লন্ডন বৈঠক ও নির্বাচনী সম্ভাবনা

www.ajkerpatrika.com জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫, ০৯:৪৬

লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারে ১৩ জুন স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আপাতত অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকের আলোয় অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, দেশে এখন নির্বাচনের সুবাতাস বইবে। বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেমন ছাড় দিয়েছেন, তেমনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ছাড় দিয়েছেন। ডিসেম্বর নাকি এপ্রিলে নির্বাচন হবে, তা নিয়েই বেধেছিল বিতর্ক। ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি ছিল অনড়, এপ্রিলের ব্যাপারে ছিল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা। অবশেষে লন্ডন বৈঠকে একজন এপ্রিল থেকে নির্বাচনকে ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে এগিয়ে আনার কথা বলেছেন, অন্যজন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। ফলে ফেব্রুয়ারিতেই আগামী নির্বাচন হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।


কিন্তু সত্যিই কি এতটা আশাবাদী হওয়া চলে?


কোনো সন্দেহ নেই, অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে সবকিছু লেজেগোবরে করে তুলেছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো দল ক্ষমতায় না যাওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মব-সন্ত্রাস, নতুন গজিয়ে ওঠা দলগুলোর টাকাপয়সা-সংক্রান্ত মুখরোচক গল্প বুঝিয়ে দেয়, নতুন বন্দোবস্তের যে আলামত দেখা যাচ্ছে, তা মোটেই স্বস্তিদায়ক কিছু নয়। যাঁদের মুখে নতুন দিনের কথা শোনা যাচ্ছে, তাঁদের আচরণে মনে হয় না যে সেই নতুন দিনগুলো আলোকিত হবে। বরং এদেরই কারও কারও মুখে কোনো কোনো বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে হেয় করার আলামত দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা এমন কিছু সন্দেহের সৃষ্টি করে মনে, যা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও এই দেশটির ইতিহাস নিয়ে তাঁদের ধারণা কী—এ প্রশ্নের জন্ম দেয়।


এই অবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল ম্যান্ডেটের ওপর নির্ভর করে সংস্কারসহ সরকারের করণীয় কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারবে। আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলে ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত দলই পারে অরাজকতার অবসানে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু আবারও জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে, সত্যিই কি নির্বাচন হচ্ছে এই ফেব্রুয়ারিতে? এ রকম কোনো স্পষ্ট ঘোষণা কি দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস?



বিষয়টি অস্পষ্ট, অথচ বিএনপি নাকি ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের স্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছে। তাহলে তো কথাই নেই। এবার মনোনয়নের জন্য দলের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যাবে। শুধু বিএনপি কেন, সব রাজনৈতিক দলই তাদের দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে দেবে। শুরু হবে মিটিং-মিছিল, দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ার খেলা। চাঙা হয়ে উঠবে রাজনীতির ময়দান। এই দৃশ্যটি বাস্তবে দেখার আগপর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হচ্ছে, এ রকম বিশ্বাস করা কঠিন।


কেন কঠিন?


কারণ হলো, ইউনূস-তারেক আলোচনায় তিনটি ‘কিন্তু’ রয়েছে—বিচার, সংস্কার আর প্রস্তুতি। এই তিনটি ব্যাপারে অগ্রগতি হলেই কেবল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। যদি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারে আশাপ্রদ অগ্রগতি না হয়? যদি সংস্কারপ্রক্রিয়ায় অগ্রগতি মন্থর হয়? যদি নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রত্যাশামতো না হয়—তাহলে? এর যেকোনো একটি কারণকে সামনে রেখেই তো ঘোষণা করা হতে পারে—প্রত্যাশামতো অবস্থার উন্নতি হয়নি, সুতরাং পিছিয়ে যাবে নির্বাচন। জনমনে আরও কত প্রশ্নই তো ঘুরপাক খাচ্ছে। তারও কিছুটা এখানে আলোচনা করা যেতে পারে।


কোনো সন্দেহ নেই, ইউনূস সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা নিয়ে সমর্থন দিয়েছিল জনগণ, সে প্রত্যাশা অনেকাংশেই সফলতার মুখ দেখেনি। অনেকেই এই সরকারের কার্যক্রমে বিরক্তও হয়েছেন। খোদ প্রধান উপদেষ্টার কথাবার্তায়ও কখনো কখনো নিরাশ হয়েছে জনগণ। উপদেষ্টারা কী কাজ করছেন, কতটা সাফল্যের সঙ্গে তাঁরা তাঁদের কাজ করে যাচ্ছেন, তা নিয়েও রয়েছে অনেক সমালোচনা। ছাত্র উপদেষ্টাদের ব্যাপারেও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তৌহিদি জনতা নামে একশ্রেণির লোক ধর্মকে পুঁজি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তার বিরুদ্ধেও স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি এই সরকার। ফলে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রত্যাশা খুব দ্রুত হতাশায় পরিণত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারলে সংকট বাড়বে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত