সাম্প্রদায়িকতা ধর্মের নয়, রাজনীতির ব্যাপার

www.ajkerpatrika.com সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৫, ১২:০৬

মানুষ তো সমাজেই বাস করে এবং সমাজের দ্বারা যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ওদিকে ধর্ম বলতে যদি সদাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, কল্যাণকামিতা, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি বোঝায়, তাহলে সব মানুষেরই ধর্ম থাকতে পারে, এমনকি নাস্তিকেরও। কিন্তু ধর্মের আবার আনুষ্ঠানিক দিকও রয়েছে; অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচার-আচরণের ব্যাপার থাকে না, সমাজের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের ভিত্তিতে সমাজে বিভাজনও দেখা দেয়, ধর্ম প্রবেশ করে রাজনীতিতে। রাজনীতির মূল বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতা, ক্ষমতার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়। আর তখন উদ্ভব ঘটে সাম্প্রদায়িকতার। সাম্প্রদায়িকতা ধর্মের নয়, রাজনীতির ব্যাপার।


সাম্প্রদায়িকতায় ধর্ম চলে যায় রাজনীতির অধীনে, তখন হানাহানি অনিবার্য হয়ে পড়ে। আমাদের এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অনাচার আমরা অতীতে দেখেছি, এখনো দেখছি। কেবল উপমহাদেশে কেন, বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই এখন সাম্প্রদায়িকতার তাণ্ডব চলছে। ক্রুসেড ও জিহাদের ঘটনা অতীতকালের ব্যাপার নয়, একালেও বিদ্যমান। ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে প্যালেস্টাইনবাসীকে উচ্ছেদ করে ধর্মরাজ্য কায়েম করা হয়েছে।

আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও খনিসমৃদ্ধ এলাকায় দখলদারত্ব প্রতিষ্ঠার যে ভয়াবহ উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সেসব দেশের বামপন্থীদের রুখে দাঁড়ানোর কথা ছিল; কিন্তু সেখানে বামপন্থীদের নির্মূল করেছে স্থানীয় শাসকেরা, নিজেদের স্বৈরশাসনকে পাকাপোক্ত করার প্রয়োজনে। মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো উঠবেই, উঠেছে ধর্মীয় জঙ্গিদের কাছ থেকে, যাদের একসময় উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল বামপন্থীদের ধ্বংস করার প্রয়োজনে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই পরিণত হয়েছে ধর্মীয় জিহাদে। ওদিকে আমেরিকার সক্রিয় উসকানিতে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানেও সেই ব্যাধি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।



রাজনীতিতে তাই ধর্ম এসে যায়। পুঁজিবাদীরা ও সাম্রাজ্যবাদীরাই নিয়ে আসে; ধর্মের স্বার্থে নয়, নিজেদের বস্তুগত স্বার্থে। নিষ্পেষিত মানুষকে শান্ত রাখার উদ্দেশ্যেও তারা ধর্মকে ব্যবহার করে। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে অনুন্নত যে এলাকা, যেখানে দরিদ্র শ্রমজীবীদের বসবাস, সেখানে গেলে দেখা যায় সবকিছুই নোংরা ও বিষণ্ন, কেবল দুটি ভবন ছাড়া, একটি হচ্ছে উপাসনালয়, অপরটি পানশালা। দুটিতেই মাদকের সরবরাহ চলে, একটি ধর্মীয় তৃপ্তির, অপরটিতে নগদ দামে কেনা উত্তেজনার। সেই সঙ্গে পুঁজিবাদ যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে, তার থেকে সাময়িক মুক্তিরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। উপাসনার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের যে অনুভূতি তৈরি হয়, তা ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা তো অবশ্যই, সেই সঙ্গে ক্ষমতাহীনতা ও হতাশার ভাব কাটাতেও সাহায্য করে। শাসনকর্তারা এভাবেই ধর্মকে ব্যবহার করাকে অত্যন্ত সুবিধাজনক হিসেবে দেখে।


কয়েক বছর আগে লন্ডনের রাস্তায় দুজন মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলে কথিত আফ্রিকান যুবক প্রকাশ্য দিবালোকে এক তরুণ ব্রিটিশ সৈন্যকে হত্যা করেছিল। এ কাজের সময় তারা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারে যে তারা মুসলমান। কেন এ কাজ করেছিল, দুজনের একজন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে। ব্যাখ্যাটা এই যে ব্রিটিশ সৈন্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের হত্যা করছে। কাজটার জন্য মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীরাই দায়ী, কিন্তু তাদের যেহেতু হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই ওই সৈন্যকে হত্যা করে তারা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছে যে মুসলমানদের ওপর হত্যাকাণ্ড না থামালে এ ধরনের প্রতিশোধগ্রহণ চলতে থাকবে।


ওই যুবক জন্মসূত্রে মুসলমান নয়, সে ধর্মান্তরিত। ধর্মান্তরিত হয়ে সে তার মনস্তাত্ত্বিক বিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়েছে এবং তার ভেতরে ক্ষমতার একটি বোধ জন্মেছে, যেটিকে সে প্রকাশ্যে প্রদর্শন করেছে। সে ভাবেনি যে সে কোনো পাপ করেছে, বরং তার ধারণা হয়েছে যে সে একজন পাপিকে শাস্তি দিয়ে পুণ্য সঞ্চয় করেছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পেছনে এ ধরনের মনোভাব কাজ করে থাকে।


সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিরোধের মূল কারণটি রাজনৈতিক, যার সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত থাকে। সে জন্যই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া আবশ্যক। রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের প্রতিরোধক বৈকি। কিন্তু সেটিই প্রধান কারণ নয়, যে জন্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রয়োজন। মূল কারণ হলো, রাষ্ট্র হচ্ছে নাগরিকের স্বার্থরক্ষার প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র সব নাগরিককে সমান চোখে দেখবে, এটিই প্রত্যাশিত। তেমন আচরণ অবশ্য কোনো রাষ্ট্রই করে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও