ভোরবেলা উঠেই পরীক্ষা প্রস্তুতির ব্যস্ততা। এইচএসসি পরীক্ষার দিন বলে কথা। লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর মতোই এক কিশোরীও প্রস্তুত ছিল নিজের ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় লিখে আসতে। কিন্তু ঠিক তখনই তার জীবনের পাথেয় হঠাৎ হুমকির মুখে—তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে যান অচেতন অবস্থায়।
আত্মীয়পরিজন কেউ নেই আশেপাশে। মেয়েটিই একা। কাঁপা হাতে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভর্তি করায়, চিকিৎসা নিশ্চিত করে। তারপর ছুটে আসে পরীক্ষা কেন্দ্রে—হয়তো কিছুটা দেরি নিয়ে, কিন্তু আগ্রহ আর দায়িত্ববোধে বিন্দুমাত্র ঘাটতি না রেখে। আর ঠিক সেখানেই ঘটে ‘ব্যবস্থাগত অমানবিকতার’ একটি জীবন্ত উদাহরণ। পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক তাকে জানিয়ে দেন—”তুমি দেরি করেছো, প্রশ্নপত্র বিতরণ হয়ে গেছে, নিয়ম অনুযায়ী তোমাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না!”
নিয়মের কাছে মানবিকতা পরাজিত! শুধু একটি মেয়ে নয়, আমরা হারালাম একটি নৈতিক সম্ভাবনা। আমরা প্রত্যক্ষ করলাম—কীভাবে মানুষের বিপদের মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনের কঠোর দেয়াল মানবিকতাকে থামিয়ে দিতে পারে।
এমন কঠিন কী ছিল একটু মানবতা দেখানো? পরীক্ষা শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট, শিক্ষার্থীটির অনুপস্থিতির কারণ পরিষ্কার—এমন অবস্থায় কি একজন শিক্ষক বা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া যেত না? বলা হয়—"নিয়ম তো নিয়ম!" হ্যাঁ, কিন্তু প্রতিটি নিয়মের পেছনে থাকে একটি উদ্দেশ্য। আর সেই উদ্দেশ্য যদি মানুষের উপকার না করে, বরং তার ক্ষতিই করে—তবে সে নিয়ম নিজেই অমানবিক হয়ে ওঠে, নয় কি?
বাংলাদেশে প্রতি বছর লাখো শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই নানা সংকট, সামাজিক প্রতিকূলতা, আর্থিক অসুবিধা কিংবা পারিবারিক সমস্যার মধ্যে দিয়েও পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়মের কাঠামো কি এমন সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত? এমন কোনো নীতিমালা কি আছে, যেখানে মানবিক পরিস্থিতিকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া যায়?
এইচএসসি পরীক্ষার মতো জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোরীর জন্য দিনটি ছিল দুঃস্বপ্নের। তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকেন। জীবনের সবচেয়ে আপন মানুষটিকে বাঁচাতে সে ছুটে যায় হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবার তদারকি শেষে, দৌড়ে ফিরে আসে পরীক্ষাকেন্দ্রে — কিন্তু ততক্ষণে প্রশ্নপত্র বিতরণ হয়ে গেছে, এবং হলের শিক্ষক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন।
এই ঘটনাটি ঘটে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি কলেজে। মেয়েটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন মেধাবী ছাত্রী। তার সহপাঠীদের মতে, সে সবসময় দুঃসময়েও হাসিমুখে লড়ে গিয়েছে। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা ও পরীক্ষার দিন এই অমানবিক আচরণ তার মনোবলকে চূর্ণ করে দেয়। জানা যায়, সকালেই তার মা হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। পরিবারের আর কেউ ছিল না, তাই মেয়েটি নিজেই মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। সময় মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালেও কিছু মিনিট দেরি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে প্রবেশ করতে দেয়নি।