হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী: অবসান কবে

www.ajkerpatrika.com মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ১৩:৫০

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষমতাও কম নয়। তারাও পাল্টা আঘাত হানছে। ওদিকে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ তো চলছেই। আবার অদৃষ্টের কী খেলা! এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ২৯৪ জন নিরপরাধ আদম সন্তান কী নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ করল! মৃত্যু যেন ওত পেতে রয়েছে সব জায়গায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বড় ধরনের দুর্ভাগ্য। কিন্তু মানুষের তৈরি হত্যাকাণ্ডকে মেনে নেওয়া কষ্টকর। দলে দলে, দেশে দেশে, বর্ণে বর্ণে যে ঘৃণা তৈরি হয়, তাতে চিরস্থায়ী একটা প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম হয়, যা জন্ম-জন্মান্তরেও কখনো প্রবাহিত হয়ে চলে। বড়ই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক।


রাজনীতি একদা শান্তিপূর্ণ ছিল। অবশ্য নিকট অতীত থেকে যদি দেখি, অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা থেকে, তা যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিল, তার প্রবাহ কি পরবর্তীকালে থেমেছে? ব্যাপকভাবে হয়তো হয়নি। কিন্তু সুযোগ-সুবিধামতো রাজনীতির সহিংস ক্যাডাররা তার ধারাকে রক্ষা করে চলেছে, খুনোখুনি অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু ’৪৬-এর বিষয়টি ছিল ধর্মভিত্তিক, তাই তখন থেকেই রাজনীতিতে ধর্ম একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। যেহেতু এতে কাজও হয়, সে জন্য দেখা গেছে অনেক ত্যাগী রাজনীতিককেও এই ওষুধটা গিলে ফেলতে। ফলাফল দাঁড়ায় অত্যন্ত স্থূল উপায়ে—সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।


দেখা গেল বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী ছুটছে রাজনীতিতে জায়গা পাওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে ছুটছে টাকা, ধর্ম ও দুর্নীতি। এই তিনে সয়লাব হয়ে গেল রাজনীতির ময়দান।


ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার অবিনাশী এই নতুন ধারার রাজনীতিতে যাঁরা ত্যাগী, দেশকে নিয়ে যাঁদের স্বপ্ন আছে, তাঁদের কোণঠাসা করে তরতর করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছাকাছি চলে গেছেন অন্যরা। কিন্তু তাতে কী লাভ হলো? কাদের লাভ হলো? অবশ্যই লাভ হয়েছে কিছু দুষ্ট-নষ্ট রাজনীতিক ও ধর্মব্যবসায়ীর। কিন্তু রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার তো অবসান হচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তার মূল্যও কি কম? যে পরিমাণ টাকা লগ্নি হয়ে গেছে, তা উঠে আসতে আবারও যে অনেক দিন সময় লাগবে। আর সাধারণ মানুষ বেশ কিছু আগন্তুক-রাজনীতিককেও দেখতে পায়, যাঁরা খুব বেশি দিন তাদের স্মৃতিতে থাকে না।



গত ১০ মাসে যে পরিমাণ অনিশ্চয়তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ দিনযাপন করছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়। এর মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি কি আমরা দেখতে পেয়েছি? প্রতিদিনই কোনো না কোনো আন্দোলন বা দাবি আদায়ের লড়াই চলছে রাজপথে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব কি মীমাংসা হওয়ার কথা? কেন এই দায়িত্ব নিতে গেল তারা? সংস্কার শব্দটাই এত ক্লিশে হয়ে গেছে যে এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। প্রতিদিন ইউটিউবাররা এইসব শব্দকে এবং প্রক্রিয়াকে তুলাধোনা করে ছাড়ছে।


কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ের যে প্রভূত ক্ষতি হয়ে গেল, সে সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। এক নম্বরেই আসে শিক্ষা। এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি এতই গুরুতর যে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে বসালেও তাদের মনোযোগের জায়গাটি কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? শিক্ষার যে সংস্কৃতিটা ছিল, যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, পরীক্ষা, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি—এসবে তো ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। শিক্ষা বিভাগে সারা জীবন চাকরি করেছেন, তেমন আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘বলুন তো, শিক্ষার বিষয়ে সরকার, আমলা, শিক্ষক, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কারও কি সংঘবদ্ধ কোনো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ কি কখনো দেখেছেন?’ তিনি স্মৃতি হাতড়ে কোনো সুখস্মৃতি মনে করতে পারলেন না। ঠিকাদারেরা সেতু বানাতে দুর্নীতি করে কিন্তু তার চেয়েও স্কুলশিক্ষকদের প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোচিং সেন্টারের ভূমিকা কি কম বিধ্বংসী?


শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে দুর্নীতি নিয়ে এই ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের নবীন ক্যাডারদের একটি কথাও বলতে শুনিনি। শিক্ষার অভাবে যা গড়ে উঠবার তা গড়ে উঠেছে খুব ভালোভাবেই, যেমন প্রতিশোধের সংস্কৃতি। রাজনীতিতে তো বটেই কিন্তু জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতিশোধস্পৃহা একটি জায়গা করে নিয়েছে। কোনো পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ, উদারভাব এখানে কাজ করছে না। শুধু একটাই কথা—সুযোগ পেয়েছি দেখে নেব! এই দেখে নেওয়ার বিষয়টি এত দূরে গড়িয়েছে যে অতি আপনজনের কাছ থেকেও আমরা উদারতা, মহানুভবতা আশা করি না।
এই প্রবণতা থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক দলও বাইরে নয়। সুদীর্ঘ দিনের বিপুল অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘উদীচী’। সত্যেন সেনের মতো একজন মহৎ ব্যক্তির চিন্তায় এবং তাঁর হাত


ধরেই নানা সংকটে এই সংগঠনটিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দেখেছি। যশোরে বোমা হামলায় দেখেছি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও