
‘মব সন্ত্রাস’ বন্ধ হচ্ছে না কেন?
জুলাই অভ্যুত্থানের পর `মব' আমজনতার প্রচলিত শব্দে পরিণত হয়- পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে। আর এই পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল-এটা দুনিয়াব্যাপী স্বীকৃত। মবের শিকার উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগের সরকারের সুবিধাভোগী ও তাদের সহযোগীরা। সাধারণ মানুষ এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণও মব সন্ত্রাস থেকে রক্ষা পায়নি। প্রাণ দিতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায়ও। মাটিচাপা পড়ে গেছে গাজি টায়ারে আগুন লাগিয়ে প্রায় ১৭০ জনকে পুড়িয়ে মারার নৃশংস ঘটনাও। এর ব্যাপকতার কারণে অপ্রচলিত শব্দ মব এখন আমজনতার পরিচিত শব্দ হিসেবে গণ্য হয়েছে।
প্রতিটি মবকাণ্ডের পর সমালোচনা হয়, আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর পক্ষেও কিছু ব্যক্তি যুক্তি তুলে ধরেন। ব্যাপক আলোচিত মবকাণ্ডের পর সরকার থেকে বলা হয়, মব গ্রহণযোগ্য নয়,বরদাস্ত করা হবে না,তদন্ত মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বাস্তবতা হচ্ছে, মব নায়কদের কেউ ধরা খেয়ে শাস্তি ভোগ করেছে এমন খবর কখনো প্রকাশ হয়নি। প্রায় প্রতিটি মব সন্ত্রাসের অসংখ্য ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, কিন্তু ধরা খায় না মব কারিগররা। কিংবা তাদের শাস্তিও হয় না। মব যন্ত্রণার তীব্রতার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২৫ এর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৮৩জনের প্রাণহানির সংবাদ থেকে ( কালের কণ্ঠ ২৪জুন ২০২৫)
এই মবকে উস্কে দেন যারা- তাদের যুক্তি হচ্ছে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের বিচার হয় না বলে জনতার ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তাই তারা মব এর আশ্রয় নেয়। যুক্তি পাল্টা যুক্তি আসতেই পারে এ বিষয়ে। সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়- স্বৈরাচারের বিচারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দিনরাত কাজ চলছে বিচার সম্পন্ন করতে। কিন্তু যে কোনো বিচার কাজেই কিছু আইনকানুন নিয়ম-বিধির প্রয়োজন হয়। বেসামরিক সরকার চলাকালে জেলখানার ভিতরে আদালত বসিয়ে ২৪ ঘণ্টার ভিতর কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা যায় না। এই সত্যটি অন্তত প্রতিটি নাগরিকই বুঝেন। বিশেষ করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতারা যেমন বুঝেন তেমনি অনেক রাজনৈতিক দলের অভিজ্ঞতাও এ বিষয়ে কম নয়।
তারপরও ২৩জুন একজন সিনিয়র সিটিজেন ও মুক্তিযোদ্ধা কে এম নূরুল হুদা ন্যক্কারজনক মব ভায়োলেন্সের শিকার হলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৮ সালে রাতের ভোট পরিচালনা করেছেন। কথা মিথ্যা নয়। সেই অভিযোগের বিচারও চাইতে পারে যে কোনো নাগরিক এবং সংক্ষুব্ধ কোনো রাজনৈতিক দলও।
সেই সুবাদেই ২৩ জুন দুপুরে বিএনপি সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এটা তাদের অধিকার। এবং বিএনপির মতো আরও অনেক দলেরই চাওয়াও বটে। বিএনপির মতো তারাও আদালতে যেতে পারেন। আইনের আওতায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা ও আদালতে সোপর্দ করা হবে এটাই দুনিয়ার রীতি ও আইন। কিন্তু হুদা সাহেবকে যারা ধরে পুলিশে দিলেন তারা কারা। এবং তারা যে শাস্তি দিলেন তা কোন আদালতের রায়ের ভিত্তিতে?
বিষয়টি যে কতটা ভয়াবহ এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি তা বোঝা যায় ঘটনা পরবর্তী প্রতিক্রিয়া দেখে। প্রধান উপদেষ্টাকেও নাড়া দিয়েছে এই নৃশংসতা। তাঁর কার্যালয় থেকে স্পষ্টভাবে কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে এই মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় বছরকাল আগে অভ্যুত্থান হয়েছে, তখন বলা হতো উত্তেজিত জনতা কাজটি করেছে।
বছরকাল পরও কি এমন যুক্তি দেওয়ার সুযোগ আছে? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, মব হতে দেওয়া যাবে না। সর্বশেষ তিনি এই ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়ে যে অভিযোগ আছে সেদিকেও কথা বলেছেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে পুলিশের পোশাক পরা একজন ব্যক্তিও সেই মব কাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন। খবরে এসেছে পুলিশই তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মব জাস্টিস