ইউনূস-তারেকের ‘সন্তুষ্টি’তে স্বস্তি টেকসই হবে কি

প্রথম আলো কামাল আহমেদ প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২৫, ১৪:১৪

রাজনৈতিক বিতর্ক যে সাম্প্রতিক সময়ে নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও গতিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাধাগ্রস্ত করছিল, তা সবার জন্যই একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে দীর্ঘ নির্বাসনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাতের উদ্যোগে তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার কৌতূহল ও আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যেও প্রকাশ পায় যে উভয় দিক থেকেই এ বৈঠকের তাগিদ অনুভূত হয়েছে। বৈঠকের পর উভয় তরফেই আলোচনার ফলাফলে যে ‘সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সবার জন্যই স্বস্তিদায়ক।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বস্তি স্থায়ী হবে কি না? সংকটের গভীরতা বা উভয় পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কতটা প্রকট ছিল, তার ওপরেও কিন্তু স্বস্তির স্থায়িত্ব কিছুটা নির্ভর করে। সাধারণভাবে যে ধারণা তৈরি হচ্ছিল, তা হলো বিএনপির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা বা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অবশ্য এ সন্দেহ দলটির নেতৃত্বের মধ্যে যতটা না দেখা যাচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রকট ছিল মাঠ দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া ধৈর্যহারা লোকজনের এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের প্রবক্তাদের কথাবার্তায়। অন্তব৴র্তী সরকারের সমর্থকদেরও একটি অংশ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়, ইউনূস সরকারকে ৫ থেকে ১০ বছর সুযোগ দেওয়ার পক্ষে যে প্রচার শুরু করে, তা–ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


গতকাল আলোচনার পর উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো থেকে জেনেছি যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা আগেও যেমন নমনীয় অবস্থানের কথা বলেছিলেন, এ বৈঠকেও তেমনই নমনীয় ছিলেন। শুরুতেই তাই সিদ্ধান্ত হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে। রমজান যেহেতু মধ্য ফেব্রুয়ারির পরপরই শুরু, সেহেতু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো আপত্তি নেই। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অন্তত প্রতীকী সাফল্যের প্রশ্নটি প্রধান উপদেষ্টার ন্যূনতম লক্ষ্য। এত বড় একটা গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশের দায়িত্ব নিয়ে এটুকু স্মারক তৈরি করতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক।



বিপরীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যে ন্যূনতম সংস্কার এবং বিচারের জন্য সময়ের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছেন, তাতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তববাদিতার প্রতিফলন ঘটেছে। এগুলো সম্পন্ন করার জন্য কোনোভাবেই বাড়তি সময় দেওয়া যাবে না, এমন কোনো অনমনীয় অবস্থান তিনি নেননি। নির্বাচনের সময় নিয়ে উভয় পক্ষের এ নমনীয়তা উভয় পক্ষের মধ্যে আপাতদৃষ্টে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বের অবসান ঘটিয়েছে। এরপর মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান দুজনে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট একান্তে আলোচনা করেছেন।


সব মিলিয়ে দেড় ঘণ্টার সাক্ষাতের ৯০ শতাংশের মতো সময় যে তাঁরা একান্তে আলোচনা করলেন, তাতে কী কী প্রসঙ্গে কথা হয়েছে, তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা চলতে পারে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বরাতে জানা যাচ্ছে, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের ভাবনা ও পরিকল্পনাগুলো তারেক রহমান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরেছেন। সাধারণভাবে রাজনীতিবিতৃষ্ণ ব্যাংকার–অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপির নেতার এসব ভাবনায় চমৎকৃত হয়েছেন বলেই শুনেছি। ভবিষ্যতে এগুলো বিশদে জানার কৌতূহল আমাদের আপাতত সংবরণ করতেই হচ্ছে।


বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ধরনের সন্দেহ–সংশয় দেখা যাচ্ছিল, তা যে কখনো কখনো শালীনতার সীমাও ছাড়িয়ে গেছে, তা বলাই বাহুল্য। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন; কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল কি না, সেই প্রশ্ন তাঁদের ভেবে দেখতে হবে। বড় দলে শৃঙ্খলা প্রতিপালন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ, সন্দেহ নেই। স্বৈরাচারমুক্ত দেশকে সবাই নতুন বাংলাদেশ বলতে চাইলে বড় দলকে এ চ্যালেঞ্জে সফল হতে হবে।


অর্থনৈতিক নীতি কিংবা পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক যেভাবে হয়েছে, তা–ও কিন্তু সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অন্যতম কারণ। অন্তর্বর্তী সরকার যে অর্থনীতিতে একটা স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পেরেছে এবং আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তির অব্যাহত অপপ্রচারের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, এগুলো ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকারের কাজ অনেকটাই সহজ করে দেবে। না হলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক সরকার গঠিত হলেই যে তা এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে সক্ষম হতো, এ কথা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও