ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ও মহাযুদ্ধের আশঙ্কা

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৫, ১৪:৪৮

১৩ জুন, মধ্যরাতে ইসরায়েল যখন ২০০টি যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ইরানের ভেতরকার একাধিক স্থাপনায় আঘাত হানে, তখন এই আক্রমণের পেছনে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আর কৌশলগত পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট ছিল। এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, বরং ইসরায়েলের ‘শেষ আঘাত’ হিসেবে বিবেচিত।


ইসরায়েলের হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। বিশেষ করে নাটাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা গত কয়েক বছরে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ইসরায়েল মনে করে, যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো সুরক্ষিত থাকবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, ‘এখন না হলে কখনোই নয়।’


এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল কেবল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো নয়, বরং তাদের সামরিক নেতৃত্ব, বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে চায়। এককথায় বলা যায়, তারা ইরানকে সামরিকভাবে ‘অক্ষম’ করে দিতে চায়। এই যুদ্ধ কেবল অস্ত্র নির্মূলকরণের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে ইরান যেন আর হুমকি হয়ে উঠতে না পারে, তার নিশ্চয়তা চায়।


ইসরায়েলের জন্য আসল বাধা ছিল হিজবুল্লাহ। লেবাননের এই শক্তিশালী মিলিশিয়া গোষ্ঠী অনেকটাই ইরানের প্রজেক্টাইল প্রতিরক্ষা। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের অস্ত্রাগারকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। গোপনে মোসাদের সাজানো বিস্ফোরণে কমান্ডারদের মৃত্যু, সিগন্যাল ডিভাইসে ফাঁদ—সব মিলিয়ে এক মাসে হিজবুল্লাহ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হিজবুল্লাহ দুর্বল হওয়ার পরই ইসরায়েল ইরানের দিকে নজর ঘোরায়। তারা প্রথমে হামাসের নেতাকে তেহরানে হত্যা করে, এরপর ইরানের সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এসব হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধানসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন। একাধিক পারমাণবিক বিজ্ঞানীও এই অভিযানে প্রাণ হারান।



ইরান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল ছোড়ে। কিন্তু আগের মতো এবারও ইসরায়েল, আমেরিকা, ইউরোপ এবং আরব প্রতিবেশীদের যৌথ প্রতিরক্ষাবলয় তা প্রতিহত করে। এই হামলা আরও একটি কাজ করে—ইসরায়েলকে পাল্টা আক্রমণের বৈধতা দেয়।


উল্লেখ্য, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার মূলে রয়েছে বেশ কিছু জটিল কারণ। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ধর্ম ও আদর্শগত বিরোধ। ইসরায়েল নিজেকে একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে দেখে, যেখানে ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে তার শিয়া বিপ্লবী আদর্শকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চায়। ইরানের সংবিধানে ইসরায়েলকে একটি অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইসরায়েলও ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে।


ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাও এই বিরোধের একটি মূল কারণ। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তার জন্য অস্তিত্বের সংকট হিসেবে দেখে। ইসরায়েলের আশঙ্কা, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করলে তা আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করবে এবং তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে। ইরান অবশ্য সব সময়ই তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে।


উভয় দেশই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন করে, যা ইসরায়েলের জন্য সরাসরি হুমকি। অন্যদিকে, ইসরায়েলও ইরানের প্রভাব কমাতে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।


এই বিরোধে ঘি ঢালছে ফিলিস্তিন ইস্যু। ইরান ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সোচ্চার সমর্থক এবং ইসরায়েলের ফিলিস্তিন নীতির কঠোর সমালোচক। এটিও তাদের মধ্যে উত্তেজনার একটি বড় কারণ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও