সংযোগ হয়তো থাকে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে; কিন্তু হৃদয়ের যোগাযোগ?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও