You have reached your daily news limit

Please log in to continue


কঠিনেরে যিনি ভালোবেসেছেন: নব্বইয়ের স্যার

নব্বই বছরে পা দেওয়া একজন তরুণ পরিব্রাজকের জন্মদিন অতিক্রম করলাম আমরা। সুদীর্ঘ জীবনে তেমন কোনো ব্যাধি এসে তাঁকে জরাগ্রস্ত করেনি, শারীরিক কোনো কারণ এবং মানসিক পীড়া ভারাক্রান্ত করেনি, কখনোই বয়সের ভার এসে চিন্তার তারুণ্যকে অবসাদগ্রস্ত করেনি। বাঙালি অসুস্থতাপরায়ণ, ছোট-বড় অসুখ এসে একবার শয্যাশায়ী করতে পারলে নরম বিছানার মোহ তাকে পেয়ে বসতে পারে। বসেছেও। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ জরা, বয়সকে উপেক্ষা করে ভোরের নরম রোদের মতোই জীবনকে আলিঙ্গন করে চলেছেন, প্রতিদিন নতুন চিন্তা ও সাধারণ ঘটনাকে দার্শনিকতায় রূপ দিচ্ছেন। যেমন, আমাদের স্যার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। শিক্ষকতার মতো সার্বক্ষণিক কাজ করার পরও তিনি জড়িয়ে আছেন নানা সাংগঠনিক কাজে। সবকিছুই আবার নিয়মিত—পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব, কত ধরনের প্রগতিশীল আন্দোলনের কাজ, যা শুধু উপদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রয়োজনে পথে নিয়ে দাঁড়াতে হয়।

তিনি জীবনের প্রায় পুরোটাই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রেখেছেন, যার কেন্দ্রভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একদা জ্ঞানচর্চার এই কেন্দ্র থেকে জাতির মুক্তির, সম্ভাবনার এবং ঐক্যের সুযোগ সৃষ্টি হতো। ছাত্র-শিক্ষকের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্কের একটা বড় অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে, যার পরিণতিতে একটা নতুন শোষণমুক্ত দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা। সেই স্বপ্ন একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রূপ পেয়েছিল স্বাধীনতায়। হাজার বছরের অবরুদ্ধ স্বপ্নের একটা বাস্তবায়ন ঘটেছিল।

নিভৃতচারী একেবারেই কর্মসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী যেসব প্রগতিশীল শিক্ষাবিদ আছেন, সিরাজুল স্যার তাঁদেরও অন্যতম। তিনি লিখছেন অবিরাম—পত্রিকার কলাম, গবেষণালব্ধ অত্যন্ত চিন্তাশীল লেখা এবং যার মধ্যে রাষ্ট্র নিয়ে তাঁর দীর্ঘ ভাবনা আমাদের আলোকিত করছে। আবার এই রাষ্ট্র নির্মাণে যেকোনো দেশেই যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করে, সেই মধ্যবিত্তও তাঁর রচনার একটা বড় অধ্যায়।

দেশ বিভাগের পর রাষ্ট্র একটা নতুন চেহারা নেয়। কিন্তু সেখানে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান প্রেরণার স্থান। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনেরই চেহারাটা পাল্টে যায়। পাঠ্য-অপাঠ্য বই যেখানে নানা ভাবনার জন্ম দিয়ে থাকে, সেসবকে পরিহার করে রাজনীতির স্থূল বিষয়গুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে যেসব শিক্ষকের উদ্যোগ থেমে থাকেনি, তিনি তাঁদের একজন। প্রগতিশীল শিক্ষকদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় ভূমিকাও নিয়েছেন তিনি। যখন তিনি তরুণ শিক্ষক, তখন থেকেই দরিদ্র মেধাবী, বামচিন্তক, স্বপ্ন দেখা ছাত্রদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করার কাজটিও করেছেন। শিক্ষকতার মতো গুরুগম্ভীর কাজটিকে করে তুলেছেন অত্যন্ত সহজিয়া পাঠ ভঙ্গিমার বিষয়।

স্বাধীনতার পর যে শিল্প মাধ্যমটি এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছিল, তাতেও তিনি মনোযোগী হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী নাট্যকার নাজমা জেসমিন চৌধুরীর শিশুদের একটি নাট্যদল ছিল। সেখানে তিনি যুক্ত ছিলেন কর্মী হিসেবে এবং আমাদের কাছে ছিলেন অফুরন্ত প্রেরণা।

যে প্রেরণা আজও সচল। অবশ্যই আমার মনে হয় বাঙালির শিক্ষাচিন্তায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও সিরাজ স্যার শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কারকে এক করে দেখেছিলেন।

আমরা যারা পঞ্চাশের দশকের ছাত্র, তখনো শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্ব নাগরিককে দেখতাম—সেই পাকিস্তান আমলে যখন শিক্ষকেরা দরিদ্র কিন্তু কী ঋজু ভঙ্গিমায় সত্য কথাটি বলে যাচ্ছেন! শ্রেণিকক্ষে জ্ঞানের আধার এবং সমাজে ভ্রান্ত প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে ভীতির বিষয় তাঁরা। আমাদের স্যারকে দেখেই প্রথমে সেটা মনে হয়েছিল। যে ইংরেজি বিভাগের তিনি শিক্ষক সেখানে উচ্চবিত্ত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, সেই সঙ্গে শিক্ষকদের একধরনের অভিজাত আচরণের মধ্যে তাঁর একেবারেই সাধারণ জীবনযাপন ও স্পষ্ট উচ্চারণ আমাদের সব বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দিত। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে আহমদ শরীফের মতো আপসহীন পণ্ডিতের ভূমিকা আছে, আব্দুর রাজ্জাক আছেন, আবু মাহমুদ গুন্ডাদের হাতে আহত হচ্ছেন—স্পষ্ট ভূমিকার জন্য আরও আছেন অনেকেই। ইংরেজি বিভাগেই আছেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা—যেমন মেধাবী তেমনি অতি সাধারণ তাঁর জীবনযাপন। বড় মাপের দেশপ্রেমিক তিনি। ২৫ মার্চের রাতে জগন্নাথ হলে যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ হয়, তখন গুরুতরভাবে আহত হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। দেশ বিভাগের পর অনেক হিন্দু শিক্ষকই দেশত্যাগ করেন। তাঁকে এ সম্পর্কে বলা হলে তিনি অবলীলায় জবাব দিতেন, ‘নিজের দ্যাশ ছাইড়া কই যামু?’
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশা করা গিয়েছিল রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু তা হয়নি। বরং শিক্ষাঙ্গনগুলো হয়ে গেল দলীয় রাজনীতির এক চারণ ক্ষেত্র। সেখানে সংঘাত, দলাদলি, নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব যেন নিত্যদিনের ঘটনা। শিক্ষকেরাও বিভক্ত হয়ে গেলেন। এই বিভক্ত হওয়াই এক সর্বনাশের সূচনা। কালে কালে তাঁরা এক-একটা বড় শক্তি হিসেবে দেখা দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক—সব ওই মতাদর্শের লোক—শিক্ষাকে ধর্মান্ধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত করছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন