 
                    
                    বাগ্যুদ্ধ থেকে বোঝাপড়া: যেখানে শ্রেণিস্বার্থই চূড়ান্ত সত্য
গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রযুক্তি ধনকুবের ইলন মাস্ক এর মধ্যে প্রকাশ্য বাগ্যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এই সংঘাত কেবল দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মতবিরোধে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এতে ফুটে উঠেছে আধুনিক গণতন্ত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন কর্পোরেট শক্তি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার এক জটিল ও উদ্বেগজনক সংমিশ্রণ।
মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের অবস্থান যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে, তেমনি মাস্কের মালিকানাধীন টেসলা, স্পেসএক্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X (সাবেক টুইটার) তাকে দিয়েছে বিস্তৃত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব। এমন দুই ব্যক্তি যখন মুখোমুখি হন, তখন সেটি কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের বিবাদ নয়—বরং রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থা ও জনমতের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে।
এই বিরোধের সূচনা ঘটে যখন মাস্ক হোয়াইট হাউসের একটি পরামর্শদাতা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন এবং ট্রাম্পের ট্যাক্স পরিকল্পনাকে “অসাধারণ রকমের অযোগ্য” বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্পও পাল্টা জবাবে মাস্ককে লক্ষ্য করে তার Truth Social প্ল্যাটফর্মে একাধিক বার্তা ছুড়ে দেন। যদিও ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাস্ক ট্রাম্পকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন বলে গণমাধ্যমে প্রচার রয়েছে, তবে সেই সম্পর্কের নাটকীয় অবনমনকে অনেকেই আমেরিকার রাজনীতির “নতুন বাস্তবতা” হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

মিডিয়ায় এই দ্বন্দ্বকে “বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাইক্রোফোন যুদ্ধ” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে—যেখানে দুই পক্ষই তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্প যেখানে তার অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগে Truth Social ব্যবহার করছেন, সেখানে মাস্কের মালিকানাধীন X পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক প্রচার ও জনমত প্রভাবিত করার এক বিশাল পরিসরে।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন, তিনি মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সরকারি বরাদ্দ ও চুক্তি বাতিল করে দেবেন। এই হুমকির প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক হুঁশিয়ারি দেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত তার গুরুত্বপূর্ণ যান ‘ড্রাগন’ সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। যদিও পরে তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন, তবে এতেই বোঝা যায় যে, কর্পোরেট ও রাজনৈতিক শক্তির এই সংঘাত কোনো একক দেশের সীমায় সীমাবদ্ধ নয়—বরং এর অভিঘাত বিশ্বব্যবস্থায়ও অনুরণন তোলে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই লড়াই কেবল রাজনৈতিক কিংবা কর্পোরেট বিবাদ নয়—এটি বর্তমান সময়ের একটি গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। যখন একজন রাজনীতিবিদ তার ব্যক্তিগত বিরোধ মেটাতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করতে চান, তখন সেটা শুধু অনৈতিক নয়, বরং গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। একইভাবে, যখন একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য তার কর্পোরেট ক্ষমতা ব্যবহার করেন, তখন তা রাষ্ট্র ও কর্পোরেট জগতের সীমারেখা মুছে ফেলে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রভাবশালী ব্যক্তি
- বাগযুদ্ধ
 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg) 
                    
                