দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে ট্রমা তৈরি করে

ঢাকা পোষ্ট জেসান আরা প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫:১০

ঢাকার মিরপুরের কলেজশিক্ষার্থী সায়মা (ছদ্মনাম)। কয়েকদিন ধরেই ঘুমাতে পারছেন না। চোখে সবসময় দুর্ঘটনা, ধ্বংস, রক্তপাতের ছবি ভেসে ওঠে। ফেসবুক আর ইউটিউবে প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছেন বিভিন্ন দুর্ঘটনা, যুদ্ধ, দেশে-বিদেশে হত্যাকাণ্ডের খবর। “আমি চাইলেও আর এসব এড়াতে পারি না। কখনো কখনো মনে হয় আমি নিজেই সেই ধ্বংসের মধ্যে আছি” বলছিলেন সায়মা।


তিনি একা নন। এমন মানসিক অবস্থায় পড়ছেন দেশের অনেকই। আধুনিক বিশ্বের দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ ও ভয়াবহ দৃশ্যের প্রাচুর্য, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ভয়ংকর ও নেতিবাচক সংবাদ ঘিরে মানুষ মানসিক চাপে ভুগছে, যা অনেক সময় ট্রমা ও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post-traumatic stress disorder-PTSD)-এ পরিণত হচ্ছে।


ট্রমার সম্ভাব্য কারণসমূহ অনেক বৈচিত্র্যময় এবং তা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। ট্রমা শুধুমাত্র শারীরিক আঘাত নয় বরং মানসিক ও সামাজিক অভিঘাত থেকেও তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ বুলিং বা হয়রানির শিকার হলে কিংবা শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতন ভোগ করলে ট্রমা তৈরি হতে পারে। যৌন নিপীড়ন, সড়ক দুর্ঘটনা অথবা এমনকি সন্তান জন্মদানের কঠিন অভিজ্ঞতা থেকেও কেউ ট্রমায় আক্রান্ত হতে পারেন।


এছাড়া জীবন-হানিকর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, ঘনিষ্ঠ কারও হঠাৎ মৃত্যু, আক্রমণের শিকার হওয়া, অপহরণ, সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (যেমন ভূমিকম্প, বন্যা), অথবা যুদ্ধ—এই সব ঘটনাও ট্রমার উৎস হতে পারে। কোনো ট্রমাটিক ঘটনা একবারেই ঘটতে পারে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দীর্ঘ সময় ধরে বারবার ঘটতে থাকলে দীর্ঘস্থায়ী ট্রমার সৃষ্টি করে।


অনেক সময় ব্যক্তি নিজে আক্রান্ত না হলেও অন্য কারও ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেও ট্রমায় ভুগতে পারেন। তবে এখনকার সময়ে শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নয়, প্রতিবেদন দেখে, ছবি বা ভিডিও দেখেও অনেকেই পরোক্ষভাবে ট্রমায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে যখন ভিডিওগুলোয় রক্তপাত, কান্না বা মৃত্যুর মতো দৃশ্য দেখায়, তখন প্রভাব আরও বেশি হয়।



এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে কিশোর-কিশোরী ও তরুণরা, যারা আগে থেকেই মানসিকভাবে দুর্বল, যারা একা থাকে বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং যারা ঘনঘন সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে। অনেকেই বলেন, ‘সংবাদ না দেখলে আমরা তো অন্ধ হয়ে যাব’। কিন্তু একটানা নেতিবাচক খবর দেখা আমাদের মনে ভয়, দুশ্চিন্তা এবং নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে পারে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আমাদের মস্তিষ্ক বিপদ টের পেলেই তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া দেখায়। যখন কেউ বারবার ধ্বংস বা মৃত্যুর ছবি দেখে, তখন মস্তিষ্ক সেটাকে নিজের অভিজ্ঞতার মতো ধরে ফেলে। এর ফলে উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা এমনকি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)- ও হতে পারে’।


Dual Representation Theory অনুসারে, ট্রমার স্মৃতি দুই ধরনের হয়। এক হলো সচেতন স্মৃতি (Verbally Accessible Memory-VAM), যা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি। অন্যটি হলো অচেতন স্মৃতি (Situationally Accessible Memory-SAM), যা যেকোনো সময় হঠাৎ ফিরে আসে। SAM স্মৃতি ব্যক্তিকে আবার সেই ভয়াবহ ঘটনার মাঝে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি দেয়।


PTSD-এর উপসর্গ চারটি প্রধান ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। প্রথমত, আঘাত পুনরানুভব (Intrusion symptoms) যেমন, দুঃস্বপ্ন, ফ্ল্যাশব্যাক বা সেই ঘটনার স্মৃতি বারবার মনে পড়া এবং এতে ভীষণ মানসিক কষ্ট পাওয়া। এটি এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি ওই ট্রমাটিক ঘটনাটিকে বারবার মনে করতে থাকেন, স্বপ্নে দেখেন বা হঠাৎ সেই পরিস্থিতিতে ফিরে যান বলে অনুভব করেন।


দ্বিতীয়ত, এড়িয়ে চলার প্রবণতা (Avoidance) আঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত চিন্তা, অনুভূতি বা স্থান, মানুষ, ঘটনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা।


তৃতীয়ত, নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতির পরিবর্তন (Negative alterations in cognition and mood) যেমন, আত্মদোষ, পৃথিবীকে ভয়ংকর ভাবা, আগ্রহ হারানো, বিচ্ছিন্নতা অনুভব, ইতিবাচক আবেগের অভাব ইত্যাদি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও