
আর কতদিন আইনহীনতায় বসবাস
গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত আইনের শাসন। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে?
আমরা যেদিকে তাকাই, আইনের শাসনের বদলে জবরদস্তির শাসন দেখি। ‘মব ভায়োলেন্স’ প্রত্যক্ষ করি। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়। আবার তাদের কেউ কেউ অতীতের মতো চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে।
২৮ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠে। কয়েকজন ব্যক্তি সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মানুষ কতটা নীচ হতে পারলে এ কাজ করে! একই দিন ভোলার তজুমদ্দিনে আরেক নারী সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হওয়া স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। কুমিল্লার ঘটনায় রাজনীতির যোগ না থাকলেও ভোলার ঘটনার সঙ্গে শ্রমিক দল ও যুবদলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মুরাদনগরে নারী ধর্ষণের রেশ না কাটতেই সেখানে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় লোকজন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে এলাকাবাসীকে মাইকে উসকে দিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁদের খুন করা হয়। মাদকব্যবসা করা অপরাধ। তাই বলে কেউ মাদকব্যবসা করলে তাকে পিটিয়ে মারা যায়? দেশে আইন কোথায়, থানা–পুলিশ আছে কেন?
সোমবার রাতে খোদ ঢাকায় বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে মহাখালীর জাকারিয়া হোটেলে দল বেঁধে ঢুকে দুই নারীর ওপর হামলা করেন একদল লোক। বনানী থানায় করা মামলায় বলা হয়, মনির নামের এক ব্যক্তি এসে ভিআইপি কেবিন চান; কিন্তু কেবিনটি তখন অন্য অতিথির জন্য বরাদ্দ থাকায় তাঁকে সেটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের দিন ১ জুলাই রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মনির ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢোকেন। তাঁরা ঢুকেই গ্লাস ছুড়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এই হলো যু্বদল নেতার কাণ্ড।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যেমন বিএনপির নেতা–কর্মীদের নাম আসছে, তেমনি অঘটনের শিকারও হচ্ছেন তাঁরা। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে দুর্বৃত্তদের হামলায় মো. মিন্টু নামের এক বিএনপি নেতা খুন হন। তিনি ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ৩ নম্বর ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে লিপ্ত হয় এলাকার কিশোরদের দুটি পক্ষ। তাদের থামাতে গিয়ে খুন হন সাবেক যুবদল নেতা মুহাম্মদ আলমগীর। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি গ্রামে আসতে পারেননি। গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গ্রামে আসেন। ১১ মাসের মাথায় তাঁকে জীবন দিতে হলো কিশোর গ্যাংয়ের হাতে।
আরেকটি চাঞ্চল্যকর খবর হলো থানা–হাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া। চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ইজারাদারের দুই কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি দল থানায় ঢুকে ভাঙচুর করে সাজাপ্রাপ্ত ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানার সামনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় এক নারীকে মারধরের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেন তাঁকে মারধর করেছেন। পরে ভুক্তভোগী নারী মামলা করার জন্য শনিবার রাত ১০টার পর শাহ আলী থানায় আসেন।
সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইন রক্ষার নসিয়ত করা হয়। কিন্তু সেই আইন রক্ষা করতে গিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে শাস্তি ভোগ করতে হলো। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের দীপঙ্কর দে নামের এক কর্মীকে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা পটিয়া থানায় নিয়ে যান। তাঁর নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু একে কেন্দ্র করে পটিয়ায় পুলিশ ও আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ঘটনা ঘটল তা অনাকাঙ্খিতই বলতে হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আইনের শাসন
- অপরাধমূলক কর্মকান্ড